মামুদুল হাসান, কুবি প্রতিনিধি:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) চলছে ক্লাস, পরীক্ষা, একাডেমিক কার্যক্রম কিংবা লাইব্রেরিতে মনযোগী পড়ালেখা। একই সাথে ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকা ও সড়কে উচ্চ শব্দের মাইকে বেজে চলছে, 'অমুক ভাইয়ের মার্কা তুমুক মার্কা' '১৫ তারিখ সারাদিন অমুক ভাইকে ভোট দিন' এমন হরেক রকম শ্লোকে চলছে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের (কুসিক) নির্বাচনী প্রচারণা। সাথে বিভিন্ন গানের নির্বাচনী রিমিক গান। এসব গান উচ্চ শব্দে দিনভর বেজে চলছে তো চলছেই!
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ২৪ নং ওয়ার্ডের সালমানপুর এলাকায় অবস্থিত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। এবারের কুসিক নির্বাচনে ৬ জন মেয়র প্রার্থীসহ ২৪ নং ওয়ার্ড থেকে ৬ জন কাউন্সিল প্রার্থী এবং ৪ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সবমিলিয়ে ১৬ জন প্রার্থীর উচ্চ শব্দের নির্বাচনী প্রচারণা চলে প্রতিদিন বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায়। দিনভর এমন উচ্চ শব্দের নির্বাচনি প্রচারণায় অতিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী শিবম সাহা দিবস উচ্চ শব্দের মাইকিং ও শব্দ দূষণের ভোগান্তি সম্পর্কে বলেন, একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের পাশ দিয়ে সারাদিন যদি এভাবে মাইক বাজিয়ে প্রচারণা চালানো হয়,পড়াশোনাতো দূরে থাক রুমে সুস্থভাবে বসে থাকাও বড় চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে। আর সেটা যদি সারাদিন সকাল-দুপুর-বিকাল পর্যন্ত চলতে থাকে সেটা কেমন লাগে একটা সাধারন/অসুস্থ মানুষের কাছে কেও বলতে পারেন? অনেকের পরীক্ষা থাকে। সাউন্ড এতোটাই তীব্র যে দরজা জানালা বন্ধ করেও একপ্রকার মাথা ধরে যায়!
তিনি আরো বলেন, শুধু তাই নয় এই রাস্তা দিয়ে সারাদিন দ্রুত গতিতে গাড়ি চলে, হর্ন বাজায় যা রীতিমতো অসহ্যকর হয়ে দাড়িয়েছে। এতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যদি আপনাদের নূন্যতম কোন ক্ষমতা থেকে থাকে সেটা কাজে লাগিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের এই ভোগান্তিগুলোর যদি কোন স্থায়ী সমাধান দিতে পারেন কৃতজ্ঞ থাকব।
বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকা ও সড়কে উচ্চ শব্দে মাইকিং ও শব্দ দূষণ প্রতিরোধের জন্য প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছে কিনা জানতে চাইলে প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, আমি পুলিশ প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের সাথে এই বিষয়ে কথা বলেছি। যেহেতু নির্বাচন কমিশন থেকে রাত আটটা পর্যন্ত মাইকিংয়ের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো নিয়ম আছে তাই এটা প্রার্থীরা করতে পারবে। নির্বাচন যেহেতু জনগণের সাথে জড়িত তাই প্রশাসন এখানে কিছু করতে পারবে না।
তিনি আরো বলেন, আমি শিক্ষার্থীদের সমস্যার কথা বিশেষভাবে বলেছি তাদেরকে। তারা আমাকে বললো, যেহেতু ক্যাম্পাসের বাইরে মাইকিং করছে সুতরাং আমরা এই মুহূর্তে তাদেরকে বাঁধা দিতে পারবো না। তবুও আমি উপাচার্য স্যারের সাথে কথা বলে এই সমস্যাটা নিরসনের কোন ব্যবস্থা নেওয়া যায় কিনা চেষ্টা করবো।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহেদুন্নবী চৌধুরী বলেন, নির্বাচনী আচরণ বিধি অনুযায়ী দুপুর দুইটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত প্রার্থীরা মাইক্রোফোন দিয়ে বা অন্য যেকোনভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারবে। যেহেতু নির্বাচনের আইনেই বলা আছে, আমি প্রার্থীদের প্রচারণায় বাঁধা দিতে পারবো না।
তিনি আরো বলেন, আমি প্রার্থীদের সাথে কথা বলে চেষ্টা করবো যেন বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কম যায় এবং সাউন্ড কমিয়ে যেন প্রচার-প্রচারণা চালায়। তবে এটা প্রার্থীদের মানার উপর নির্ভর করে। তাদেরকে জোর করার সুযোগ নেই যেহেতু আইনে অনুমোদিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনও শিক্ষার্থীদের সমস্যার বিষয়টি জানিয়ে প্রার্থীদের সাথে কথা বলে দেখতে পারে।
এমআই