ডা.কামরুল হাসান সোহেল :
বিশেষ করে এক মাস রোজার পর ঈদের দিনে অতিভোজন কোনোভাবেই শরীরের জন্য স্বস্তিদায়ক নয়। অতিভোজনের কারণে নানা শারিরীক সমস্যা নিয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভীড় জমায় রোগিরা। তীব্র পেট ব্যথা, বুক জ্বালাপোড়া করা,বমি, ডায়রিয়া সহ আরো বেশ কিছু উপসর্গ নিয়ে হাজির হাসপাতালের জরুরি বিভাগে।তাই অতিভোজন বা অতিরিক্ত ভাজাপোড়া খাবার নয় ঈদের দিনের খাবার হোক পরিমিত ও স্বাস্থ্যকর।
সামনেই আসছে ঈদ। ঈদ আনন্দের বেশির ভাগজুড়েই থাকে বিশেষ খাবারদাবার। এই খাবারের পুষ্টিমানের কথা বিবেচনা করে তবেই খাওয়া প্রয়োজন।
ঈদের দিন হালকা খাবারই শ্রেয়
দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পর ঈদের দিনের খাবার নিয়ে সাবধানতা অবলম্বন জরুরি। তাই আগে থেকেই ভেবেচিন্তে তৈরি করে নিতে পারেন খাবারের মেনু। তবে যে খাবারই খান না কেন, সেটা হতে হবে কম তেলে রান্না।
ঈদ-সকালের নাশতা
কম তেলে ভাজা পরোটা বা সবজি খিচুড়ি হতে পারে উপযুক্ত
ঈদের সকাল মানেই ঈদের নামাজ। নামাজে যাওয়ার আয়োজন ও ফেরার মধ্যের সময়ে হয়ে যায় হালকা ব্যায়াম। আগের দিন পর্যন্ত রোজা রেখে ঈদের সকালে একসঙ্গে অনেক খাবার খাওয়া ঠিক হবে না। বরং পরিমিত আহারই শ্রেয়।
ঈদ–সকালের নাশতায় রুটির পাশাপাশি থাকতে পারে হালকা তেলে ভাজা পরোটা বা সবজির নরম খিচুড়ি। তার সঙ্গে মুরগির তরকারি বা ডিম ভুনা রাখা যায়। তবে সকালের খাবারকে স্বাস্থ্যকর বানাতে একটা সবজি রাখতে হবে অবশ্যই। সবশেষ মিষ্টি খাবারে থাকতে পারে সেমাই, পায়েস, ফিরনি বা পুডিং।
সকাল ও দুপুরের মাঝে
ঈদের দিনে অনেকে সকাল ও দুপুরের মাঝের সময়টাতে হালকা কিছু খেতে পছন্দ করেন। সে ক্ষেত্রে ফুচকা ছাড়া বা অল্প ফুচকা দেওয়া চটপটি খেতে পারেন। যেহেতু এখন বেশ গরম, তাই এ সময়ের সব থেকে পুষ্টিকর খাবার হলো তাজা ফল বা ফলের সালাদ। এ ছাড়া ফলের জুস, বেলের শরবত, ডাবের পানি খাওয়া যেতে পারে, তাতে শরীরে পানিস্বল্পতা তৈরি হবে না।
দুপুরের খাবার
রোস্টের বদলে কোরমা থাকলে ভালো
ঈদের দিনে দুপুরের খাবারে খুব হালকা তেলের পোলাও বা ভুনা খিচুড়ি খাওয়া যাবে। দুপুরে ডিপ ফ্রাই খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। তবে বেক করা কাবাব বা গ্রিল করা মুরগি ভালো খাবার হবে। ঈদের দিনের একটি পরিচিত খাবার হলো রোস্ট। কিন্তু আমরা হয়তো জানি না এক মাস রোজা রাখার পর রোস্টজাতীয় খাবার গ্যাস্ট্রিকের মতো সমস্যা বাড়িয়ে তোলে। তাই রোস্টের বদলে কম তেলে রান্না মুরগির কোরমা রাখা যায়।
এ ছাড়া দুপুরের জন্য কম মসলার চায়নিজ সবজি খুবই স্বাস্থ্যকর পদ। রান্না করা যেতে পারে সবজির কোরমা। কোমল পানীয়ের বদলে বোরহানি বা মাঠা শ্রেয়। থাকতে পারে টক দই।
রাতের হালকা খাবার
ঈদের দুপুরে একটু ভারী খাবার খাওয়া হয়। তাই রাতে সহজে হজম হয়, এমন খাবারই রাখতে হবে। রাতে মাছ হতে পারে আদর্শ খাবার। মাছের ফিলে সয়া সস, লেবুর রস ও গোলমরিচ দিয়ে মেরিনেট করে রান্না করলে গতানুগতিক রান্না থেকে ভিন্ন হবে।
রাতে কষা মাংসের চেয়ে স্টুই ভালো
কতটুকু ক্যালরি খাবেন
ঈদের দিনে একজন সুস্থ মানুষ সকালে ২৫০ থেকে ৩০০ ক্যালরি খেতে পারেন। সকাল-দুপুরের মাঝে ১২০ থেকে ১৫০ ক্যালরি। দুপুরে ৪৫০ থেকে ৫০০ ও রাতে ৩৫০ ক্যালরির বেশি নয়।
ঈদের দিনে শিশুদের জন্য
শিশুদের ক্ষেত্রে তেমন বাধানিষেধ থাকে না। তবে বেশি চিনি, বেকারির খাবার, কোমল পানীয় যাতে মাত্রা ছাড়া না খায়, সেটা নজর রাখতে হবে
লেখক : উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, বরুড়া, কুমিল্লা।