রোববার সকাল ৮টা থেকে আগামী ১২ জুনের টিকেট বিক্রি
করা হয়। বিকাল ৪টা পর্যন্ত ২৩ হাজার ৫১৪টি আসনের বিপরীতে টিকেট বিক্রি করা
হয়। এছাড়া দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করতে ইচ্ছুক যাত্রীরাও টিকেট নিয়েছেন।
এদিন
রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, পাবনাসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন
গন্তব্যের জন্য নির্ধারিত আগাম টিকেটের কাউন্টারগুলোতে দেখা যায় বিশৃঙ্খলা।
উত্তরবঙ্গের
আগাম টিকেটের জন্য আসা যাত্রীরা রাত ৪টার দিকে নিজেদের উদ্যোগে সবার নাম ও
ফোন নম্বর নিয়ে সিরিয়াল করে রাখেন। উদ্দেশ্য ছিল, যাতে কেউ পরে এস ভিড়ের
সুযোগে সামনে দাঁড়াতে না পারে। তবে দিনে অনেকেই এসে লাইনের আগে দাঁড়িয়ে
যাচ্ছিলেন বলে যাত্রীরা অভিযোগ করেন। সেখানে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর
(আরএনবি) সদস্যদের বলেও তেমন সাড়া পাননি তারা।
বিশৃঙ্খলার বিষয়ে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের কাছে অভিযোগ জানান যাত্রীরা
দিনাজপুরের টিকেটের জন্য আসা ঢাকা কলেজের পদার্থ বিজ্ঞাননের ছাত্র মিলন
বলেন, “ভোররাত ৪টার দিকে এসে ২১৪ নম্বর সিরিয়াল পেয়েছি। সকাল ৮টায় টিকেট
বিতরণ শুরুর পর বেলা ১১টার দিকেও টিকেটের দেখা মেলেনি।
“বেলা
১১টায় এসেও আমার সামনে আছে আরও প্রায় একশ যাত্রী। এখানে হয় ধীরগতিতে টিকেট
ছাড়ছে অন্যথায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে অনেকে পরে এসে সামনে দাঁড়িয়ে
যাচ্ছে।”
ভোগান্তি এড়াতে সকাল ৮টার পরিবর্তে ভোট ৬টা থেকে টিকেট বিক্রির উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
জয় ও তপন নামের দুই যাত্রীও অভিযোগ করেন, তারা সিরিয়াল দিয়েও তারা পেছনে পড়ে গেছেন।
তারা
জানান, সামনে যাতে কেউ সুযোগ নিতে না পারে সেজন্য রাতেই সবার নাম ফোন
নম্বর দিয়ে সিরিয়াল করে রাখা হয়েছিল। কিছুক্ষণ পর পর সিরিয়াল পরীক্ষাও করা
হয়েছে।
কিন্তু দুপুরের দিকে কিছু লোককে লাইনের একেবারে সামনের দিকে দাঁড়াতে দেখে
সরে যেতে বলা হলেও তারা সরেনি। পাশে থাকা আরএনবি সদস্যদের জানালেও তারা
নির্লিপ্ত থাকায় পরে পরে র্যাব ও পুলিশকে বিষয়টি জানানো হয় বলে তারা
জানান।
জিআরপি পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে দায়িত্বে থাকা বিল্লাল
হোসেন বলেন, “কিছু যাত্রী সিরিয়াল ভঙ্গের অভিযোগ নিয়ে এসেছে। আমরা সাথে
সাথে আরএনবির সদস্যদের ডেকে বলে দিয়েছি। পরে সব ঠিক হয়ে গেছে।”
যাত্রীদের
নিজ উদ্যোগে করা সিরিয়াল সম্পর্কে তিনি বলেন, “রাতে কেউ হয়ত সিরিয়াল
করেছে। কিন্তু দিনের বেলা সবাই সেই সিরিয়াল মানবে কিনা সেটা তো বলা যাচ্ছে
না।
পুরুষদের লাইনে বিশৃঙ্খলা থাকলেও অনেক স্বচ্ছন্দেই নির্ধারিত
তিনটি কাউন্টার থেকে টিকেট সংগ্রহ করতে পেরেছেন নারীরা। তবে সেখানেও
ধীরগতিতে টিকেট দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই।
নারীদের একটি
লাইনে দেখা যায়, একজন যাত্রীকে টিকেট দিতে এক থেকে তিন মিনিট পর্যন্ত সময়
নিচ্ছেন কাউন্টার কর্মীরা। একজন যাত্রী সর্বোচ্চ চারটি করে আগাম টিকেট
কিনতে পারছেন।
এদিন অনেকটা স্বস্তিতে টিকেট সংগ্রহ করেছেন কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, ফেনী ও নোয়াখালীর যাত্রীরাও।
কুমিল্লার
টিকেট কিনতে এসে এক ঘণ্টার মধ্যেই পেয়ে গেছেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও
প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান সাইফুল
ইসলাম।
তিনি জানান, সকাল ১০টার দিকে টিকেট নিতে এসে ১১টার মধ্যেই চট্টগ্রামগামী
মহানগর এক্সপ্রেসের টিকেট পেয়েছেন। তবে সিলেট ও উত্তরবঙ্গের লাইনে থেমে
থেমে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় বলে জানান তিনি।
নির্বিঘ্নে টিকেট পাওয়ার কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রামের যাত্রী আইইউবির ছাত্র শুভ।
“স্টেশনে আসলাম সকাল ১০টার দিকে। এক ঘণ্টার মধ্যেই টিকেট পেয়ে গেছি।”
১৩
জুন থেকে ঈদের বিশেষ ট্রেন চলবে জানিয়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের
ব্যবস্থাপক সীতাংশু চক্রবর্তী বলেন, সেদিনের বিশেষ ট্রেন ও বিশেষ বগি যুক্ত
হওয়ায় আরও বেশি আগাম টিকেট বিক্রি করা হবে।
এবছর ঈদে আগাম টিকেটের
পাশাপাশি ২৫ শতাংশ টিকেট বিক্রি করা হচ্ছে অনলাইনে। তবে ঈদ উপলক্ষে অনলাইন
সার্ভারে যাত্রীদের চাপ বেশি থাকায় অনেকে টিকেট সংগ্রহ করতে পারেন না বলে
রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
৪ জুন কমলাপুর থেকে বিক্রি করা হবে ১৩ জুনের আগাম টিকেট।