কোভিড-১৯ অতিমারীর আগে আমি থ্যালাসেমিয়া নিয়ে টুকটাক লেখালেখি করতাম। এতে করে অনেকেই মনে করতেন আমার একজন থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত সন্তান আছে। অনেকেই মেসেঞ্জারে সন্তানের কুশল জানতে চাইতেন। আরো জানতে চাইতেন, ওর কতদিন পর পর রক্ত লাগে?
আমি উত্তরে বলতাম, আমার সন্তান সুস্থ, কিন্তু হতে পারতো থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত। কারণ বিয়ের আগে আমরা বাহক নির্ণয়ের পরীক্ষাটি করিনি। যেখানে প্রতি দশজনে একজন থ্যালাসেমিয়ার বাহক সেখানে আমার মেয়ের সুস্থ থাকাটা মহান আল্লাহর অশেষ দয়া ছাড়া কিছু নয়।
দৃঢ়ভাবে থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধ করতে চাওয়ার আমার আরেকটা কারণ আমি বেঁচে থাকা থ্যালাসেমিয়া রোগীদের একটি সুস্থ কর্মময় জীবনের আশ্বাস দিতে চাই। আমি চাই এরা গৃহকোণ থেকে আসুক মূলধারায়।
কীভাবে? প্রতিবছর যোগ হচ্ছে ৯০০০-১০০০০ থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু। রক্তের চাহিদা বাড়ছে। আনুপাতিকহারে ডোনার সৃষ্টি হচ্ছেনা। সম্ভবও না। প্রতিমাসে একজন রোগীর ২-৩ জন ডোনার লাগে। আর একজন ডোনার চারমাস পর পর রক্তদান করতে পারে। তাহলে হিসাব করে দেখুন, একজন থ্যালাসেমিয়া রোগীর প্রতি চারমাসে অন্তত ৮-১২ জন ডোনারের প্রয়োজন। ফলে রক্তের অপ্রতুলতায় আমরা অকালে হারাচ্ছি অনেক থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীকে।
প্রতিরোধের মাধ্যমে নতুন রোগীর সংখ্যা কমাতে পারলে বেচে থাকা রোগীদের প্রতি আমরা আরো যত্নবান হতে পারবো। শুধু তাই নয়, রক্ত নেয়ার ফলে এদের শরীরে যে আয়রন জমা হয়, তা তাদের কিডনী, লিভার, হার্টকে বিকল করে দিয়ে মারাত্মক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে বিধায় তা অপসারণের জন্যও তাদের অতি মূল্যবান ঔষধ সেবন করতে হয়। রোগীর চাপ কমে গেলে সেই ঔষধ ও পর্যাপ্ত যোগান দেয়া সম্ভব হবে।
আজ ৮ মে বিশ্ব থ্যালাসেমিয়া দিবস।
আসুন প্রতিরোধ করি থ্যালাসেমিয়া-
#ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে থ্যালাসেমিয়ামুক্ত রাখতে
#বেঁচে থাকা রোগীদের ভালোভাবে দীর্ঘ কর্মময় জীবন নিয়ে মূলধারায় থেকে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা দিতে।
ডা. নুসরাত সুলতানা