মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করলেন নিজে টোল দিয়ে। সড়কপথে সরাসরি যুক্ত হয়েছে দক্ষিণসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯ জেলা।

পদ্মাকে ঘিরে দুই পারে নতুন আলোকিত ভোর

শনিবার, জুন ২৫, ২০২২
পদ্মাকে ঘিরে দুই পারে নতুন আলোকিত ভোর

সময় জার্নাল ডেস্ক: স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধন শেষে গতকাল দুপুরের পর মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়িতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় জনতার উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান তিনি, যখন-তখন পদ্মা নদী পাড়ি দিতে পারবে মানুষ।গতকাল শনিবার স্বপ্নের


পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে যোগাযোগের নতুন অধ্যায় শুরু হলো। ঢাকাসহ পুরো দেশের সঙ্গে যুক্ত হলো দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯ জেলা। এদিন বেলা ১১টা ৪৮ মিনিটে শুরুটা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর বহরে থাকা ১৮টি যানবাহনের জন্য ১৬ হাজার ৪০০ টাকা টোল তিনি নিজ হাতেই দেন। প্রধানমন্ত্রী নিজের গাড়িবহর নিয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে খোলেন যোগাযোগের দ্বার।


আজ রোববার ভোর থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে সাধারণ যানবাহন চলাচল করতে পারবে।

প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে টোল আদায়কারী ছিলেন তানিয়া আফরিন। তাঁর পরিবার পদ্মা সেতু নির্মাণে জমি দিয়ে সহায়তা করেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে চাকরি পেয়েছেন তিনি। এভাবে কেউ জমি দিয়ে, কারও মেধায়, কেউ শ্রমিক হিসেবে শ্রম দিয়ে প্রায় সাড়ে সাত বছরের চেষ্টায় পদ্মা সেতু দুই পারের সেতুবন্ধ তৈরি করেছে।


প্রধানমন্ত্রী ফলক উন্মোচন করে গাড়িবহর নিয়ে জাজিরার দিকে যাওয়ার সময় সেতুর মাওয়া প্রান্তে ভিড় করে প্রচুর মানুষ। তাদের সেতুতে ওঠার অনুমতি ছিল না। কিন্তু কেউ বাধা মানেনি। ক্ষণিকের সুযোগ পেয়ে হুড়মুড়িয়ে সেতুতে উঠে পড়ে উৎসুক জনতা। অবশ্য মূল সেতু পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই তাদের আটকে দেওয়া হয়। অবশ্য যতক্ষণ সুযোগ, ছিল তারা নেচে, গেয়ে ও ছবি তুলে আনন্দ করে। তাদেরই একজন মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগরের বাসিন্দা আশিকুর রহমান। পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আশিক বলেন, জমি অধিগ্রহণের সময় মনে হয়েছে কবে, কখন সেতু হবে, এর কোনো ঠিক নেই। 


পাইলিং, পিলার ওঠার পর যখন স্প্যান বসল, তখনই স্বপ্ন ধরা দিতে শুরু করে। বাকি কাজও শেষ হয়ে যায়। ছিল শুধু আনুষ্ঠানিকতার অপেক্ষা। সেটারও পূর্ণতা পেল। রোববার গাড়িতে চড়ে সেতু পাড়ি দেবেন বলে জানান তিনি।যে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন থেকে সরে গিয়েছিল, বাংলাদেশে সেই প্রতিষ্ঠানের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন মাওয়ায় সুধী সমাবেশের সামনের সারিতেই ছিলেন। পরনে ছিল বাঙালি নারীর চিরায়ত পোশাক শাড়ি। 


হাসিমুখে সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় উন্নয়ন সহযোগী। আমরা এই সেতুর গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারি। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জনগণ বিপুল অর্থনৈতিক সুবিধা পাবে।’প্রধানমন্ত্রী বললেন দৃঢ়, সাহসী হতে পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে গতকাল সকাল ঠিক ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাওয়ায় সুধী সমাবেশস্থলে আসেন। সমাবেশের প্যান্ডেলের বাইরের দিকটা পদ্মা সেতুর আদলে গড়া। মঞ্চে ছিলেন চারজন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ও পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম।


সেতু বিভাগের সচিব মো. মনজুর হোসেন করোনা আক্রান্ত হওয়ায় অনুষ্ঠানে থাকতে পারেননি।

মঞ্চের সামনে অতিথিদের আসনে ছিলেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, মন্ত্রিসভার সদস্য, বিচারপতি, গণ্যমান্য ব্যক্তি, রাজনীতিক, বিভিন্ন বাহিনীর প্রধান, পুলিশ প্রধান, সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিক ছাড়াও ছিলেন বিদেশি কূটনীতিকেরা। প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ অতিথি আসনে বসেছিলেন। অবশ্য সুধী সমাবেশের আগে-পরে তিনি সারাক্ষণ মা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ছিলেন। তিনি হাসিভরা মুখে সবকিছু ঘুরে দেখেন, ছবি তোলেন। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বাতাসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী তাঁর মেয়ের হাতে চুল বেঁধে রাখতে ক্লিপ তুলে দেন।


অনুষ্ঠান শুরু হয় শিল্পকলা একাডেমির তৈরি করা ‘থিম সং’ দিয়ে। এরপর মন্ত্রিপরিষদ সচিব সবাইকে ধন্যবাদ জানান। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে সাহসী সিদ্ধান্তের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশের মানুষের পক্ষ থেকে স্যালুট জানান।কিন্তু পরে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় সেই স্যালুট ফিরিয়ে দেন দেশের জনগণকে। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণই আমার সাহসের ঠিকানা। আমি তাদের স্যালুট জানাই।’নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণে যাঁরা সংশয় প্রকাশ করেছিলেন, তাঁদের এই সেতু দেখে সাহসী হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। 


তিনি বলেন, দেশবাসীর সঙ্গে তিনিও আজ আনন্দিত, গর্বিত এবং উদ্বেলিত। তিনি বলেন, ‘অনেক বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে আর ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে প্রমত্ত পদ্মার বুকে আজ বহুকাঙ্ক্ষিত সেতু দাঁড়িয়ে গেছে। এই সেতু শুধু ইট-সিমেন্ট, স্টিল, কংক্রিটের অবকাঠামো নয়, এ সেতু আমাদের অহংকার, আমাদের গর্ব, সক্ষমতা আর মর্যাদার প্রতীক। এ সেতু বাংলাদেশের জনগণের। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, সৃজনশীলতা, সাহসিকতা আর জেদ।’প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমি জানতাম পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির কোনো ষড়যন্ত্র হয়নি। এ জন্যই এই সেতু নির্মাণে আমার জেদ চাপে।’ নিজেদের টাকায় এই সেতু নির্মিত হলে অর্থনীতি, অগ্রগতি স্থবির হয়ে যাবে—অনেকের এমন ভবিষ্যদ্বাণী সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘অর্থনীতি ধসে পড়েনি। বাংলাদেশ দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বের কাছে প্রমাণ করেছি, আমরাও পারি।


 তাই পদ্মা সেতু বাঙালির আত্মমর্যাদা ও সক্ষমতা প্রমাণের সেতু শুধু নয়, পুরো জাতিকে অপমান করার প্রতিশোধও।’প্রধানমন্ত্রী বক্তব্যের শুরুতে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যদের যে গঞ্জনা-অপবাদ সইতে হয়েছে, তা তুলে ধরেন। স্মরণ করেন পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের সদস্যদের নৃশংস হত্যার ঘটনা। স্মরণ করেন জাতীয় চার নেতাকে। একপর্যায়ে তিনি আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন, চোখও মোছেন।


প্রধানমন্ত্রী বক্তৃতা শেষ করেন কবিতার পঙ্‌ক্তি দিয়ে, ‘যতবারই হত্যা করো, জন্মাব আবার। দারুণ সূর্য হব, লিখব নতুন ইতিহাস।’সুধী সমাবেশে ভাষণ শেষে প্রধানমন্ত্রী স্মারক ডাকটিকিট উন্মোচন করেন। দুপুর পৌনে ১২টার দিকে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজার দিকে এগিয়ে যান। ১২টার আগে আগে সুইচ টিপে ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর পাশে ছিলেন তাঁর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা মসিউর রহমান, সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ও সেতু বিভাগের সাবেক সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া।


এরপর গাড়িবহর নিয়ে চলে যান সেতুর ওপর দিয়ে জাজিরায়। সেখানে আরেকটি ফলক উন্মোচন করেন। এর আগে সেতুর মাঝখানে তিনি কিছু সময়ের জন্য থামেন এবং বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এয়ার শো দেখেন।প্রধানমন্ত্রী যখন সেতু পাড়ি দেন, তখন দুই পারে মানুষ উৎসবে মেতে ওঠে। নৌকা সাজিয়ে মাঝিরা নদীতে মহড়া দেন। কেউ কেউ আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকার সাজে সাইকেল, অটোরিকশা, ভ্যান সাজিয়ে নিয়ে আসেন।প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর পদ্মার দুই পারে উৎসব চলেছে। রাতে মাওয়ার শিমুলিয়া ফেরিঘাটে চলে কনসার্ট, ফায়ার শো, লেজার শো। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের দিন ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

দখিনা দুয়ার গেলো খুলি


১৯৯৮ সালে প্রাক্‌-সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে পদ্মা সেতু প্রকল্পের যাত্রা শুরু। নির্মাণ শেষ হলো ২০২২ সালে এসে। সেতুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা।সেতুর অভাবে এত দিন দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১৯ জেলার মানুষকে মাওয়া-কাওড়াকান্দি কিংবা পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি পাড়ি দিয়ে বাড়ি যেতে হয়েছে। ঝড়ের দিনে, ঘন কুয়াশায়, অত্যধিক স্রোতে, নদীর নাব্যতাসংকট, ফেরি বন্ধ থাকার এমন বহু কারণ হুটহাট ঘটে গেছে।কেউ বাড়িতে যাবেন অসুস্থ মাকে দেখতে, কারও স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা। কেউ হয়তো ছোট সন্তানকে দেখেন না কয়েক মাস। বাড়ির পথ ধরে ঘাটে এসে আটকে গেছেন। তখন অপেক্ষায় থাকা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। এখন সেতু চালু হওয়ায় চলাচলের স্বাধীনতা এসেছে।


এই কথাই বলছিলেন বাগেরহাটের বাসিন্দা সাখাওয়াত হোসেন। তিনি প্রথম আলোকে জানান, কেরানীগঞ্জে একটি পোশাকের কারখানায় কাজ করেন তিনি। সেতু উদ্বোধনের মুহূর্তে তা কাছ থেকে দেখতে ভোর থেকে মাওয়ায় অবস্থান করছেন। তিনি বলেন, অফিস ছুটি হলে তিনি রাতে বাড়ি যেতে পছন্দ করেন।এতে এক দিন বেশি পাওয়া যায়। কিন্তু প্রায় বৈরী আবহাওয়ার কারণে ঘাট থেকে ফিরে আসতে হয়েছে। এখন আর এটা হবে না।




এসএম


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল