নিজস্ব প্রতিনিধি: আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আমিন ও পরিচালক ফাতেমা আমিনের কাছে ব্যবসায়ী গাজী আনিস তিন কোটি টাকা পেতেন বলে জানিয়েছেন র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
বুধবার (৬ জুলাই) দুপুরে কারওয়ার বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
খন্দকার আল মঈন বলেন, গাজী আনিসের সঙ্গে লেনদেনে টাকার পরিমাণ নিয়ে আসামিদের আপত্তি আছে। লেনদেন হয়েছে তা তারা স্বীকার করেছেন। বিভিন্ন সময়ে চেকে ও নগদে ৭৬ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। তবে গাজী আনিসের লভ্যাংশসহ ন্যায্যপাওনা তিন কোটি টাকা। এটা নিয়েই মূলত তাদের মধ্যে একাধিকবার বাকবিতণ্ডা হয়েছে।
তিনি বলেন, গত ৪ জুলাই বিকেল পৌনে ৫টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাব এলাকায় গাজী আনিস নিজের গাঁয়ে পেট্রোল জাতীয় দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।
গাজী আনিসের শরীরের ৯০ শতাংশ দগ্ধ হয়ে যায়। অতঃপর চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ৫ জুলাই ভোরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ঘটনাটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। প্রকাশ্য দিবালকে মর্মান্তিক এই ঘটনা আলোড়িত করে দেশবাসীকে।
ওই ঘটনায় নিহতের ভাই বাদী হয়ে রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি আত্মহত্যা প্ররোচনার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। এ প্রেক্ষিতে র্যাব জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে এবং র্যাব সদরদপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-৩ এর অভিযানে রাজধানীর উত্তরা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে নুরুল আমিন (৫৫) এবং ফাতেমা আমিনকে (৪৫) গ্রেফতার করা হয়।
মামলা ও অন্যান্য সূত্রের বরাতে কমান্ডার মঈন বলেন, ২০১৭ সালে আমিন গ্রুপের কর্ণধার নুরুল আমিন এবং তার স্ত্রী ফাতেমা আমিনের সঙ্গে ভিকটিমের পরিচয় হয়। ধীরে ধীরে তাদের সঙ্গে ভিকটিমের সখ্যতা এবং আন্তরিকতা গড়ে ওঠে। গ্রেফতাররা ২০১৮ সালে চিকিৎসার জন্য পার্শ্ববর্তী একটি দেশে গেলে সেখানে স্থানীয় একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থানকালে গাজী আনিসকে হেনোলাক্স কোম্পানিতে বিনিয়োগের জন্য প্ররোচিত করেন। প্রথমে অসম্মতি জানালেও পরে রাজি হন এবং প্রাথমিকভাবে এক কোটি টাকা বিনিয়োগ করেন। এরপর তাদের প্ররোচণায় তিনি আরও ২৬ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেন।অধিকাংশ টাকাই ভিকটিম ঋণ হিসেবে আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ধার নিয়েছিলেন।
ওই টাকা উদ্ধারের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে কুষ্টিয়ার আদালতে দুটি মামলা দায়ের করেন গাজী আনিস। এছাড়াও ঐ টাকা ফিরে পাওয়ার জন্য গত ২৯ মে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। এজাহার সূত্রে আরও জানা যায়, গত ৪ জুলাই পাওনা টাকা পরিশোধের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু বিকেল গড়ালেও তারা নিহতকে টাকা প্রদান করেনি। এরপর গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি।
নিহত গাজী আনিস কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার পান্টি গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি ঠিকাদারি ব্যবসার পাশাপাশি একটি টেলিকম কোম্পানিতে চাকরি করতেন। পরে চাকরি ছেড়ে কুষ্টিয়ায় গাড়ীর ব্যবসা শুরু করেন। তিনি সাহিত্যচর্চা করতেন এবং তার বেশ কয়েকটি কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে।
আসামি নুরুল আমিন ১৯৮১-১৯৯৬ সাল পর্যন্ত গোপীবাগ ঢাকা এলাকায় কাদের হোমিও হল নামে হোমিও হলে ১৫ বছর চাকরি করেন। ওই সময়ে তার একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার কথা মাথায় আসলে ১৯৯১ সালে হেনোল্যাক্স কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে ব্যবসা শুরু করেন। পরে কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে আমিন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি নামকরণ করেন। ওই কোম্পানির অধীনে হেনোলাক্স কসমেটিকস্ যেমন- হেনোলাক্স কমপ্লেকশান ক্রিম, হেনোলাক্স স্পট ক্রিম, হেনোলাক্স মেছতা আউট ক্রিম ও হেনোলাক্স হেয়ার অয়েল ও পোলট্রি ফার্মের ব্যবসা করেন।
গাজী আনিস ছাড়াও অন্য কেউ আসামিদের কাছ থেকে টাকা পান কি না জানতে চাইলে কমান্ডার মঈন বলেন, আমরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য পাইনি।
গাজী আনিসের নির্মম মৃত্যুর ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে নুরুল আমিন-ফামেতা দম্পতি রাজধানীর উত্তরার বাসা থেকে পালিয়ে অন্যত্র আত্মগোপন করেন বলেও জানান তিনি।
সময় জার্নাল/এলআর