নিজস্ব প্রতিবেদক:
রাজধানীর কলাবাগানের তেঁতুলতলায় কখনো কোনো মাঠ ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। তিনি বলেছেন, বরাদ্দ যেহেতু হয়েছে সেহেতু জায়গাটি এখন পুলিশের।
তেঁতুলতলা মাঠে থানা ভবনের নির্মাণ কাজ বন্ধের অনুরোধ জানাতে বুধবার (২৭ এপ্রিল) সচিবালয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যান ‘নিজেরা করি’র সমন্বয়ক ও অধিকারকর্মী খুশি কবিরসহ কয়েকটি সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
প্রতিনিধি দলে ছিলেন বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, স্থপতি ইকবাল হাবিব এবং সাংস্কৃতিক কর্মী সঙ্গীতা ইমাম।
সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
দেয়াল নির্মাণ স্থগিত রাখা নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি বলেছি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করব। সেখানে নির্মাণ কাজ হবে কি হবে না, সেটি পরের কথা। জায়গাটি পুলিশকে বরাদ্দ করা হয়েছে। বরাদ্দ যেহেতু হয়েছে, সেহেতু এখন এই জায়গাটি পুলিশের।
তিনি বলেন, তেঁতুলতলায় যে মাঠের কথা বললেন, এটি কিন্তু মাঠ নয়। কোনো কালেই মাঠ ছিল না। এটা একটা খালি জায়গা ছিল, পরিত্যক্ত সম্পত্তি ছিল।
মন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহরে আমাদের নতুন যে থানাগুলো হচ্ছে, এগুলো বেশিরভাগ ভাড়া বাড়িতে। ভাড়া বাড়িতে থাকায় আমাদের পুলিশ ফোর্স নানা ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে। সেজন্য স্থায়ী অবস্থানে নেওয়ার জন্য আমরা ডিসির কাছে বলেছিলাম কোনো জায়গা দেওয়া যায় কি না। পরে ডিসি জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করে এই জায়গাটি আমাদের বরাদ্দ দেন। এটার মূল্য হিসেবে যে টাকা হয়, সেটিও মেট্রোপলিটন পুলিশ জমা দিয়েছে। পরে ডিসি আমাদের এটা হস্তান্তর করে। এটিই হলো মূল কথা।
তিনি বলেন, আমরা শুনেছি, এটা লোকালয়ের পাশে খালি জায়গা। এখানে বাচ্চারা খেলত। আলাপচারিতার জন্য জায়গাটি ছিল। এখন অনেকে এটি নিয়ে নানান কথা বলছেন। আমাদের কথা স্পষ্ট, আমাদের জায়গা প্রয়োজন, কলাবাগানের একটি থানা ভবনও প্রয়োজন। সেটার দিকে লক্ষ্য রেখে আমরা বলছি, এর চেয়ে ভালো কোনো জায়গা মেয়র সাহেব বা অন্য কেউ ব্যবস্থা করতে পারলে আমরা অন্য ব্যবস্থা নেব। কিন্তু থানার জন্য এটিই নির্দিষ্ট জায়গা, সরকার এটিই ব্যবস্থা করেছে।
তাহলে কি এখন আর মাঠ থাকল না? সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপাতত তাই-ই। আপাতত যেহেতু এটা পুলিশকে দেওয়া হয়েছে, এটা পুলিশেরই।
পরিবেশ ও অধিকারকর্মীদের সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছুক্ষণ আগে যারা এসেছিলেন, তারা একটি আবেদন করেছেন। বিকল্প কিছু করা যায় কি না, সে পর্যন্ত এটা স্থগিত রাখা যায় কি না। থানাও দরকার এবং এই বাচ্চারা, যারা কথা বলছে তাদেরও রিক্রিয়েশন দরকার। এজন্যই তারা বলেছিল যে আপাতত কনস্ট্রাকশন না করতে।
তিনি বলেন, আমি বলেছি, এখনই কনস্ট্রাকশনে যাচ্ছি না। এরচেয়ে বড় কোনো অফার যদি আমাদের দিতে পারেন, তাহলে আমরা ভেবে দেখব। এটা ২০ শতক জমি সম্ভবত, খুব বড় জমি নয়। ফুটবল খেলা বা টেনিস খেলার মাঠ- এরকম কিছু নয়। তারা যেহেতু আবেদন করে গিয়েছেন, আমরা দেখব। আমাদের টাকা যেটা দিয়েছি, সেটার কী হবে, সেটাও দেখব।
মন্ত্রী বলেন, পাবলিক সেন্টিমেন্টের কথা আমিও বলছি। আমাদের থানা দরকার, এটাও তো বুঝতে হবে। কারণ, যদি আমি সুরক্ষা দিতে না পারি তাহলে তখন তো সেন্টিমেন্ট আমাদের উপরই আসবে। এখন এটা পুলিশের প্রোপার্টি।
নিজেরা করি সংগঠনের সমন্বয়ক ও অধিকারকর্মী খুশি কবির বলেন, এখানে যে কাজটি হচ্ছে সে জিনিসটা আমরা চাচ্ছিলাম বন্ধ করার জন্য। আমরা চাচ্ছি যে এবারের ঈদের জামায়াত ওখানেই হোক। তিনি (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে উনি চেষ্টা করবেন।
খুশি কবির বলেন, আমরা স্ট্রংলি বলে এসেছি নির্মাণ কাজ ইমিডিয়েটলি বন্ধ করার জন্য। নইলে বিরূপ একটা অবস্থা তৈরি হবে।
পরিবেশবাদী আইনজীবীদের সংগঠন বেলার নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, খেলার মাঠটির ব্যাপারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও ফিল করছেন। কিন্তু উনারা ২৭ কোটি টাকা দিয়ে দিয়েছেন। তখন আমরা বলেছি, সেটা তো সরকারি ট্রেজারিতেই আছে। ওই এলাকায় আরও পরিত্যক্ত জায়গা আছে। একটা জায়গার কথা ইকবাল হাবিব ভাই স্পষ্ট করে বলেছেন।
তিনি বলেন, পুলিশের সঙ্গে এলাকাবাসী মুখোমুখি হোক, এটা আমরা চাই না। ঈদের জামায়াতটা হতে পারবে না যদি এখানে দেয়াল হয়, তাই মন্ত্রীকে বলেছি, এটা নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। মন্ত্রী বলেছেন এ ব্যাপারে তিনি ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে কথা বলবেন।
এমআই