সময় জার্নাল ডেস্ক: ত্রাণের ট্রাক ঢুকছে সিলেটে। ত্রাণের ট্রাক দেখছি। কিন্তু খাবার পাচ্ছি না। এমন দৃশ্য ওসমানীনগরের সাদিপুর ইউনিয়নে। এক পাশে নবীগঞ্জ। অন্যপাশে মৌলভীবাজার সদর ও জগন্নাথপুর।
এদিকে, সাদিপুরকে বলা হয় সিলেট জেলা পানি নিষ্কাশনের ‘বেসিন’। কালনীচর দিয়ে পানি নামে কুশিয়ারার। এ জন্য বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হয় ওই এলাকায়। এ ইউনিয়নের ওপর তাণ্ডবও চালায় কুশিয়ারা। বর্ষা মৌসুম হলেই ডুবে যায় এলাকা।
যারা রান্না করা খাবার নিয়ে আসছেন তারা বেশি দুর্গম স্থানে পৌঁছতে পারছেন না। নৌকা নিয়ে বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছানো এখন বড় চ্যালেঞ্জ। রান্না করা খাবার নিয়ে অনেকেই আসছেন। এক বেলা খেলে অন্য বেলা উপোস থাকতে হয় লোকজনকে।
সাদিপুর ও শেরপুরের কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, কুশিয়ারা নদীর তীব্র স্রোতে এক রাতেই ভেসে যায় গ্রামের পর গ্রাম। মানুষ ঘুমে থাকতে থাকতেই পানিবন্দি হয়ে পড়েন। আর বের হতে পারেননি। কোথাও কোথাও এক সপ্তাহ ধরে মানুষ পানিবন্দি। অনেকেরই রান্নার জায়গা নেই। এ কারণে এখন শুকনো কিংবা রান্না করা খাবার তাদের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন। সাদিপুর ইউনিয়ন আয়তন ও লোক সংখ্যার দিক থেকে অনেক বড় একটি ইউনিয়ন। ইউনিয়নের বরাদ্দ যা এসেছে তা দিয়ে স্বল্প সংখ্যক মানুষের মুখে খাবার তুলে দেয়া সম্ভব হয়েছে।
সিলেটের কুশিয়ারা তীরের এলাকাগুলোতে তেমন ত্রাণ পৌঁছাচ্ছে না। সরকারি ত্রাণ সকলকে দেয়া সম্ভব নয়। এ জন্য বেসরকারি ত্রাণই এখন পানিবন্দি মানুষের ভরসা। এদিকে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়া সিলেটে ক্ষয়ক্ষতির শেষ নেই। ঘরবাড়ি, ফসল, প্রাণিসম্পদ সবক্ষেত্রেই হয়েছে ব্যাপক ক্ষতি।
রোববার সিলেট জেলা প্রশাসন সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার আহসানুল আলম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের আংশিক এলাকা, জেলার ১৩টি উপজেলা ও ৫টি পৌরসভা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৯৯টি ইউনিয়নের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ৪ লাখ ১৬ হাজার ৮১৯টি পরিবারের ২১ লাখ ৮৭ হাজার ২৩২ জন সদস্য ক্ষতির মুখে পড়েছেন বন্যায়।
তিনি জানান, ২২ হাজার ৪৫০টি ঘরবাড়ি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৮ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমির ফসল পড়েছে ক্ষতির মুখে। বন্যাকবলিত এলাকার জন্য এখন অবধি দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ১৪১২ টন চাল, ১৩ হাজার ২১৮ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং নগদ ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গতকাল বিকালে সর্বশেষ তথ্য মতে- কানাইঘাট ও সিলেটে সুরমা, জকিগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদসীমার এক থেকে দেড় সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিলো।
সময় জার্নাল/এলআর