সর্বশেষ সংবাদ
প্রতিষ্ঠার ৪৬ বছর:
আন্তর্জাতিজ ডেস্ক: ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পাঁচ মাসের মাথায় এসে যুদ্ধ নিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে সেই সিদ্ধান্ত এবার অবশ্যই নিতে হবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে।
রুশ বাহিনী গত রোববার ইউক্রেনের লিসিচানস্ক শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধে কৌশলগতভাবে এই শহরটি গুরুত্বপূর্ণ। এরপর একাধিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকের সঙ্গে কথা বলে এএফপি। তাঁরা পাঁচটি ভিন্ন ভিন্ন বিষয় তুলে ধরেছেন। নিচে তার আলোচনা করা হলো।
ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পথে রাশিয়া। দুটি স্বঘোষিত প্রজাতন্ত্র নিয়ে অঞ্চলটি গঠিত। তবে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রুশ বাহিনীর অভিযান শুরুর আগেই দনবাসের কিছু অঞ্চল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। এসব বিচ্ছিন্নতাবাদী রাশিয়াপন্থী।
প্যারিসের সোরবোনে বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক পিয়েরে গ্রাসার বলছেন, ‘সম্প্রতি লিসিচানস্ক ও সেভেরোদোনেৎস্কের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পরে রুশ সেনারা এখন স্লোভিয়ানস্ক ও ক্রামাতোরস্ক শহর এবং এর আশপাশের অঞ্চলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আশা করছে।’
তিনি বলেন, স্লোভিয়ানস্কে রুশ বাহিনী ও ইউক্রেনীয় সেনাদের মধ্যে লড়াই চলছে। অনেকে বাড়িঘর ছেড়েছেন। যারা এখনো আছেন তারা রুশ বাহিনীকে স্বাগত জানাবেন বলে ধারণা।
তবে এর আশপাশের অঞ্চলগুলোয় রাশিয়া কতটা অগ্রগতি করতে পারবে সেটিও বড় প্রশ্ন।
মেডিটারেনিয়ান ফাউন্ডেশন ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের (এফএমইএস) একাডেমিক পরিচালক পিয়েরে র্যাজোক্স এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘(রুশ বাহিনী) তাদের নিজেদের সীমান্ত, অস্ত্র সরঞ্জাম রাখার স্থান আর বিমানঘাঁটিতে বেশ ভালোভাবেই সব কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।’
যুদ্ধের প্রথম দিকে রুশ সেনাদের হাতে ইউক্রেনের যেসব শহরের পতন হয়েছিল তার মধ্যে একটি দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খেরসন। কিন্তু কৃষ্ণ সাগর উপকূলের পুরো নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি নিতে পারেনি। রুশ বাহিনী কৃষ্ণ সাগরের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালাচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার সেনাবাহিনীর সাবেক জেনারেল মাইক রায়ান বলছেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলে ইউক্রেনের পাল্টা প্রতিরোধ রুশ বাহিনীকে ধাঁধার মুখে ঠেলে দিয়েছে। তারা কি উত্তরাঞ্চলে তাদের এই হামলা অব্যাহত রাখতে পারবে অথবা দক্ষিণে সেনা জোরদার করতে পারবে?’
সাবেক ওই ঊর্ধ্বতন সেনা কর্মকর্তা বলেন, ‘দনবাসের চেয়ে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলের যুদ্ধ কৌশলগতভাবে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রশ্নটা হলো কতটা জোরালো আক্রমণ চলছে।’
উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলো নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি মস্কোকে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ পর্যন্ত একটি করিডর তৈরির পথ করে দেবে। ২০১৪ সালে এই ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখলে নিয়েছিল রাশিয়া। যদিও উভয় পক্ষ কৃষ্ণ সাগর উপকূলে থাকা বন্দরগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।
ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহৎ শহর খারকিভ। শহরটি ইউক্রেনের উত্তর–পূর্ব দিকে রাশিয়ার সঙ্গে সীমান্তলাগোয়া। কিয়েভের নিয়ন্ত্রণে থাকা ছোট একটি অঞ্চলের মধ্যে এই শহরটির অবস্থান। তাই রুশ বাহিনী এখনো শহরটিকে অন্যান্য অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি।
পিয়েরে র্যাজস্ক বলেন, ‘যদি ইউক্রেনের সেনারা পরাজিত হয় এবং খারকিভ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তাহলে ইউক্রেনীয়দের শহরের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার চেষ্টা অথবা দক্ষিণে খেরসনের দিক থেকে আসা চাপের যেকোনো একটিকে বেছে নিতে বাধ্য করবে রাশিয়া।’
তিনি বলেন, বিষয়টা তখন চলে যাবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সিদ্ধান্তের ওপর। খারকিভের পতন হলে রুশ বাহিনী শহরটির চারপাশ ঘিরে বড় সাফল্যের দাবি করবে। ইউক্রেনীয় কমান্ডারদের খারকিভ অবরুদ্ধ ঠেকাতে সেখানে সেনা মোতায়েন করতে হবে।
পিয়েরে র্যাজক্স বলছেন, স্বাভাবিক সময়ে খারকিভ শহরে ১৪ লাখের মতো মানুষ বাস করে। খারকিভে যদি পরিস্থিতি হয় তাহলে সেখানে এক বছর পর্যন্ত রক্তপাত হতে পারে।
এখন পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইউক্রেনকে সব ধরনের সহযোগিতা ও রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসছে পশ্চিমা বিশ্ব। তবে ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্রমাগত অগ্রতির কারণে পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে। নিজ স্বার্থেই সবাইকে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।
নিউইয়র্কের চিন্তন প্রতিষ্ঠান সফান সেন্টারের গবেষণা পরিচালক কলিন ক্লার্ক বলছেন, ‘রাশিয়ার লক্ষ্য যুদ্ধে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে বারবার পরাজিত করা। একইসঙ্গে ইউক্রেনকে সহযোগিতা করতে পশ্চিমা বিশ্বের রাজনৈতিক সদিচ্ছা কবে শেষ হয় তার অপেক্ষা করা।’
পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে যেসব অস্ত্র সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে তা সরবরাহের গতি খুবই ধীর। যুদ্ধ কিয়েভের পক্ষে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে পশ্চিমাদের এসব সহযোগিতাও অনেক কম। যুদ্ধক্ষেত্রে ইউক্রেনের জন্য এটাও বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অপরদিকে যুদ্ধের কারণে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়েছে। খাদ্য ও জ্বালানির মতো জরুরি পণ্যের ওপর এর প্রভাব পড়েছে। মানুষের অবস্থান বদলেছে। ইউক্রেনকে সহযোগিতা করার কারণে শুরুর দিকে পশ্চিমাদের ওপর দেশটির মানুষের যে সমর্থন ছিল তা কমেছে।
জেরুজালেম ইনস্টিটিউট ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড স্ট্রাটেজির বিশ্লেষক আলেক্সান্দার গ্রিনবার্গ বলেন, ‘আমেরিকানরা ইউক্রেনীয়দের বলতে পারে, ‘আপনারা আর পারবেন না।’
পশ্চিমা দেশগুলোর নিষেধাজ্ঞার চড়া মূল্য দিতে হচ্ছে মস্কোকে। আর্থিক ক্ষতির সঙ্গে সঙ্গে যুদ্ধে বহু রুশ সেনা হতাহত ও বহু ভারী সামরিক সরঞ্জাম হারানোর বিষয়টিও রয়েছে।
কলিন ক্লার্ক বলছেন, ‘একটা সময়ে এসে পুতিন সমঝোতার জন্য আলোচনায় বসতে বাধ্য হবেন। তিনি যতটা হজম করতে পারেন না ইতিমধ্যে তার চেয়ে অনেক বেশি চিবিয়েছেন।’
জুনের শেষদিকে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ আলোচনায় বসার কথা জানিয়েছিলেন। তবে এ ক্ষেত্রে রাশিয়ার দেওয়া সব শর্ত মানার কথা বলা হয়েছে। অবশ্য আলোচনায় বসতে রাশিয়ার এসব চাওয়া অগ্রহণযোগ্য বলে অভিহিত করেছে ইউক্রেন।
কিন্তু দেশে তথ্যপ্রবাহের নিয়ন্ত্রণ করে রাশিয়ার নেতা পুতিন তার দেশের মানুষকে বলতে পারবেন, যে লক্ষ্য নিয়ে তিনি এই অভিযান শুরু করেছিলেন তা অর্জিত হয়েছে। এমনকি যুদ্ধ স্থগিত করার বিষয়টির বৈধতাও কোনো না কোনোভাবে আদায় করতে পারবেন তিনি।
পিয়েরে র্যাজক্স বলছেন, ‘বড় একটি চ্যালেঞ্জ হয়তো হয়ে দাঁড়াবে ইউক্রেনীয়দের মধ্য বিভাজন। কট্টরপন্থী ও সামরিক নেতারা রাশিয়াকে কোনো ছাড় দিতে চাইবে না। এমনকি যদি প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি চুক্তি করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তারপরও তারা তা করবেন না।’
‘ইউক্রেনের সামরিক ও মিলিশিয়ারা হয়তো অচল যুদ্ধ চাইবেন কিন্তু হারতে চাইবেন না।’
এসএম
Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.
উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ
কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল