আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
বড়ভাই ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসের ভাগ্যই বরণ করতে হলো শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসে’কে। তবে তিনি এখনও পদত্যাগ করেননি। আজ জনতার রোষের মুখে তিনি সরকারি বাসভবন থেকে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। শ্রীলঙ্কাভিত্তিক ডেইলি মিরর রিপোর্টে বলেছে, বিক্ষোভকারীরা আজ তার বাসভবনে জোর করে প্রবেশ করে। এর আগে তারা তার বাসভবন ঘেরাও করে অবস্থান করে। এক পর্যায়ে ঝড়ো গতিতে প্রবেশ করে ভিতরে। এতে সংঘর্ষ দেখা দেয় নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের সঙ্গে। ফলে তাতে দু’পুলিশ সহ আহত হন কমপক্ষে সাতজন। প্রতিরক্ষা বিষয়ক একটি সূত্র ও স্থানীয় মিডিয়ায় এসব কথা বলা হয়েছে বলে খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে বাসভবন থেকে পালিয়ে যান গোটাবাইয়া রাজাপাকসে।
তবে কর্তৃপক্ষ বলেছে, প্রেসিডেন্ট পালান নি। তাকে উদ্ধার করা হয়েছে। আর্থিক সংকটে মানুষের পিঠ যখন দেয়ালে ঠেকে যায়, তখন কি পরিণতি হয়, তার একটি উদাহরণ সৃষ্টি হলো এর মধ্য দিয়ে। রিপোর্টে বলা হয়েছে আজ রাজধানী কলম্বোতে অবস্থিত প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবনের বাইরে সমবেত হয় হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। তারা সব নিরাপত্তা বেষ্টনি অতিক্রম করে। এক পর্যায়ে তারা আকস্মিকভাবে ভিতরে প্রবেশ করে। তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুটি সূত্র বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, সাপ্তাহিক ছুটিতে পরিকল্পিত বিক্ষোভের আগেই নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে শুক্রবার সরকারি বাসভবন এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসেকে।
ওদিকে নিরাপত্তা বেষ্টনি ভেদ করে ভিতরে প্রবেশের দৃশ্য সরাসরি ফেসবুকে প্রচার করতে থাকে বিক্ষোভকারীরা। এতে দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট প্রসাদের ভিতরে বিভিন্ন রুমে এবং করিডোরের ভিতর দিয়ে বিক্ষোভকারীরা ছোটাছুটি করছেন এবং প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন। বেশ কিছু মানুষকে দেখা গেছে ঔপনিবেশিক আমলের ভবনের বাইরে হাঁটাহাঁটি করতে। এ সময় সেখানে কোনো নিরাপত্তাকর্মীকে দেখা যায়নি। হাসপাতাল সূত্র বলেছেন, দু’পুলিশ সহ কমপক্ষে ২১ জন আহত হয়েছেন। তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্থানীয় টিভি চ্যানেল নিউজফার্স্ট প্রচারিত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, কিছু বিক্ষোভকারী শ্রীলঙ্কার পতাকা ও হেলমেট পরে আছেন। তারা প্রেসিডেন্টের বাসভবনের ভিতরে প্রবেশ করেছেন।
পুলিশ ফাঁকা গুলি করেছে। কিন্তু বিক্ষোভকারীদের থামাতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ ঘেরাও করে রাখে। এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ফোর্টে প্রেসিডেন্টের বাসভবনের প্রধান প্রবেশ পথে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী অবস্থান নেয়। তারা এ সময় নিরাপত্তা বেষ্টনি সরিয়ে ফেলে। আরও দেখা যায় ওই এলাকা থেকে পুলিশ সরিয়ে নেয়া হয়েছে। অব্যাহত কাঁদানে গ্যাস এবং ফাঁকা গুলি করে পরে পুলিশ।
মার্চ মাস থেকে প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসেকে পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ হচ্ছে দেউলিয়া এই দেশটিতে। সেখানে আর্থিক সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তখন থেকে জ্বালানি তেলের দাম আকাশছোঁয়া। তারপরও তা পাওয়া যাচ্ছে না। এরই মধ্যে তেলের ফিলিং স্টেশনগুলোতে হাজার হাজার গাড়ি তেলের জন্য অপেক্ষা করছে। সেখানে অপেক্ষা করতে করতে কমপক্ষে ১১ জন মানুষ মারা গেছেন। ওদিকে তেলের শিপমেন্ট আসছে না। তেলের অভাবে বন্ধ স্কুল। রান্নার তেল দেয়া হচ্ছে রেশনিং করে। পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে।
এমআই