মো. মাইদুল ইসলাম:
চুয়ান্ন বছরে পদার্পণ করেছে ঐতিহ্যেবাহী রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ। জিন্নাহ কলেজ থেকে তিতুমীর কলেজ প্রতিষ্ঠার ৫৩ বছরে নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে প্রশংসা কুড়িয়েছে দেশব্যাপী। বিভিন্ন সমস্যা থাকলেও তা কাটিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি ক্লাসরুমের সংকট নিরাসনে করা হয়েছে নতুন দুটি দশ তলা ভবন, আবাসনের জন্য ছেলে ও মেয়েদের জন্য করা হয়েছে দুটি দশতালা ভবন, যাতায়াতের জন্য যুক্ত হবে নতুন পাঁচটি বাস। তবে এতবছরের কলেজটিতে বর্তমানে শিক্ষার্থীদের জন্য নেই কোন ক্যান্টিন, মেডিকেল সেন্টার, কলেজের ওয়েব সাইটের অবস্থাও রুগ্ন।
জন্মদিনে কলেজের শিক্ষার্থীদের রয়েছে নানা প্রত্যাশা
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী প্রান্তিক হোসাইন বলেন
৫৪ বছরে পদার্পণ করলো ঐতিহ্যবাহী সরকারি তিতুমীর কলেজ। তিতুমীর কলেজের ছাত্র হিসেবে যা আমার জন্য গর্বের।
একটা সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজস্ব প্রত্যাশা পূরণের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা তেমন থাকে না। আমার সময়কাল বিবেচনায় তিতুমীর কলেজ ছাত্র বান্ধব প্রতিষ্ঠান। যা কলেজ কতৃক অনুমোদিত বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোর তালিকার দিকে তাকালে বোঝা যায়।
একজন সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে কলেজ থেকে আমি এবং আমার দল শুদ্ধস্বর কবিতা মঞ্চ যে সুস্থ ও সুন্দর পরিবেশ পেয়েছে তা অকল্পনীয়।
একটি বাগানের সৌন্দর্য বজায় থাকে দায়িত্বশীল পরিচর্যায়। যে সংগঠনগুলো কে কলেজ অনুমোদন দিয়েছে, সে সংগঠনগুলোকে কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া ও সঠিক পরিচর্যা করার দায়িত্বও কলেজের। ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা বলতে এটুকুই। আমরা যেনো সব সময় দেখি তিতুমীর কলেজের প্রতিটি সংগঠন তাদের মেধা ও শ্রম দিয়ে সমগ্র দেশব্যাপী ও দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও সুনাম অর্জন করছে এবং প্রতিষ্ঠানের নাম উজ্জ্বল করছে।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো.শাহাদাত হোসেন নিশাদ বলেন
৫৪ বছরে তিতুমীর কলেজের ব্যাপক উন্নয়ন আমরা দেখেছি। বিশেষ করে যখন আমি তিতুমীর কলেজে ভর্তি হয় তখন দেখেছি ১ টি ছেলেদের জন্য হল ও মেয়েদের জন্য ১ টি। পানি সংকটসহ নানান সমস্যা ছিলো। যা এখন অনেকটাই লাঘব হয়েছে।
তবে অবকাঠামোগত আরও কিছু উন্নয়ন দরকার৷ বিশেষ করে প্রায় ৬৩ হাজার শিক্ষার্থীদের জন্য এখনো কোন ক্যান্টিন নেই। শিক্ষার্থী সংখ্যা অনুযায়ী পর্যাপ্ত বাস নেই। তিতুমীর কলেজের সম্মানিত অধ্যক্ষ ব্যক্তি জিবনে সৎ এবং কর্মঠ একজন মানুষ। আমরা আশা করি ওনার হাত ধরে তিতুমীর কলেজ বাংলাদেশের মধ্যে সবদিক দিয়ে সেরা কলেজে রূপান্তরিত হবে।
হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইশরাত জারিন খান বলেন
সরকারি তিতুমীর কলেজ প্রতিষ্ঠার ৫৪ বছরে পা দিয়েছে। পূর্বে সরকারি তিতুমীর কলেজ সম্পর্কে সকলের ধারণা খুব একটা ইতিবাচক ছিল না বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কোন্দল লেগেই থাকত। যখন তিতুমীর কলেজে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করি অনেকটা এই রকম কিছু কথা শুনতে হয়েছিল, অনেকটা আশাহত হয়েই ভর্তি হওয়া। ২০১৭ সালে পড়াশুনার মান ভালো করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভূক্ত করা হয় তিতুমীর কলেজ সহ আরোও ৬ টি কলেজকে।
৪ বছরের ব্যবধানে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয় আমাদের শিক্ষার ক্ষেত্রে। সাথে সাথে গড়ে উঠেছে সহ শিক্ষামূলক বিভিন্ন সংগঠন, যেখানে পড়ালেখার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আত্মউন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে শিক্ষক সহ কিছু অদম্য শিক্ষার্থী। দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে আমাদের চিন্তা, ধারণা। নিজেদের উন্নয়নে শিক্ষার্থীরা এখন বেশি সচেতন।
ভবিষ্যতে দেশের গন্ডি পেরিয়ে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সফলতা নিয়ে আসবে এটাই আমার প্রত্যাশা।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সুমাইয়া আল ফাতিহা বলেন
প্রিয় তিতুমীর কলেজ যার সুনাম ছড়িয়ে আছে সারা দেশজুড়ে। আমাদের কলেজে ছাত্ররাজনীতি বেশি হলেও আমরা বরাবরই ভালো ফলাফল করে আসতেছি। আর তা সম্ভব হচ্ছে শিক্ষকদের সহায়তায় ও আমাদের নিয়মিত পড়াশোনার মাধ্যমে। এই কলেজ আমাদের শুধু ভালো পড়ালেখাই নয় ভালল মানুষ হতেও শেখাচ্ছে। ভবিষ্যতে ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে সে প্রত্যাশা আমাদের। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের এমন সম্পর্ক সবসময় বজায় থাকুক। যাতে আমাদের পথচলা সহজ হয় সেই কামনা।
রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ হোসাইন রাজন বলেন
গৌরভ ও ঐতিহ্যে অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমাদের তিতুমীর কলেজ। ৫৩ পেরিয়ে ৫৪ বছরে আজ আমাদের কলেজ পা দিয়েছে৷ শিক্ষার মান উন্নয়ন পাশাপাশি কলেজের সার্বিক উন্নয়ন হচ্ছে, যা সত্যিই প্রশংসনীয়। তবে এতো উন্নয়নের মাঝেও কোথাও যেনো, আমরা পিছিয়ে আছি অন্যদের থেকে। আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাম মাত্র কলেজ হলেও একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে আমরা মোটেও কম নই। আমাদের তিতুমীর কলেজে ২২টির মতো শিক্ষার্থীদের সহশিক্ষা কার্যক্রম মূলক সংগঠন আছে, রয়েছে জেলা ভিত্তিক অনেক জেলা সংগঠন, রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন গুলো অনেক সুনাম বয়ে এনেছে৷
শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বিবেচনায় এশিয়া মহাদেশে বৃহত্তম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠা বার্ষীকিতে নেই কোনো আয়োজন, উদযাপিত হচ্ছে না, তিতুমীর কলেজ দিবস। আমাদের কলেজটি সৈয়দ মীর নিসার আলী তিতুমীর এর নামে করা হলেও, পালিত হয় না, তিতুমীর এর জন্মদিন। সূবর্ণজয়ন্তীর পর কোনো প্রতিষ্ঠাবার্ষীকিতে ছিলো না কোনো আয়োজন। সরকারি যেকোনো দিবস সহ, আমাদের ক্যাম্পাসে যেকোনো প্রোগ্রাম অনেক বড় করে, সুন্দর ও সাবলীল ভাবে উদযাপিত হয়। আমরা শিক্ষার্থীরা চাই, তিতুমীর কলেজের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন টি সরকারি তিতুমীর কলেজ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হোক। প্রতি বছর ছোট করে হলেও যেনো, এই দিবসটি পালন করা হয়৷
মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আসিফ উজ জামান বলেন
'তিতুমীর কলেজ' আমাদের প্রাণপ্রিয় বিদ্যাপিঠ। আজ ৫৪ বছরে পদার্পণ করায় আমরা সকলেই গর্বিত। আমরা গর্বিত এই বিদ্যাপিঠের অংশিদার হতে পেরে। ধীরে ধীরে এতগুলো বছর অতিক্রম করতে 'তিতুমীর কলেজে' সংযোজন বিয়োজন হয়েছে অনেক কিছুই। বর্তমানে, 'তিতুমীর কলেজে' উন্নত শিক্ষার জন্য নানান নতুনত্বের ছোঁয়া দেখা যাচ্ছে। এর পাশাপাশি ক্যাম্পাসের একটি ক্যাফেটেরিয়া এখন শুধু সময়ের দাবি। সুদূর ভবিষ্যতে আমাদের এই ক্যাম্পাস আরো চুয়ান্নশ বছর অতিক্রান্ত করুক এই আমাদের প্রার্থনা।
এমআই