আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
বিরোধীদের অনাস্থা ভোটের আগে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ব্যাপক অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। বুধবার তার রাজনৈতিক দল তেহরিক-ই-ইনসাফ পাকিস্তানের (পিটিআই) অন্যতম জোটসঙ্গী মুত্তাহিদা কউমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম-পি) জোট সরকার থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় ইমরানের ক্ষমতা থেকে বিদায়ের ঘণ্টা প্রায় বাজছে।
এমন পরিস্থিতিতে বুধবার জাতির উদ্দেশ্যে ইমরান খানের ভাষণ দেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে তা বাতিল করা হয়েছে। বুধবার দুপুরের দিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান এবং দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্সের (আইএসআই) প্রধানের সঙ্গে বৈঠকের পর ভাষণের পরিকল্পনা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। বুধবার রাতেও সেনাপ্রধান এবং আইএসআই প্রধানের সঙ্গে আবারও বৈঠকে বসার কথা রয়েছে তার।
পিটিআই দলীয় পাকিস্তানি সিনেটর ফয়সাল জাভেদ খান এক টুইটে ইমরান খানের আজকের ভাষণ বাতিলের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আগামী সোমবার দেশটির সংসদের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে অনাস্থা ভোটের আগে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল পিটিআইয়ের অন্যতম জোটসঙ্গী এমকিউএম-পি জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় ইমরান খানের ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে তা নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধছে।
ক্রিকেট তারকা থেকে প্রধানমন্ত্রী বনে যাওয়া ইমরান খান গত কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশটিতে ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার মুখোমুখি হয়েছেন। দেশটির ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায়, পাকিস্তানের কোনো প্রধানমন্ত্রীই তাদের ক্ষমতার মেয়াদ কখনই পূর্ণ করে যেতে পারেননি। মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে রাজনৈতিক, সামরিক অস্থিরতার মুখে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে প্রত্যেক প্রধানমন্ত্রীকে।
কলঙ্কিত ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে ক্ষমতায় আসা ইমরান খান এবারই সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন। দেশে অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা এবং পররাষ্ট্রনীতিতে বিপর্যয়ের অভিযোগ এনে পাক এই প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোটের ডাক দিয়েছেন বিরোধীরা।
বৃহস্পতিবার অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর জাতীয় পরিষদে বিতর্ক শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। ক্ষমতাসীন জোটের ছোট ছোট দলগুলোর পাশাপাশি নিজের দল পিটিআই সদস্যদেরও পাশে রাখতে বেগ পোহাতে হচ্ছে ইমরান খানকে।
৩৪২ আসনে জাতীয় পরিষদে ইমরান খানের দল পিটিআই এবং জোট সঙ্গীদের সদস্য রয়েছেন ১৭৬ জন। কিন্তু বুধবার জোটসঙ্গী মুত্তাহিদা কউমি মুভমেন্ট পাকিস্তান বলেছে, তাদের ৭ জন সদস্য বিরোধীদের পক্ষে ভোট দেবে। যা নিয়ে সংসদে বিরোধীদের মোট সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৬৩ জনে।
পিটিআইয়ের এক ডজনেরও বেশি আইনপ্রণেতা ইতোমধ্যে বিরোধীদের পক্ষে ভোট দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে। যদিও বিরোধীদের পক্ষে দলের সদস্যদের ভোট দেওয়া ঠেকাতে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন ইমরান খান। পিটিআইয়ের যে সদস্যরা বিরোধীদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দেবেন, তাদের আজীবনের জন্য নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে আদালতে পিটিশন দায়ের করেছেন তিনি।
অতীতে ক্ষমতাসীন দলের বিরুদ্ধে ভোটদান ঠেকাতে পাকিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আইনপ্রণেতাদের জাতীয় পরিষদে প্রবেশে শারীরিকভাবে বাধা এমনকি অপহরণের মতো ঘটনাও ঘটিয়েছিল।
ইমরান খান সরকারের জোট ত্যাগ করে বিরোধীদের সঙ্গে গাঁটছাড়া বাঁধার তথ্য নিশ্চিত করেছেন এমকিউএম-পির জ্যেষ্ঠ নেতা ফয়সাল সাবজওয়ারি। এক টুইটে তিনি বলেছেন, ‘আজ ঐক্যবদ্ধ বিরোধীগোষ্ঠী পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) এবং পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সঙ্গে মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তানের চুক্তি চূড়ান্ত হয়েছে।’
ইমরান খান বিরোধী কয়েকটি দলের সঙ্গে জোট গড়ে ক্ষমতায় আসার আগে পর্যন্ত পাকিস্তানের জাতীয় রাজনীতিতে কয়েক দশক ধরে আধিপত্য ধরে রেখেছিল পিএমএল-এন এবং পিপিপি।
দেশটিতে দশকের পর দশক ধরে চলে আসা ব্যাপক দুর্নীতি এবং কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পান ইমরান খান। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর থেকে আকাশচুম্বী মূল্যস্ফীতি, রুপির মান পড়ে যাওয়া এবং ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা সামলাতে ব্যাপক সংগ্রামের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি।
দেশটির কিছু কিছু বিশ্লেষক বলেছেন, পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ সমর্থনও হারিয়েছেন ইমরান খান। যদিও উভয় পক্ষ এই গুঞ্জন উড়িয়ে দিয়েছে। তবে পাকিস্তানের রাজনৈতিক ক্ষমতার অন্যতম ক্রীড়ানক হিসাবে কাজ করে দেশটির সেনাবাহিনী।
সূত্র: এএফপি, এনিডিটিভি।
এমআই