ডাঃ তাজকেরা সুলতানা চৌধুরী:
আমাদের দেশের অধিকাংশ লোকই মনে করে, টক জাতীয় ফল খেলে ঘা পেকে যায়। দাদি-নানির কাছ থেকে শোনা এই তথ্যের ওপর বিশ্বাস এত মজবুত যে সার্জন বলে গেলেও রোগী সেটি বিশ্বাস করতে চায় না।
আসলে টক জাতীয় ফল ঘা শুকাতে সাহায্য করে। টক জাতীয় ফলে থাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলের মধ্যে রয়েছে কাগজিলেবু, কমলালেবু, আমলকি, কামরাঙ্গা, জাম্বুরা ইত্যাদি। অপারেশনের পর ভিটামিন সি খুবই প্রয়োজন। ভিটামিন সি সংযোজক কলার কোলাজেন তৈরিতে সাহায্য করে। ভিটামিন কোলাজেনে অবস্থিত প্রোলিনের সঙ্গে পানির সংযোজন ঘটিয়ে হাইড্রোক্সিপ্রোলিন তৈরি করে। এভাবেই কোলাজেনের উৎপাদন সহজ করে কাটা বা ক্ষতস্থানকে মাংসপেশির তন্তুতে ভরাট করে ফেলে এবং ঘা শুকিয়ে যায়। কাজেই দেখা যাচ্ছে, টক জাতীয় ফল খেলে ঘা পাকে না। বরং এটি ঘা শুকাতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে রোগীরা ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খান না। কিন্তু ভিটামিন সি ট্যাবলেট দিলে কিন্তু ঠিকই খান। সুতরাং ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে অপারেশনের পর ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার থেকে নিজেকে বঞ্চিত করে দ্রুত সেরে ওঠার প্রক্রিয়াকে ধীর করার কোনো মানে হয় না। অন্যদিকে যেসব কারণে অপারেশনের ক্ষত পাকতে পারে বা সংক্রমণ হতে পারে সে বিষয়ে সচেতন পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে সচেষ্ট হতে হবে। এসব পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে বেশি লোকের ভিড় না করা, আর রোগীর শুশ্রূষাকারীর যথার্থভাবে পরিচ্ছন্ন থাকা।
অস্ত্রোপচারের পর শুধু টকজাতীয় ফল নয়, আরো অনেক খাবার নিয়েই কুসংস্কার ও ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত রয়েছে। যেমন অনেকেই মনে করেন, অস্ত্রোপচারের রোগীকে দুধ-ডিম খাওয়ানো যাবে না। দুধ-ডিম খাওয়ালে অস্ত্রোপচারের জায়গায় পুঁজ হবে। এই কথাটির বক্তব্য ঠিক এমন যেন দুধ-ডিম থেকেই পুঁজ তৈরি হয়। দুধ-ডিমের মিশ্রণ অনেকটা পুঁজের মতো বলেই হয়তো এ ধারণার অবতারণা হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে দুধ-ডিম কখনো যদি পুঁজ হতো, তাহলে দুধ-ডিমকে পুষ্টি বিজ্ঞানীরা উৎকৃষ্ট খাবার বলে উল্লেখ করতেন না। আর দুধ-ডিম খেলে যদি পুঁজ হতো, তাহলে তা সব সময়ই হতো, শুধু অস্ত্রোপচারের পর কেন হবে? শরীরের ক্ষতস্থানে কিংবা কোনো স্থানে পুঁজ হয় ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণের কারণে। আমাদের চারপাশে রয়েছে নানা ধরনের রোগ-জীবাণু। এসব রোগ-জীবাণু সব সময়ই শরীরকে আক্রমণের চেষ্টা করে যাচ্ছে। শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এসব ব্যাকটেরিয়াকে শরীরে ব্যাপকভাবে বাসা বাঁধতে দেয় না। যখনই কোনো কারণে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে ব্যর্থ হয়, তখনই শরীরে তা বাসা বাঁধে এবং ইনফেকশন করে পুঁজ তৈরি করে। পুঁজ মানেই হচ্ছে শরীরের নষ্ট কোষ। ক্ষতস্থান মানেই কাটা উন্মুক্ত স্থান। এসব স্থানে জীবাণু সহজেই বাসা বাঁধতে পারে। এটি সাধারণ সুস্থ সুরক্ষিত ত্বকের ওপর কখনো সম্ভব হয় না। তাই অস্ত্রোপচারের পর ক্ষতস্থানে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি থাকে।
অনেক ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের সময় অসাবধানতাবশত সংক্রমণ হতে পারে। কাজেই ইনফেকশন বা ক্ষতস্থান পুঁজ হওয়ার জন্য মূলত দায়ী জীবাণু। এ ক্ষেত্রে ডিম, দুধের কোনো ভূমিকা নেই। ডিম, দুধ বরং শরীরে প্রোটিনের জোগান দিয়ে শরীরকে সুস্থ রাখে এবং ক্ষতস্থানে নতুন কোষ নির্মাণে সাহায্য করে। সুতরাং অস্ত্রোপচারের পর রোগীকে ডিম-দুধ থেকে বঞ্চিত করা ঠিক নয়। তথ্য সূত্র ও ছবি ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
লেখক: ডাঃ তাজকেরা সুলতানা চৌধুরী
সহকারী অধ্যাপক, সহীদ সহরওয়ার্দ্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।