নিজস্ব প্রতিবেদক:
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, প্রবাসী বাংলাদেশীদের সম্মান ও মর্যাদার সাথে স্বরণ করা
দরকার, তারাও মুক্তিযোদ্ধা। তাঁরা যদি সেদিন প্রবাসে রাস্তায় না নামতো, আন্দোলন না করতো তাহলে বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে ফিরে আসতে পারতো না।
প্রবাসে আন্দোলন সংগ্রামে ও বিদেশীদের জনমত গঠনে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর অবদান চিরস্মরণীয়। অথচ সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী ও জেনারেল ওসমানীর জন্মদিন ও মৃত্যুদিবস পালন করেনা। সরকারের উচিত রাস্ট্রীয়ভাবে তাঁদের অবদানের জন্য জন্মদিন ও মৃত্যুদিন পালন করা ।
বাংলাদেশী প্রবাসীদের সাহায্য সহযোগিতা ও ৭১ মুক্তিযোদ্ধে তাদের ভূমিকা ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। দেশের জনগণকে স্বাধীনভাবে তাদের মত প্রকাশের সুযোগ দিতে আমাদের সরকারের ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট তুলে
নেওয়া উচিৎ।
এসময় তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ব্রিটিশ সরকার বিশেষ করে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের সহযোগিতা শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ
করেন।
তিনি বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক অচলাবস্থা এবং চলমান ভঙ্গুর গণতন্ত্রে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সম্পৃক্ততা বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে বলেন, আমাদের দেশের ব্যাপারে ইণ্ডিয়ার নাক গলানো উচিত নয়।
এবিষয়ে ভারতকে বিরত থাকতে বলার জন্য কমলওয়েলথের প্রধান হিসেবে ব্রিটিশ রাণীর প্রতি তিনি সবিনয় অনুরোধ জানান।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধর সময় ফিল্ড হাসপাতালের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা , ট্রাস্ট্রি ডা. জাফরুল্লঅহ চৌধুরী হুইল
চেয়ারে হাউস অব কমন্সে হল রুমের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার সাথে সাথে আবেগঘন আনন্দের সৃষ্টি হয়। উপস্থিত সবাই করতালির মাধ্যমে তাঁকে বরণ করে নেন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর সূবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে ‘ভয়েস ফর গ্লোবাল বাংলাদেশীজ’ এর উদ্যোগে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের টেরেস প্যাভেলিয়নে অনুষ্ঠিত প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের সম্মাননা ও স্বীকৃতি জানাতে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন।
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বৃটেনে অধ্যায়নকালে তরুণ বয়সেই মুক্তিযুদ্ধ সংগঠকের ভূমিকায় অবতীর্ণ এবং একসময় সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিতে বৃটেন ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বিলেত প্রবাসীদের অনন্য অবদানের কথা স্মরণ করেন।
২৯ মার্চ, মঙ্গলবার দুপুর একটায় শুরু হওয়া প্রবাসে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য রাখেন ব্রিটেনে বাংলাদেশি কমিউনিটির
অন্যতম অকৃত্রিম বন্ধু সাবেক অর্থমন্ত্রী, স্টিফেন টিমস এমপি।
স্টিফেন টিমস এমপি বলেন,‘ ভয়েস ফর গ্লোবাল বাংলাদেশীজ‘ প্রতিষ্ঠানটি যে উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বাসিন্দারা যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে তাকে স্বীকৃতি প্রদানের। এ উদ্যোগটি অত্যান্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং আমি মনে করি এ উদ্যোগ এখানকার বাংলাদেশদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকেবে। তিনি আরো বলেন, সে জটিল সময়ে তাঁরা কতবড় ভুমিকা পালন করেছেন সে ইতিহাস যুক্তরাজ্য এবং বাংলাদেশের উভয়ের জন্য
অত্যান্ত তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশের নির্মাণ এবং ভবিষ্যৎ পথ চলায় এধরনের স্বীকৃতি সবাইকে অনুপ্রানিত করবে। তিনি গণস্বাস্থের প্রতিষ্ঠাতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ সকল অতিথিদেরকে স্বাগত জানিয়ে বিশেষ করে একাত্তরের বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধের সংগঠনের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বর্তমান প্রজন্মের প্রতি তাদের ঐতিহাসিক দ্বায়িত্ব পালণ করায় ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
মধ্যাহ্নভোজের পর দুটোয় শুরু হওয়া অনুষ্ঠানের মূলপর্বে স্বাগত বক্তব্য রাখেন উদ্যোক্তা সংস্থা ‘ভয়েস ফর গ্লোবাল বাংলাদেশীজ‘র‘ প্রেসিডেন্ট ড. হাসনাত হোসাইন এমবিই।
‘ভয়েস ফর গ্লোবাল বাংলাদেশীজ‘র‘ এক্সিকিউটিভ মেম্বার শাহিদা হাসনাতের
সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রথমে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদানের মাধ্যমে শুরু হয় সম্মাননা প্রদান।
অনুষ্ঠানে লণ্ডন ছাড়াও গ্রেট বৃটেনের বিভিন্ন শহর থেকে অনেক প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠক উপস্থিত হয়েছিলেন। অনুষ্ঠানে যারা আসতে পারেননি এবং ইতোমধ্যে পরলোকগত মুক্তিযুদ্ধের বীর সংগঠকদের সম্মাননা ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট তাঁদের সন্তান ও পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত হয়ে তাদের পক্ষে তা গ্রহণ
করেন। সুদূর বার্মিংহাম স্মলহীথ পার্কে বাংলাদেশের পতাকা প্রথম উত্তোলনকারী মুক্তিযুদ্ধের বর্ষিয়ান সংগঠক মিছির আলী এবং সৈয়দ নাসিরসআহমদসহ দূর—দূরান্ত থেকে অনেকেই সশরীরে উপস্থিত হয়েছিলেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সছিলেন ব্রিটিশ—বাংলাদেশী কমিউনিটির বিভিন্ন সংগঠন ও সস্থার নেতৃবৃন্দ।
সমবেত কণ্ঠে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হওয়া
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশপার্লামেন্ট
সদস্য আপসানা বেগম, স্কটিস পার্লামেন্ট সদস্য ও শ্যাডো মিনিষ্টার ফয়সল চৌধুরী এমবিই,যুক্তরাজ্য আওয়মী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আফতাব আলী, মানবাধিকার নেত্রী তালেয়া রহমান, এবং সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তাসংস্থা ‘ভয়েস ফর গ্লোবাল
বাংলাদেশীজ‘র‘ ডিজি অহিদ আহমদ,পরিচালক আন্তর্জাতিক সম্পর্ক শামছুল আলম লিটন, সহসভাপতি ড. ওয়ালিদ তছরউদ্দিন, বিশিষ্ঠ সাংবাদিক ও বাংলাদেশ জার্নালিষ্ট সেসিয়েসনের প্রেসিডেন্ট মো: আবু তাহের চৌধুরী, সৈয়দ নাদির
আজিজ দারাজ, পরিচালক অর্থ মাহাতাব মিয়া, উনিয়ন কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি স্পিকার ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ, ভয়েস ফর গ্লোবাল বাংলাদেশীজ‘র আব্দুল আউয়াল প্রমূখ।
উল্লেখ্য, ভয়েস ফর গ্লোবাল বাংলাদেশীজ প্রায়
বছরব্যাপী বিভিন্নভাবে অনুসন্ধানের মাধ্যমে সম্মাননা ও স্বীকৃতি প্রদানের উদ্দেশ্যে ১০০ জন প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা ও সংগঠকের তালিকা তৈরী করে। অনুষ্ঠান উপলক্ষে সম্মাননা প্রাপ্তদের নাম এবং তাদের পরিচিতি সহ একটি স্মারক ও প্রকাশ হয়েছে, যা অনুষ্ঠানে আগতদের মাঝে বিতরণ করা হয়।
এমআই