সোমবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪

স্বপ্নই রয়ে গেল, বাবাকে দেখার স্বপ্ন !

রোববার, জুন ১৯, ২০২২
স্বপ্নই রয়ে গেল, বাবাকে দেখার স্বপ্ন !

বাবা শব্দটি অনেক ছোট্ট হলেও এর ব্যাপকতা বিশাল। অপরিমাপ যোগ্য। বাবা মানেই এমন এক ব্যক্তি, যিনি বিভিন্ন চাপ সামলিয়ে সন্তানদের আগলে রাখেন ভালোবাসায়। তার ভালোবাসাটা কিছুটা সুপ্ত। কিন্তু অনেক গভীর। সন্তানের সাথে পিতা-মাতার সম্পর্কের কোন স্বার্থ লুকায়িত থাকে না।

বাবাহীন একজন ছেলের জীবন যে কতটা বিয়োগান্ত হয়, তা হয়তো যাদের বাবা বেঁচে আছেন তারা কখনোই বুঝতে পারবে না। প্রতিটি মুহূর্তে মনে হয় সত্যি আমি বড়ই একা। একটু ভালোবাসা দেওয়ার, সান্ত্বনা দিয়ে সামনে চলার প্রেরণা জোগানোর মানুষটি আজ বেঁচে নেই। বাবাকে ছাড়া বাঁচতে পারব এটা কখনো কল্পনা করিনি। কিন্তু বাস্তবতা বড়ই কঠিন। আমার বাবা মো. আলমাস আলী গত বছর ২৯ মে (২০২১)

শনিবার দুপুরে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে কাঁদিয়ে গেলেন আমাদের।(ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। এখন থেকে এক বছর, দুই বছর করেই দিন চলে যাবে বাবাকে ছাড়া। এই পৃথিবীর কত ব্যস্ততা অথচ বাবাকে প্রাণভরে বাবা বলে ডাকতে না পারার ৩৬৫দিন কতটা নিঃস্ব হয়ে যাওয়া; এ কেবল জানে বাবাহীন সন্তানেরা। বুকের ভেতর হাহাকার করে কেঁদে ওঠা প্রতিটা স্পন্দন জানে বাবা ছাড়া পৃথিবীটা কতটা কঠিন, যন্ত্রণার, হাহাকারের, অসহায়ত্বের।

একেকটা দিন বড় একা লাগে, বাবার স্পর্শটুকু, বাবার সেই মায়াভরা ডাক অথবা মাথায় হাত ভুলিয়ে দেয়া। বাবা থাকতে ভাবতাম, বাবা যদি না থাকেন, তবে আমি কিভাবে থাকবো! কেটে যাচ্ছে একেকটি দিন, মাস আর বছর–বাবা নেই, আছে বাবার অনেকগুলো স্মৃতি, অনেকগুলো কথা, যা ভুলতে পারিনা, ভোলা যায়না।

আমার দেখা সাধারণে অসাধারণ মানুষদের একজন আমার বাবা। সহজ-সরল অনাড়ম্বর জীবন যাপন করা সৎ ও কর্মনিষ্ঠ এই মানুষটি আমার জীবনের আদর্শ। বর্তমান পৃথিবীতে যখন এত কষ্ট, রোগ ও শোক, তখনও বাবা আমার এগিয়ে যাওয়ায় অব্যক্ত শক্তি।

আমার বাবা আমার কাছে বিশেষ এক আবেগ, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, গর্ব। সেই গৌরব হারানোর বেদনা পৃথিবীর কোন কিছুর বিনিময়েই প্রশমিত হবার নয়। এ এক অবর্ণণীয় শূন্যতা, যা কেবল মিশে আছে হৃদয়ের রক্তক্ষরণে। বাবা স্বশরীরে বেঁচে নেই, তবু বেঁচে আছেন আমাদের মাঝে প্রতিমুহূর্তে। আমাদের ভালোর জন্য বাবা জীবনের প্রায় সবকিছুই নির্দ্বিধায় ত্যাগ করেছেন। কখনো নিজেকে ভালো রাখার চিন্তা করেন নি। বাবার চোখেই আমরা দেখেছি এই পৃথিবীর রূপ, রং ও আলোর দর্শন। বাবা শাশ্বত, চির আপন, চিরন্তন।

আমার জীবনে যদি বলি প্রাপ্তি তবে তা হলো – বাবা আমাদের মাঝে সততার বীজ বুনে দিয়েছিলেন। শিখিয়েছিলেন সততার চেয়ে নেই কিছু মহান এই পৃথিবীতে। বাবাই আমাদের শিখিয়েছেন কীভাবে মাথা উঁচু করে পৃথিবীতে টিকে থাকতে হয়।

২০২১ সালের  মে মাসের শুরুতেই কোভিড-১৯ মহামারীর করোনাকালে আমার বাবা মরণব্যাধী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তখন পুরো স্পেন করোনার মহামারী রূপ। আমরা হোম কোয়ারেন্টিন থেকে প্রতিদিন ভিডিও কলে কথা বলাই ছিল একমাত্র ভরসা। যখন ভিডিও কলে বাবার সাথে কথা হতো তখন বাবা একটি কথাই বলতেন বাবা তুমি দেশে আসো আমি তুমাকে দেখবো। আমি ও বাবাকে দেখার জন্য আকুল হয়ে উঠছিলাম।

বাবা যখন মরণব্যাধী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে শরীরের একটা অংশ কিছুটা অবশ হয়ে গেলো, বাবা তখন হাঁটতে ভুলে গেলেন। বাবাকে তখন আমার ভাই বোনেরা মিলে আবার হাঁটতে শেখাতে লাগলো বাচ্চাদের মত। ঠিক যেমন বাবা আমাদের শিখিয়েছিলেন। আসলে এর পর থেকেই বাবা হয়ে গেলেন আমাদের সন্তানের মত। বাবাকে মুখে তুলে খাওয়নো এবং গোসল করিয়ে দিতো আমার ভাই বোনেরা। আমি প্রতিনিয়ত এসব দৃশ্য দেখতাম ভিডিও কলে। আমার ও ইচ্ছা জাগতো আমি ও বাবাকে মুখে তুলে খাওয়াবো, গোসল করিয়ে দিবো, হাটবো এবং বাবাকে আলিঙ্গন করে বাবার গায়ের ঘ্রাণ নিজের শরীরে মেখে নিবো। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস আমার ভাগ্যে তা জোটেনি। তখন প্রচন্ড উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় কেটেছিলো প্রতিটা সেকেন্ড-প্রতিটা মিনিট। বাবার কি হবে? বাবা সুস্থ হয়ে উঠবেন তো? বেঁচে থাকলে সুস্থ হবেন তো আগের মত? করোনা পরিস্তিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে দেশে যাবো এবং বাবাকে সুস্থ করে তুলবো।আমি তখনো আশাবাদী কারণ আল্লাহ সব পারেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন-স্বপ্নই রয়ে গেল। 

বাবার মৃত্যুর এই ১বছরে অনেক কিছুই পাল্টে গেছে। আমি ও দেশে গিয়ে বাবার কবর জিয়ারত করে আসলাম গত এপ্রিল মাসে। বাবা যদি জানতেন তাঁর ছেলে দেশে আসছে তিনি কতই–না খুশি হতেন ! হয়তো খুশিতে আমাকে একবার জড়িয়ে ধরতে চাইতেন! যদিও এটা আর কখনো সম্ভব হবে না। তবে আমি আজও বাবার স্মৃতিগুলো আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছি। বাকি জীবনের জন্য খুঁজে পাচ্ছি আত্মবিশ্বাস।

মনে অনাবিল আনন্দ আর গর্ব নিয়ে বেঁচে থাকি এমন বাবার সন্তান হতে পেরে। বাবা ছিলেন একজন সৎ ও ভাল মানুষের সবচেয়ে ভাল উদাহরণ। বাবার সবচেয়ে বড় গুন হল, তিনি মানুষকে খুব ভালবাসতেন এবং বিশ্বাস করতেন। যেকোন মানুষকে ভালবাসতেন,কাছে ডাকতেন পরম স্নেহ মমতা নিয়ে। কখনো কাউকে ছোট করে দেখতেন না। বাবা আজীবন শুধু মানুষের উপকার করতে চাইতেন। সেইসব মানুষের অবারিত ভালবাসায় বাবাকে সিক্ত হতে দেখেছি।

 বাবার মৃত্যুর পর কত শত মানুষ বাবার জন্য কান্না করেছে, আমাদেরকে জানিয়েছে নীরবে নিভৃতে বাবা সব সময় মানুষের ভালো চাইতেন। সেই পথে চলতে আমাদের বাবা অদৃশ্য এক ছায়া হয়ে থাকেন আমাদের সাথে। অনেকদিন হয় কেউ ডাকে না আমায় প্রিয় নাম ধরে, কেউ বলেনা বাবা তুমি কবে আসবে দেশে?

পরম স্নেহে পরশে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়ার কেউ নেই আজ। তবু আমার বাবার মতো এমন অসংখ্য বাবা বেঁচে আছেন তাদের সন্তানদের কর্মে-ভাবনায়-অনুপ্রেরণায়। জানি বাবা দূর আকাশের নক্ষত্র হয়ে আমাদের দেখে প্রাণভোলানো সেই হাসি দেবেন। যে হাসি আরো একটিবার দেখার জন্য আকুল হয়ে আমাদের প্রাণ কাঁদে।
 
আমাদের বাবাসহ এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়া প্রত্যেক বাবাকে যেন মহান আল্লাহ তালা জান্নাতবাসী করেন। ‘হে আমার রব! তাঁদের প্রতি দয়া করো যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাদের প্রতিপালন করেছিলেন।’ আমীন।

কবির আল মাহমুদ, 
(মাদ্রিদ)স্পেন। Email- kabiralmahmud02@gmail.com

সময় জার্নাল/এলআর


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল