দুলাল বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি:
এমন দিনে তারে বলা যায়, এমন ঘনঘোর বরিষায়’। বাংলা কবিতায় মতো এভাবেই বৃষ্টিস্নাত সজীবতার রূপ নিয়ে হাজির হয়েছে বর্ষা। রূপময় ঋতু বর্ষার যেন মেঘবতী জলের দিন। ষড়ঋতুর এ দেশে আষাঢ়-শ্রাবণ এই দুই মাস বর্ষা ঋতু। কিন্তু দিন দিন প্রকৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে চিরচেনা বর্ষার স্মারক কদম ফুল। গোপালগঞ্জের গ্রাম কিংবা শহরের সর্বত্রই বর্ষার আগমনীতে নিজেদের মেলে ধরতো আপন মহিমায় কদম ফুল।
কিন্তু কদম গাছ এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। কদম ফুল না ফুটলে যেন বৃষ্টি ঝরে না, যে কদমকে নিয়ে এতো কিছু আষাঢ়ের বার্তবাহক সেই প্রিয় ফুলের গাছ হারিয়ে যেতে বসেছে। কদম এখন যেন একটি দুর্লভ ফুলের নাম। কদমের শুভ্ররাগে হৃদয় রাঙিয়ে নেওয়ার সুযোগ এখন শহুরে লোকের কমই আছে। শুধু শহর নয় গ্রাম থেকেও হারিয়ে যাচ্ছে কদম।কদম ফুলকে বলা হয়ে থাকে বর্ষার বিশ^স্ত দূত। কাঠফাঁটা রোদে মানুষের হাঁসফাঁস করা গরমে অঝোর ধারায় বৃষ্টি-বর্ষণের জন্য প্রতীক্ষা বাসা বাঁধছে। বর্ষা মানেই গুচ্ছ গুচ্ছ কদমফুলের উপস্থিতি। বর্ষা মানে কদমফুলের মতই তুলতুলে নরম বৃষ্টির রিনিঝিনি শব্দের ধ্বনি।
বিশিষ্ট কবি ও সাংবাদিক রবিন্দ্রনাথ অধিকারী বলেন, মূলত কদম নামটি এসেছে সংস্কৃত নাম কদম্ব থেকে। কদম্ব মানে হলো যা বিরহীকে দুঃখী করে। বৃত্তপুষ্প, সর্ষপ, ললনাপ্রিয়, সুরভী, মেঘাগমপ্রিয়, মঞ্জুকেশিনী, কর্ণপূরক, পুলকি এসবও কদম ফুলের নাম। প্রাচীন সাহিত্যের একটি বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে কদম ফুলের আধিপত্য। মধ্যযুগের বৈষ্ণব সাহিত্যেও কদম ফুলের সৌরভমাখা রাধা-কৃষ্ণের বিরহগাথা রয়েছে। গীতাতেও আছে কদম ফুলের সরব উপস্থিতি।
ডাক্তার অমৃত লাল বিশ্বাস বলেন, কদম ফুল শুধু বর্ষায় প্রকৃতির হাসি নয়, এর রয়েছে নানা উপকারিতা। কদম গাছের ছাল জ্বরের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। কদম গাছের কাঠ দিয়ে দিয়াশলাই তৈরি করা হয়ে থাকে। জেলা কালচারাল অফিসার মামুন বিন সালেহ বলেন, কদম ছাড়া বর্ষা বেমানান। বর্ষায় প্রকৃতির সতেজ-সজীব রূপ-রস যুগ যুগ ধরে মানুষের হৃদয় জয় করে এসেছে। প্রকৃতির ঐতিহ্য রক্ষায় সরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে অন্য গাছের পাশাপাশি কদম গাছ রোপণ করা প্রয়োজন।
গোপালগঞ্জ জেলা কৃষি অফিসের উপ- পরিচালক ড. অরবিন্দ কুমার রায় বলেন, মানুষ আধুনিক যুগে প্রাকৃতিক সৌদর্য্যকে ভুলে কৃত্রিম সৌদর্য্য তৈরি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ায় বাঙালি সংস্কৃতি ভুলতে বসেছে ফলে হারিয়ে যাচ্ছে দেশীয় গাছগাছালি ও ফলমুল।
লাভের অঙ্কের হিসাব মিলানোর জন্য মানুষ আর তার বাড়ির আঙিনায় কদম ফুলের গাছ লাগাতে চাইছে না। ‘কদম’ গাছের জায়গায় এখন তারা মেহোগনি, রেইন্ট্রিসহ নানান দামি দামি কাঠের গাছ রোপণে করছেন। এ অবস্থা বিরাজমান থাকলে পরিবেশ বিপর্যয়ের এ অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য সরকার পাশাপাশি সামাজিকভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। জলবায়ু পরিবর্তনে বর্ষা যদিও বা পথ হারিয়েছে! তবু বর্ষার আগমনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় বলতেই হয়, ‘বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর, আউশের ক্ষেত জলে ভরভর, কালি-মাখা মেঘে ওপারে আঁধার ঘনিয়েছে দেখ চাহি রে। ওগো, আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে’।
সময় জার্নাল/এলআর