মো.শাহাদাত হোসেন নিশাদ:
সোমবার বিকেল ৫টা। রাজধানীর মহাখালীতে ট্রাফিক পুলিশের দ্বায়িত্বে আবদুস সালাম নিরলস ভাবে দ্বায়িত্ব পালন করছে। আগ্রহ নিয়ে তার সাথে দুমিনিট আড্ডা দিলাম। জানলাম তার হৃদয়ে জমে থাকা কিছু কষ্টের কথা। এবারের ঈদ করা হবে না তার পরিবারের সাথে। দ্বায়িত্বের কাছে বিসর্জন দিতে হলো তার ঈদের আনন্দ। ঈদ করার জন্য গ্রামের বাড়ী নোয়াখালীর উদ্যেশে রওনা হওয়ার সময় পাশের সিটে বসলেন প্রাইভেট কোম্পানীতে জব করা শামীম হোসেন নামে এক লোক। পুরো রাস্তা জুড়ে তার জীবনের গল্প শুনলাম। বাড়ীতে তার ২ মেয়ে আর স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। বাবা মা আর ১ বোনও আছে। মেয়েদের আবদার দামী জামা কিনে দিতে হবে এবার ঈদে। স্ত্রী মুখ ফুটে কিছু না বললেও ভাষায় বুঝা যায় তারওতো চাহিদা আছে কিছু। বুড়ো মা নিজের জন্য লাগবে না বলে বাবার জন্য একটা পাঞ্জাবী আনতে বললেন। তারপরেওতো মা , তার জন্য কি করে কিছু না কিনি। মোটামুটি সবার জন্য কেনাকাটা হলো শামীমের। শুধু কিনলেন না নিজের জন্য। প্রথমে ভাবলাম একটু সম্প্রতি দেখাতেই হয়তো নিজের জন্য কেনেননি শামীম। কিন্তু চোখের আডালে তার পানি আচ্ছন্ন। জানতে পারলাম বেচারা এবার ঈদের বোনাসটুকুও পায়নি। তারউপর জানতে পারলো ঈদের পর অফিস কিছু লোকবল কমাবে। ছাটাইয়ের তালিকায় রয়েছে তার নামও। এমন এক কষ্টমাখা মন নিয়ে পরিবারের সবার খুশির খোরাক হয়ে ঈদে বাড়ী যাওয়া হচ্ছে শামীমের। ইতিমধ্যেই স্টেশনে এসে পৌঁছালাম। এলাকার বেশিভাগ রিক্সাওয়ালা আমার পরিচিত। দূর থেকে রিক্সাওয়ালা শাহআলম ভাতিজা বলে ডেকে নিয়ে রিক্সায় উঠালো। পথে জানতে চাইলাম কেমন চলছে তার দিনকাল? পরে বললেন আর কইও না। ঈদ চইলা আইলো। অনও কারও লাই কিছু কিনতাম হারি নয়। পেটে ভাতে খাইতেই যেন টানাটানি। আসলেই আমাদের চারপাশে অনেক মানুষ রয়েছে যারা লজ্জায় অনেক কথা বলতে পারে না। কিন্তু তাদের জিবনের গল্পগুলো রূপকথার গল্পকেও হার মানায়। এমন মানুষের মাঝে সত্যি যেন ঈদের আনন্দ আসেনা। আসবে কি করে? তাদের যে পিছু টান রয়েছে।
ঈদুল ফিতর প্রতিবছর ধরণিতে এক অনন্য-বৈভব বিলাতে ফিরে আসে। রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস রমজানের সিয়াম সাধনার শেষে শাওয়ালের এক ফালি উদিত চাঁদ নিয়ে আসে পরম আনন্দ ও খুশির ঈদের আগমনী বার্তা। তাই সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষকে ভাবা উচিত তার পাশে থাকা মানুষটির কথা।
পাশের মানুষটির দারিদ্রতাকে পিছনে রেখে আমাদের সবার সহযোগিতায় ঈদ ধনী-দরিদ্র, সুখী-অসুখী, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সব মানুষের জন্য ঈদ আনন্দে ভরে উঠুক। আমাদের কায়মনোবাক্যে প্রার্থনা, জগতের সব মানুষের সুখ-শান্তি, কল্যাণ ও উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি। আগামী দিনগুলো সত্য, সুন্দর ও সৌন্দর্যমণ্ডিত হোক! হাসি-খুশি ও ঈদের অনাবিল আনন্দে প্রতিটি মানুষের জীবন পূর্ণতায় ভরে উঠুক! ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে মুসলমানদের আত্মশুদ্ধি, সংযম, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির পরিবেশ পরিব্যাপ্তি লাভ করুক—এটাই হোক ঈদ উৎসবের ঐকান্তিক কামনা। তাই আসুন, ঈদের নির্মল আনন্দ ছড়িয়ে দিই সবার মনে-প্রাণে; বুকে বুক মিলিয়ে চলুন সবাই সবার হয়ে বলে যাই, ‘ঈদ মোবারক’।
লেখক: গণমাধ্যম কর্মী।