সময় জার্নাল ডেস্ক: পাঙাশ মাছের মাংসল ও অব্যবহৃত অংশ বা বর্জ্য ব্যবহার করে বার্গার, চাটনি, আচার, পাস্তা ও চিপসসহ ১১টি পণ্য উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক।
শুক্রবার (১ জুলাই) বেলা ১১টায় উদ্ভাবিত পণ্যগুলোর সাফল্যের তথ্য তুলে ধরেন গবেষক দলের প্রধান ড. ফাতেমা হক শিখা।
গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. ফাতেমা হক শিখা এবং অধ্যাপক ড. মো. ইসমাইল হোসেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন একই বিভাগের ১৪ জন মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।
২০১৮ সালে শুরু হওয়া গবেষণাটি শেষ হয় ২০২২ সালে। সবার কাছে মাছের পুষ্টি বিষয়ে ধারণা দিতে এবং চাষিদের আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে পণ্যগুলো তৈরি করেছেন গবেষকরা।
গবেষক ড. শিখা বলেন, পাঙাশ মাছের মাংসল অংশ থেকে তৈরি করা হয়েছে সাতটি পণ্য—ফিশ বার্গার, ফিশ আচার, ফিশ চাটনি, ফিশ কাটলেট, ফিশ সসেজ, ফিশ পাঁপড় ও ফিশ ফ্লেক। কানকোর পাশের মাংসল অংশ দিয়ে ফিশ চিপস, ফিশ ম্যাকারনি-পাস্তা তৈরি করা হয়েছে। চামড়া ও গ্যাস বর্ডার (পায়ুপথ) দিয়ে ফিশ জিলাটিন ও ফিশ গ্লু বা আঠা তৈরি করা হয়।
এ ১১টি মূল্য সংযোজিত পণ্যের ‘লাইকলিনেস (সংরক্ষণের স্থায়িত্বকাল)’ পরীক্ষা করা হয়। পাশাপাশি এসব পণ্য সংরক্ষণ অবস্থায় খাবার উপযুক্ততার বিষয়েও গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় বলেও জানান গবেষক দলের প্রধান।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে চাষকৃত মাছের মধ্যে পাঙাশ মাছ অন্যতম। প্রোটিনের চাহিদা পূরণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে এ মাছ। বর্তমানে চাহিদার তুলনায় পাঙাশ মাছের সরবরাহ বেশি। এ কারণে এ মাছের দামও কম। এতে মাছচাষিরা আর্থিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। আবার গন্ধের কারণে পাঙাশ মাছ অনেকের কাছেই অপছন্দের বিষয়। এছাড়া সঠিক সময়ে সরবরাহ ও সংরক্ষণের অভাবে নষ্ট হয় হাজার হাজার টন পাঙাশ মাছ। যে কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হন মাছচাষিরা।
গবেষকরা বলছেন, পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা যায় ফিশ পণ্যগুলোর মধ্যে শুকনো খাবার বায়ুশূন্য পলিথিনের ব্যাগে ৬-৯ মাস পর্যন্ত ভালো থাকে। অন্যদিকে ভেজা খাবারগুলো ফ্রিজে ৩-৪ মাস পর্যন্ত ভালো থাকে। এছাড়া ফিশ আচার এবং চাটনি প্রায় এক বছর পর্যন্ত সংরক্ষণ করা সম্ভব।
গবেষক ড. ইসমাইল বলেন, পণ্যগুলোর মধ্যে ফিশ বার্গারে ২০.৯৮, ফিশ আচারে ২২.৫০, ফিশ চাটনিতে ৬.৬৮, ফিশ কাটলেটে ১৮.৩৮, ফিশ সসেজে ১২.৫৪, ফিশ পাঁপড়ে ২৩.৯২, ফিশ ফ্লেকে ২৪.৫৬, ফিশ চিপসে ২৪.৮৭ এবং ফিশ ম্যাকারনি-পাস্তায় ২২.৭২ শতাংশ প্রোটিন রয়েছে।
উদ্ভাবিত পণ্য সম্পর্কে অধ্যাপক ড. শিখা বলেন, বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই মাছ খেতে পছন্দ করেন না। তাই মাছের বিভিন্ন খাদ্যপণ্য তৈরির মাধ্যমে মাছের পুষ্টি তাদের কাছে পৌঁছানো আমাদের মূল লক্ষ্য। বিশেষ করে উদ্ভাবিত পণ্যগুলো শিশুদের কাছে খুব প্রিয়। তারা সহজেই এসব পণ্য গ্রহণের মাধ্যমে মাছের পুষ্টি গ্রহণ করতে সক্ষম হবে।
সময় জার্নাল/এলআর