শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

২৪ টাকার ধান চাল হতেই ৬৮ টাকা

মঙ্গলবার, মে ১০, ২০২২
২৪ টাকার ধান চাল হতেই ৬৮ টাকা

রাকিব চৌধুরী,

পাবনার আটঘরিয়ায় বোরো মৌসুমে ধান ক্ষেতে এবার বিভিন্ন পোকামাকড়ের আক্রমন এবং অসময়ে বৃষ্টি দেখা দেওয়ায় ধানের ফলনে প্রভাব পড়েছে। সেই সাথে বাজারে ধানের ভালো দাম না পাওয়ায় হতাশ কৃষকরা। কৃষকের প্রতি কেজি ধানে উৎপাদনে খরচ পড়ছে ২৪ টাকা, আর তা বিক্রি করছেন ২৫ টাকা করে।

আটঘরিয়া উপজেলার একদন্ত ইউনিয়নের চাঁন্দাই গ্রামের কৃষক জহির উদ্দিন বলেন, "চলতি বোরো মৌসুমে ২ বিঘা জমিতে ধান রোপন করেছিলাম। ইতোমধ্যেই ১ বিঘা জমির ধান কাটা মাড়াই শেষ করেছি আর ১ বিঘা জমির ধান কাটা মাড়াই এর কাজ ২-১ দিনের মধ্যেই শেষ হবে। জমিতে ধান লাগানোর জন্য জমি চাষ বাবদ বিঘা প্রতি খরচ ৯শ টাকা, মই দিতে ৪শ টাকা, লাল কালা সার ১ হাজার টাকা, ধান রোপন করতে শ্রমিক বাবদ ২ হাজার টাকা, ক্ষেতে ঘাস পরিষ্কার করতে ঘাস মারা বিষ ও শ্রমিক বাবদ খরচ ১ হাজার টাকা, ঘাস পরিষ্কারের পর আবার ইউরিয়া সার ২০ কেজি দিতে হয়েছে এতে খরচ ৪শ টাকা, দানাদার সার বাবদ খরচ ১৬০ টাকা, এর পর পোকা দমন করতে স্প্রে ঔষধ প্রয়োগে খরচ ২শ টাকা, ধানের গাছ বড় হলে মাজরা পোকার ঔষধ ও পচারির ঔষধ বাবদ খরচ ৩৫০ টাকা, যদিও এবারে পোকা মাকড়ের উপদ্রব বেশি থাকায় খরচ দুইবার হয়েছে তাতে করে বিঘা প্রতি ৭শ টাকার ঔষধ প্রয়োগ করতে হয়েছে।

এরপরে ধান কর্তন বাবদ বিঘা প্রতি খরচ হচ্ছে ৪ হাজার ৫শ টাকা, ধান মাড়াই বাবদ খরচ ৫শ টাকা করে। সবমিলিয়ে বিঘা প্রতি ধান উৎপাদনে খরচ হচ্ছে ১১ থেকে সাড়ে ১১ হাজার টাকা। আর বিঘা প্রতি ভেজা অবস্থায় ধানের ফলন হচ্ছে ১৫-১৬ মন। শুকাতে শুকাতে ধান ১২ মনে এসে টিকে। ধানের বাজার দর বর্তমানে মন প্রতি ৯শ থেকে ১ হাজার টাকা। তাতে করে সব খরচ মিলিয়ে ধান চাষে লাভ-খরচ সমানে সমান। বিঘা প্রতি খড় বিক্রি হবে ১ হাজার ৫শ টাকা করে। এই খড়টাই যা লাভ। 

আটঘরিয়ার ষাটগাছা গ্রামের কৃষক সোবাহান হোসেন বলেন, "ধান চাষে কোন লাভ নেই। ধানি জমিতে এখন সব গম, পেয়াজ, রসুন লাগায়। ধানের তো দামই নেই। এত খরচ আর কষ্ট করে দুই পয়সা লাভই যদি না হয় তাহলে পরিবার, বউ ছেলে মেয়ে নিয়ে খেয়ে পরে বাঁচব কি করে?"

কাওসার আলম একটি স্বায়ত্তশাসিত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের অতিরিক্ত বিভাগীয় প্রকৌশলী। তার বাসার চাল শেষ হয়ে যাওয়ায় তিনি বাজার থেকে ২৫ কেজি ভরের চালের বস্তা কিনেছেন ১ হাজার ৬শ টাকা দিয়ে। তার ক্রয়কৃত প্রতি কেজি চালের মূল্য পড়েছে ৬৪ টাকা।

একদন্ত ইউনিয়নয়ের মায়ের দোয়া মিলের সত্বাধিকারী বারেক ইসলাম জানান, "বর্তমানে বাজারে ধানের দাম রয়েছে সাড়ে ৯শ থেকে ১হাজার টাকা করে। তাতে করে আড়তদারদের নিকট থেকে আমাদের ধান কিনতে হচ্ছে ১ হাজারে ৫০ টাকা করে, সাথে ২০ টাকা রয়েছে পরিবহন খরচ আড়তদারদের নিকট থেকে মিল পর্যন্ত ধানগুলো পৌছাতে। প্রতি মন ধান সিদ্ধ-শুকানো করতে ২৫ টাকা, ভাঙানো বাবদ ১৫ টাকা করে দিতে হবে শ্রমিকদের। এর পরে মন প্রতি মিস্ত্রিকে দিতে হবে ১০ টাকা করে। সাথে মন প্রতি বিদ্যুৎ বিল রয়েছে ২০টাকা, আনুসাঙ্গিক অন্যান্য খরচ মিলিয়ে আমাদের প্রতি মন ধানে খরচ পড়ে ৯০ টাকা করে"। 

তিনি আরো জানান, "সরকার যে মাপকাঠি হিসেব করে ধান ক্রয় করে তাতে তাদের এক মন ধানে ২৮ কেজি চাল নামবে। কিন্তু আমরা বর্তমানে বাজার থেকে যে হিসেবে ধান ক্রয় করি তাতে করে আমাদের এক মন ধানে সর্বোচ্চ ২৭ কেজি করে চাল নামবে। তাতে করে সব খরচ মিলিয়ে আমাদের এক কেজি চালের উৎপাদন খরচ পড়ে ৪৩ টাকা ৯২ পয়সা বা ৪৪ টাকা। এর সাথে ওজন, শ্রমিক পরিবহন মিলিয়ে ৪৫ টাকার মতো পড়তা পড়ে। যা বাজারে একই দামে বিক্রি করা হয়। তবে চালের যে গুড়া বা খুদ বাহির হয় তাই দিয়ে কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া হয়। এছাড়া চালের উৎপাদন খরচ হিসেব করে খুব একটা লাভ নেই"।

চাঁন্দাই গ্রামের আরেক কৃষক আজাদ হোসেন বলেন, "ব্যাপারীরা আমাদের কাছ থেকে ঠিকই কম দামে ধান কিনে কিন্তু অফিসার রা যেই দরে চাল কিনে সেই দামের অর্ধেকও আমরা পাই না।" 

কিন্তু তাদের কথার সাথে বাজার দরের কোন মিল পাওয়া গেলো না। সারসংক্ষেপে যদি দেখা হয়, কেজি প্রতি ২৫ টাকা দরে বিক্রি করা কৃষকের ধান, চালে রুপান্তরিত হয়ে ভোক্তার কাছে পৌছাতে তার দাম প্রায় তিনগুন বেড়ে হয় ৬৫-৭০ টাকা হয়।
 
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ।


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল