হুমায়রা আনজুম :
নারী একটি শব্দ হলেও এর অর্থ অনেক ভারী। শ্রমিক কথা টা আসলেই আমরা পুরুষ শ্রমিকদের কথা ভাবি। ভুলে যাই যে পুরুষের সাথে নারী সমান তালে কাজ
করে যাচ্ছে। সংগ্রামের ইতিহাসে তাদের অবদানও কম নয়। নারী শ্রমিক আমরা চলার পথে অনেক দেখে থাকি, ভিন্ন মাত্রায় ভিন্ন রুপেই এদের আবির্ভাব। কেউ
ইটের ভাটায় কাজ করছে তো কেউ রোদে পুড়ে ফেরি করছে। দিন শেষে তাদের লক্ষ্য একটু সুখের মুখ দেখা। আসলেই কি তারা তাদের সুখের মুখ দেখতে
পায় ? অনেক নারী শ্রমিককে দেখা যায় বুকের বাচ্চা বেধে কাজ করে যাচ্ছে জীবিকার তাগিদে, বহুতলা ভবন নির্মাণে মাথা বোঝাই করে বালু সিমেন্ট তুলছে
এক গর্ভবতী নারী যেখানে তার হয়ত সম্পুর্ণ বিশ্রামে থাকার কথা ছিল, অনাগত সন্তান পুস্টি নিশ্চিত করার কথা ছিল। কিন্তু তিনি জীবনের তারনায় নিজেক ও
অনাগত সন্তানকে বাজী রেখে কাজ করে যাচ্ছেন যেন দিন শেষে একটু সুখের মুখ দেখতে পাবার আশায় । সে কি আদৌ তার মূল্যায়ন পাচ্ছে?
গ্রামের দিকে অনেক বয়স্ক মহিলাদের দেখা যায়, যারা কাথা সেলাই, পাটি বোনাতে ব্যস্ত,কেউবা হাতের কাজ করছেন তো কেউ কামারের কাজ করছে। তাদেরতো
এখন হেসে খেলে দিন যাবার কথা। সারাজীবন ধকলের পর শেষ বয়সে এখন একটু বিশ্রাম দরকার। কিন্তু তারা একটু ভাল থাকার জন্য নিজের কথা না ভেবে পরিবারের উন্নতির কথা ভাবছেন। কিন্তু এতকিছুর পরেও সঠিক মূল্যায়ন পাচ্ছে তো? একজন পুরুষ শ্রমিক তার কাজ করে যতটুকু মূল্যায়ন পাচ্ছে ঠিক অপর দিকে একজন নারী শ্রমিক ঘরে বাহিরে সমান তালে কাজ করে তার কাজের মূল্যায়ন পাচ্ছে তো? অনেক সময়ই দেখা যায় নারী তার নায্য মূল্য পাবার জন্য এইদিক সেইদিক পায়তারা করে বেড়াচ্ছে। অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। দিন শেষে বাড়ি ফিরে সেইখানেও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তবুও তারা ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। কিন্তু কেন? তাহলে কি বছর বছর লোক দেখানো আমাদের এই বিশ্ব শ্রমিক দিবস পালন?
ইতিহাস বলছে, ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটের ম্যাসাকার শহিদদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করে ১লা মে বিশ ব্যাপি পালিত হয় শ্রমিক দিবস। সেদিন দৈনিক আটঘণ্টার কাজের দাবিতে শ্রমিকরা হে মার্কেটে জমায়েত হয়েছিল। তাদেরকে ঘিরে থাকা পুলিশের প্রতি এক অজ্ঞাতনামার বোমা নিক্ষেপের পর পুলিশ শ্রমিকদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। ফলে প্রায় ১০-১২ জন শ্রমিক ও পুলিশ নিহত হয়। ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিপ্লবের শতবার্ষিকীতে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনের প্রথম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে থেকে শিকাগো প্রতিবাদের বার্ষিকী আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশে পালনের প্রস্তাব
করেন রেমন্ড লাভিনে। ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় কংগ্রেসে এই প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। এর পরপরই ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দে মে দিবসের দাঙ্গার ঘটনা ঘটে। তারপরে, ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে আমস্টারডাম শহরে অনুষ্ঠিত সমাজতন্ত্রীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই উপলক্ষ্যে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। প্রস্তাবে দৈনিক আটঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণের দাবি আদায়ের জন্য এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বিশ্বজুড়ে পয়লা মে তারিখে মিছিল ও শোভাযাত্রা আয়োজন করতে সকল সমাজবাদী গণতান্ত্রিক দল এবং শ্রমিক সংঘের (ট্রেড ইউনিয়ন) প্রতি আহ্বান জানানো হয়। সেই সম্মেলনে “শ্রমিকদের হতাহতের সম্ভাবনা না থাকলে বিশ্বজুড়ে সকল শ্রমিক সংগঠন মে মাসের ১ তারিখে 'বাধ্যতামূলকভাবে কাজ না-করার' সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। বর্তমানে প্রায় ৮০টি দেশে শ্রমজীবী জনতা মে মাসের ১ তারিখকে সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালন করে থাকে।
নারী পুরুষ উভয় নিয়েই শ্রমিকজনতা। পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরাও তাদের যথাযথ মূল্য পাক। যেখানেই নারী প্রতি অবিচার সেইখানেই রুখে দাঁড়ানো
আমাদের কর্তব্য। নারীর সঠিক মূল্যায়ন তার অধিকার। নারীর আলোয় আলোকিত হোক বিশ্ব। বৈষম্যের কুয়াশা শেষ করে তারাও বাঁচতে শিখুক। এই হোক এবারের শ্রমিক দিবসের প্রত্যাশা।
লেখক- শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।