সুরে শিহরিত
- শেখ ফাহমিদা নাজনীন
ভোরবেলা রোজ বাদাবন জুড়ে ঝনঝনিয়ে বাজে,
খোঁয়াড়ে, খামারে, খিড়কি দুয়ারে সুবহে সাদিক সাজে।
ঝনঝন সুরে চনমন করে, ঘুমভরা মৌতাত,
নিমেষে পালায় এক ঝটকায় আসলে রাঙা প্রভাত।
শুনেছি তখন আসমান জুড়ে কবুলিয়তের কাল,
ফেরেশতাদের সম্মেলনে শান্তির করতাল।
দিকে দিকে ছোটে ভোরের রেওয়াজ, প্রভুর নামটি ধরে,
বনের পাখিটি, মোরগ ঝুঁটিটি ডেকে ওঠে সেই সুরে।
গাছ, লতা-পাতা, অবলার কথা, দরাজ গলার গান,
বাদ্যবিহীন সেই সুর, গানে জাগে অচেতন প্রাণ।
চারিদিকে যেন সাড়া পড়ে যায় সুরের আলিঙ্গনে,
মৃদাঙ্গ, ঢোল, তবলার বোল নগণ্য সেইখানে।
সারা দিনরাত হাওয়ার বাঁশিতে, যে মধু গড়িয়ে পড়ে,
ঘূর্ণিঝড়ের মহাতাণ্ডবে, তারই মহারূপ ওড়ে।
শঙ্খ বাজাও, ঢাকে কাঠি দাও, বীণা নিয়ে বস ধ্যানে,
যেখানে যা আছে বাদ্যযন্ত্র, জড়ো করো একখানে।
তারপর যত বাজনদারকে একসাথে করো মেলা,
পাহাড়ি নদীর বাঁধভাঙা সুরে জমুক লড়াই-খেলা।
হাজারটা নয়, একটা কোকিল, ডেকে আন সেইখানে,
নিয়ে যাবে মন, অমৃতভুবন, রবের সন্নিধানে।
মেঠো বটতলে, প্রাণমন খুলে, দাঁড়াওতো সন্ধ্যায়,
দেখবে, সেখানে কি যে সুর বাজে পাখিদের জলসায়।
পৃথিবীর যত সারেঙ্গী আছে, সেতার বা তানপুরা,
বাদ্যবিহীন পাখির মেলায় হারবে সেও গোহারা।
চাষির খোয়াড়ে লাল রঙা ঝুঁটি ছোট্ট মোরগ গায়,
তোমাদের ঐ হারমনিকাটা নস্যি সে তুলনায়।
একবার যেও বুনোজঙ্গলে, পাতা ঝরানোর দিনে,
শুনতে পাবেই খসখসে সুর, শীতের নিমন্ত্রণে।
শীতের হাওয়ায় পা'দুটি রেখো শুকনো মাটির পরে,
শুনবে পাতার মর্মরে গান, শ্রান্ত মনের ঘরে।
এসব গানের স্বরলিপি নেই, অযথা গানের খাতা,
এই সুর আসে প্রভু অভিলাষে, প্রকৃতির গায়ে পাতা।
মিছে তোমাদের বেহালার সুর, সারিন্দা, সন্তুর,
নূপুর, ঘুঙুর, কাঁসরঘণ্টা, পাখোয়াজ, খঞ্জর।
সব ফেলে দাও, দূরে ঠেলে দাও, বাতাসে মেলাও গলা,
বাদ্যবিহীন আযানের সুরে শিহরিত হোক বেলা।
শেখ ফাহমিদা নাজনীন
২৫ মার্চ ২০২২