রাকিব চৌধুরী, বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি:
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) কৃষি বিভাগের দুইটি সেমিস্টারে মার্ক টেম্পারিং এর প্রমাণ মিলেছে। ইতোমধ্যে ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষের ৩য় বর্ষের প্রথম ও দ্বিতীয় সেমিস্টারে বেশ কিছু শিক্ষার্থীর মার্ক টেম্পারিং এর প্রমাণ পাওয়ার পর ফলাফলও সংশোধন করা হয়েছে।
নতুন সফটওয়্যারে শিক্ষার্থীদের মার্ক যুক্ত করতে গিয়ে ফলাফলে অমিল পাওয়া যায় বলে জানিয়েছেন কৃষি অনুষদের ডিন ও বিভাগটির চেয়ারম্যান ড. মোঃ মোজাহার আলী। তিনি বলেন, "নতুন সফটওয়্যারে মার্ক যুক্ত করতে গেলে খাতার মার্কের সাথে ফলাফলের মার্কের অমিল পাওয়া যায়।বেশ কিছু শিক্ষার্থীর খাতার নাম্বারের চেয়ে ফলাফলে বেশি নাম্বার পাওয়া যায়।পরবর্তীতে ফলাফল সংশোধন করা হয়েছে। "
এ বিষয়ে উপ-পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মিকাইল ইসলাম বলেন, আমাদের কাছে দুইটা সেমিস্টারের মার্ক চায় কৃষি বিভাগ।পরবর্তীতে জানতে পারি খাতার মার্কের সাথে টেবুলেটরের দেয়া মার্কে অনিয়ম পেয়েছে কৃষি বিভাগ।
এদিকে ২০১৬-২০১৭ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষের প্রথম ও দ্বিতীয় সেমিস্টারে টেবুলেশনের দায়িত্বে থাকা ইনজামাম উল হক, জাহিদুল ইসলাম সোহাগ ও গোলাম ফেরদৌস বিভাগের সাবেক সভাপতি ও টেবুলেটরের দায়িত্বে থাকা এইচএম আনিসুজ্জামান অথবা সহকারী অধ্যাপক জিলহাস আহমেদ জুয়েল এর প্রতি বিশ্বাস রেখে স্বাক্ষর দিয়েছেন বলে জানান।সে সময় তারা সক্রিয় ছিলেন না বলেও জানান। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে উভয় সেমিস্টারে টেবুলেটরের দায়িত্বে থাকা জিলহাস আহমেদ জুয়েল বলেন, ভালোর ভাগিদার যেমন সবাই, দোষের ভাগিদারও সবার হতে হয়। তারা কিছু না জানলে স্বাক্ষর করেছেন কিভাবে? মার্ক টেম্পারিং হলে টেবুলেটরের দায়িত্বে থাকা কোনো সদস্য দায় এড়াতে পারে না।
একই মত বিভাগের সাবেক সভাপতি ও টেবুলেটরের দায়িত্বে থাকা অন্যতম সদস্য এইচএম আনিসুজ্জামানের।তিনি বলেন, আমি কখনো এসবে হাতই দেই নি।জাহিদুল ইসলাম সোহাগ স্যার নিজে হাতে কাজ করেছে।সেক্ষেত্রে সমস্ত দায়ভার তার হবে। আমি বলবো যে টেবুলেটরে যারা ছিলো, সবাই দায়ী।
টেবুলেটরের দায়িত্বে থেকে স্বাক্ষর করার দায় এড়ানোর বিষয়ে কোনো মন্তব্য নেই বলে জানান জাহিদুল ইসলাম সোহাগ। তবে টেবুলেটরের দায়িত্বে থাকা ইনজামাম উল হক বলেন, "আমরা তখন নতুন ছিলাম। রেজাল্ট দিতে দেরি হয়ে যেত যদি সব চেক করতে যেতাম।মার্ক টেম্পারিং হতে পারে এ বিষয়ে আমার ধারণা ছিলো না।সহকর্মীদের বিশ্বাস করে স্বাক্ষর করেছিলাম।
এদিকে ছাত্রীর সাথে একটি কল রেকর্ড প্রকাশ হওয়ার পর তদন্ত কমিটি গঠিত হয় বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও টেবুলেটরের দায়িত্বে থাকা এইচএম আনিসুজ্জামান এর কল রেকর্ড ফাঁস পরবর্তী বিভিন্ন বিষয়ে।
সেই তদন্ত কমিটির কাছেও মার্কের অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে দাবি করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত কমিটির এক সদস্য বলেন, "বেশ কিছু অনিয়ম পাওয়া গেছে। মার্ক টেম্পারিং অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ। বেশ কিছু শিক্ষার্থীর ফলাফল অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। মার্কের বৃদ্ধি এতোটায় যে সিজিপিএ ৩.৯ পার হয়ে গেলেও পরবর্তীতে তা পুনঃগনণার পরে ৩.৫ এর ঘরেও চলে এসেছে। এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. একিউএম মাহবুব বলেন,আমি বিষয়টি জানার পরেই ফলাফল সংশোধন করতে বলি এবং ফলাফল সংশোধন করা হয়েছে। মার্ক টেম্পারিং এর এই বিষয়ে আমরা তদন্ত করে দেখছি।
সময় জার্নাল/এলআর