এহসান রানা, ফরিদপুর প্রতিনিধি:
ফরিদপুরে বন্যার প্রভাব শুরু হয়েছে । ভারি বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে ফরিদপুরের প্রমত্তা পদ্মার পানি অব্যাহত বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে ফরিদপুরের চর অধ্যুষিত নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে।
বিপদসীমার ১ মিটার নিচে দিয়ে পদ্মার পানি প্রবাহিত হলেও আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে বিপদসীমা অতিক্রম করার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
এতে ফরিদপুরের নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হতে শুরু করেছে। গত ৪৮ ঘন্টায় পদ্মানদীর পানি গোয়ালন্দ পয়েন্টে ৫৭ সেন্টিমিটার বেড়েছে। যদিও এখন তা বিপদ সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির যে হার তাতে দু একদিনের মধ্যে বিপদসীমা অতিক্রম করার শংকা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে গেলে, ফরিদপুর সদরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের আইজুদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী এলাকার জামাল খান, শোয়েব আলী, তরুন ফকির জানান, গত ৮/৯ দিন ধরে পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে তিনদিন যাবৎ পদ্মার পানি হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি পেলে কয়েকদিনের মধ্যে অনেক বাড়িতে পানি উঠে যাবে।
কাইমুদ্দিন ডাঙ্গী এলাকার বৃদ্ধা মজিরন বেগম জানান, "দুদিন ধইরা যেমন কইরা পানি বাইড়্যা বাইস্যা অ্যয়ে যাচ্চে তাতে বয়্যে (ভয়ে) আছি। কি থ্যাইকা কি অ্যয়ে (হয়ে) যায়।" খুব ঝামেলায় আছি ।
ফরিদপুরের চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মির্জা সাইফুল ইসলাম আজম জানান, হঠাৎ পানি বৃদ্ধিতে আমার ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষের বাদাম খেত তলিয়ে গিয়েছে। এভাবে পানি বৃদ্ধি পেলে কয়েকদিনের মধ্যে বাদামের সাথে সাথে এ ইউনিয়নের পাট , সবজি ও তিল ক্ষেত তলিয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের কমপক্ষে সাড়ে পাচশত মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন ।
ফরিদপুর জেলা সদরের নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাকুজ্জামান মুস্তাক জানান, ২/৩ দিন ধরে আমার ইউনিয়নে হু হু করে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত দুদিনে প্রায় ১ ফুটের অধিক পানি বেড়েছে। এই ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে বসবাসকারী প্রায় ৫০০ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বাদামসহ অন্যান্য ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে এখানকার কৃষকদের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা জানান, ফরিদপুরে হঠাৎ বন্যার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিনই ফরিদপুরের পদ্মা, মধুমতি ও আড়িয়ালখাঁর পানি বাড়ছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় ৫৭ সেন্টিমিটার পদ্মার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরো জানান , ফরিদপুরে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যদিও পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমার ১ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দীপক কুমার রায় বলেন, ত্রাণ বিতরণের মতো বন্যা এখনও হয়নি। তবে, বন্যা মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের ব্যপক প্রস্তুতি রয়েছে। ইতোমধ্যে ফরিদপুরের ৯ টি উপজেলার ইউএনও-কে ৭টন করে ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আমাদের ১৫০ টনের অধিক ত্রাণ মজুদ রয়েছে। আশা করি, বন্যা মোকাবেলায় তেমন কোনো সমস্যা হবেনা।
সময় জার্নাল/এলআর