অনুপম মল্লিক আদিত্য, জবি প্রতিনিধি:
ঢাবি, জাবি, চবি, রাবি, বিইউপি সহ গুচ্ছের বাইরে থাকা সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছের আওতায় আনা, জুলাইয়ের মধ্যে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করাসহ গুচ্ছ বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরিক্ষায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) অংশগ্রহণের জন্য ১০টি শর্ত দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। মে মাসের মধ্যে শর্ত মেনে নিতে আল্টিমেটামও দিয়েছে শিক্ষক সংগঠনটি।
বুধবার (২০ এপ্রিল) গণমাধ্যমকে পাঠানো শিক্ষক সমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৮ এপ্রিল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।শর্তপূরণ সাপেক্ষে এবারের মতো গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষায় অংশগ্রহণের পক্ষে সিদ্ধান্ত প্রদান করেন শিক্ষকরা। যদি আগামী মে মাসের মধ্যে নির্দিষ্ট শর্তসমূহ পূরণের নিশ্চয়তা না পাওয়া যায় তবে অতি দ্রুত আরও একটি সাধারণ সভা করে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে বলে জানানো হয়।
শর্তগুলো হলো- বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের সংশ্লিষ্ট ডিনদেরকে নিয়ে গঠিত হবে ‘ইউনিট সমন্বয় কমিটি’ যারা ভর্তি পরীক্ষার যাবতীয় কার্যাদি সম্পাদন করবেন। এছাড়া সব উপাচার্য এবং ইউনিট সমন্বয় কমিটির প্রধানদের নিয়ে গঠিত হবে ‘কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি’- যারা সার্বিক বিষয় তদারকি করবেন; ২০২২ সালের ভর্তি পরীক্ষা অবশ্যই জুলাই মাসের ৩০ তারিখের মধ্যে শেষ করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে; ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে যাতে যে কেউ ফলাফল দেখতে পারে।
পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সব শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত স্কোর ও মেধাস্থান অবশ্যই প্রকাশ করতে হবে; ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের এক সপ্তাহের মধ্যে শিক্ষার্থীরা অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয় এবং ভর্তিচ্ছু বিভাগ নির্বাচন করবে এবং ভর্তির পুরো প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পন্ন করতে হবে; সকল আবেদনকারীকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান করতে হবে; পরীক্ষার কেন্দ্র নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের শুধু একটি পছন্দ থাকবে এবং সেই কেন্দ্রেই পরীক্ষা গ্রহণ করতে হবে; পরীক্ষার আবেদন ফি ব্যতীত শিক্ষার্থীরা ভর্তিকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দিষ্ট বিভাগে ভর্তির জন্য শুধুমাত্র একবার অর্থ প্রদান করবে। মাইগ্রেশন, ভর্তি বাতিল বা অন্য যেকোন কারণে সার্ভিস চার্জ বাবদ সর্বোচ্চ একশত টাকার বেশি কোন বিশ্ববিদ্যালয় আদায় করতে পারবে না।
ভর্তি বাতিল করে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলে ১০০ টাকা কর্তন করে জমাকৃত সমুদয় অর্থ ফেরত বা সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেরণের পন্থা উদ্ভাবন করতে হবে। আবেদন ফি থেকে প্রাপ্ত অর্থ ব্যয়ের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
এই অর্থ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজস্ব তহবিলে কোন অর্থ প্রদান করা যাবে না। নীতিমালা অনুযায়ী অর্থ ব্যয়ে ঘাটতি দেখা দিলে ইউজিসিকে সে পরিমাণ অর্থ ভর্তুকি হিসেবে প্রদান করতে হবে; বিভিন্ন কোটায় আবেদনপত্র জমাসহ ভর্তি প্রক্রিয়ার যাবতীয় কার্যাদি সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ডিন এবং চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সম্পন্ন করতে হবে; এছাড়াও ভর্তি পরীক্ষার বিভিন্ন কাজে সব শিক্ষকের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে হবে; আগামী বছরে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসহ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় আগামী বছর গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে বের হয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব ব্যবস্থায় অর্থাৎ এককভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেবে।
এবিষয়ে সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. আবুল কালাম লুৎফুর রহমান বলেন, 'অধিকাংশ শিক্ষকই গুচ্ছের বিপক্ষে, শিক্ষকদের কথা অনুযায়ীই শিক্ষক সমিতি তুলে ধরেছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি, গুচ্ছের সমন্বয় কমিটিকেও প্রয়োজনে বিষয়টা জানাবো। শিক্ষকদের কথা হলো, একই দেশে দুইটা নিয়ম কিভাবে চলে, কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এক নিয়মে আর বাকিগুলো এক নিয়মে, এভাবে হতে পারে না। তাছাড়া যে কারণে গুচ্ছ শুরু হয়েছিল, শিক্ষার্থীদের হয়রানি কমানো, সেটা সফল হয়নি।'
শর্ত না মেনে নিলে শিক্ষকদের পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'মে মাসের মধ্যেই কিছু দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন মাননীয় উপাচার্য মহোদয়। সেক্ষেত্রে তখন যদি শিক্ষরা চান, আমরা সাধারণ সভা ডাকবো, সভায় শিক্ষকরা যেভাবে মত দিবেন সেভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এছাড়াও পরীক্ষা সেপ্টেম্বরে রাখার পরিকল্পনা আছে, যা অনেক দেড়ি হয়ে যায়। আমরা এগিয়ে নিয়ে আসার প্রস্তাবও রাখবো।'
সময় জার্নাল/এলআর