হুমায়রা আনজুম শ্যামসী: মা হলেন মহান আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমত। মা লেখাটা যত না ছোট তার ভাবার্থ ততটাই বৃহৎ।একজন মা হয়ে ওঠার পেছনে কতটা ত্যাগ শিকার করতে হয় তা শুধু একজন মা ই যানেন। একজন মা কে কখনো কোন বর্ণ বা বাক্যে প্রকাশ করা সম্ভব না,তার মহত্তের কাছে পৃথিবীর সব কিছু অতি নগন্য।প্রতিটি ধর্মে মায়ের মর্যাদা সর্বোচ্চ স্থানে রয়েছে। মায়ের পায়ের নিচে রয়েছে চির শান্তির জান্নাত।
একজন সন্তান যখন মায়ের গর্ভে আসে তখন থেকেই মায়ের জল্পনা কল্পনা শুরু হয়,শুরু হয় তাকে ঘিরে হাজার স্বপ্ন। সন্তান ভূমিস্ট হলে একজন নারীর পূর্ণজন্ম হয়, দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর জন্ম হয় এক মায়ের।একজন নারীর স্রেষ্ঠ অর্জন হল তার মাতৃত্ব। শুরু হয় এক নতুন মায়ের গল্প,যে গল্পের নায়কা হলেন সেই মা।
অনেক সময় দেখা যায় একজন মা তার সন্তানের জন্য তার নিজের সুন্দর ভবিষ্যৎ গুটিয়ে নেয়।এমনও অনেক ডাক্তার আছেন যিনি কিনা সন্তানের কথা ভেবে নিজের প্রেকটিস ছেড়ে দেয়, অনেক মা তার ভবিষ্যৎ মাটি চাপা দেয় শুধু সন্তানের কথা ভেবে।নিজের শখ আহ্লাদ কি জিনিস ভুলে যায়,ভুলে যায় নিজের কথা।তখন দু চোখে শুধু গগণচুম্বি স্বপ্ন তার সন্তানকে ঘিরে।কিছু নিম্নবিত্ত পরিবারেচর দেখা যায় যে, মা না খেয়ে সন্তানের খাবার যোগান দিতে, দেখা যায় মা তার সব শেষ করে সন্তান কে মানুষ করতে চায়। মা এমন একটা স্নেহের ভান্ডার যা অফুরন্ত। বিশাল আকাশ যেমন পৃথিবী কে ছায়ার চাদরে আচ্ছাদিত করে, মা ঠিক তার সন্তানকে স্নেহ মমতার চাদরে জড়িয়ে রাখে।আগলে রাখে সকল জটিলতায়। ঢাল হয়ে দাঁড়িয় বিপদে।বন্ধু হয়ে দাঁড়িয় পাশে।
একজন মায়ের পরিচয় অতুলনীয়। তাকে নির্দিষ্ট গন্ডিতে আবব্ধ করে রাখা যায় না। তিনি হলেন একজন গৃহিনী,যে কিনা নিপুণতার সাথে সংসার সম্পাদন করে থকেন,করে থাকেন দিন রাত সেবা যখন তার সন্তান অসুস্থ থাকে।তিনি শিক্ষক কেননা সন্তান তার প্রথম শিক্ষা মায়ের কাছ থেকে পেয়ে থাকে,পেয়ে থাকে নিষ্টা, ন্যয়পরায়নতার শিক্ষা।
নেপোলিয়ন বোনাপার্ট এর এক উক্তি তে বলা হয়েছে যে,"তোমরা আমাকে শিক্ষিত মা দেও,আমি তোমাদের শিক্ষিত জাতি দেব। জর্জ ওয়াশিংটনের এক উক্তিতে তিনি মা সম্পর্কে আখ্যা দিয়েছেন,"আমার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী মহিলা হলেন আমার মা। মায়ের কাছে আমি চিরঋণী। আমার জীবনের সমস্ত অর্জন তারই কাছ থেকে পাওয়া নৈতিকতা, বুদ্ধিমত্তা আর শারীরিক শিক্ষার ফল।
মা হলেন সপ্নচারিনী।একজন পাইলট যেমন আকাশে উড়ার সপ্ন নিয়ে আগে বারে ঠিক মা তেমনি সন্তানকে জীবনের সকল বাধা পেরিয়ে মুক্ত জীবনের সপ্ন দেখান।সপ্ন দেখান ডানা মেলে জীবনের সাফল্য দিকে আগ্রসর হতে।একজন সন্তানের সাফল্য মানে শুধু যে সন্তান সাফল্য অর্জন করেছে তা না, সাথে অর্জিত হয়েছে একজনের মায়ের সাফল্য। সন্তান সাফল্যের পেছনে মায়ের ভূমিকা কখনো কোন ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না।সন্তানের সুখে মায়ের সুখ নিহিত থাকেন।
সন্তানরা কি আদৌ মায়ের প্রাপ্য সম্মান দিয়ে থাকে?
যদি দিয়েই থাকতো তাহলে কোন জান্নাতের টুকরার শেষ আশ্রয় বৃদ্ধাশ্রমে হতো না।দিনের পর দিন সন্তানের অবহেলা পাত্র হতে হতোনা।কোন বিজ্ঞাপনে ছাপ হতো না সন্তানের হাতে মায়ের নির্যাতনের কথা। কোন মাকে না খেয়ে রেলের ধারে পরে থাকতে হতো না।বস্তায় ভরে ফেলে আসতো না।
একজন মা একাসাথে ৪/৫ জন সন্তান পালতে পারলেও ৪/৫ জন সন্তান একজন মাকে পালতে পারেনা।নিমিষেই কি মায়ের সব ত্যাগ ভুলে যাওয়া যায়? সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে একজন মাকে ৫৭ ইউনিট ব্যাথার সহ্য করতে হয়,যেখানে ৪৫ ইউনিটে শরীরের সব হাড় ভেঙ্গে গুড়া হয়ে যায়। মায়ের ঋণ কি সত্যি শোধ করা যায়?মায়ের কি সেই জীবন ফিরিয়ে দেয়া যায়।মায়ের জন্যই সন্তান পৃথিবীর আলো দেখে,আর সেই সন্তান জন্য মায়ের জীবন অন্ধকার ছেয়ে যায়।
মা যেমন সন্তানের ভরসা স্থল,ঠিক প্রতিটি সন্তানের উচিত মায়ের ভরসার স্থল হওয়া। প্রতিটি সন্তানের কাছে মায়ের স্থান চূড়ায় যেন থাকে। কোন মায়ের স্থান যেন বৃদ্ধাশ্রম না হয়, এই হোক এবারের মা দিবসের প্রত্যাশা।
ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল মা।
হাজার বছর বেচে থাকুক মায়ের ভালোবাসা।
লেখক- হুমায়রা আনজুম শ্যামসী
শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মী
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।