মোহাম্মদ মাহামুদুল, মালদ্বীপ প্রতিনিধি:
মালদ্বীপ প্রবাসীদের প্রতি বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে আহ্বান জাানিয়ে হাইকমিশনার এস এম আবুল কালাম আজাদ প্রবাসীদের উদ্দেশে এক বার্তায় তিনি বলেন, করোনা উত্তর পরিস্থিতিতে যখন আমাদের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল সেসময় রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল, গ্যাস, সারসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিতে সারা বিশ্বের ন্যায় আমরাও আজ এক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রেও মূল্যস্ফীতি প্রায় ৮ থেকে ১০ শতাংশে পৌঁছেছে। দেশের চাহিদা মেটাতে আমদানি ব্যয় মেটানোর জন প্রয়োজন হচ্ছে আগের তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা।
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে রপ্তানি আয়ের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে প্রবাসীদের প্রেরিত রেমিট্যান্স।
তিনি উল্লেখ করেন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে প্রবাসীরা গড়ে প্রতিদিন ১ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা দেশে পাঠাচ্ছেন। গত বুধবার এক দিনেই ২০ কোটি ৫০ লাখ ডলার পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে কখনোই এক দিনে এত রেমিট্যান্স দেশে আসেনি। দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের এই গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য তিনি আন্তরিক ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানান।
প্রবাসীদের দেশে বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠাতে উৎসাহ দিতে সরকার ইতিপূর্বে রেমিট্যান্স এর ওপর ২ শতাংশ প্রণোদনা দিয়েছে, যা বর্তমানে ২ দশমিক ৫ শতাংশ করা হয়েছে। প্রবাসী যে কেউ এখন থেকে এক লক্ষ টাকা দেশে পাঠালে সাথে আরও দুই হাজার পাঁচশত টাকা প্রণোদনা হিসেবে পাবেন।
ইতিপূর্বে ৫ লক্ষের অধিক টাকা প্রেরণ করলে প্রণোদনার টাকা পেতে হলে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ব্যাংকে জমা দেয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল, কিন্তু বর্তমানে যেকোন অংকের টাকা পাঠানো হোক না কেন, কোন কাগজপত্র জমা দেয়া ছাড়াই প্রণোদনার টাকা ব্যাংকে জমা হয়ে যাবে।
বৈধপথে ব্যংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে তা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তথা ডলার রিজার্ভে জমা হয়। যা দিয়ে দেশের আমদানি ব্যয় ও অন্যান্য প্রয়োজন মেটানো হয়। দেশের অর্থনীতি গতিশীল হয়, শক্তিশালী হয়।
তিনি বলেন, বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠালে আপনার পরিবারের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি দেশের উন্নয়নে আপনার অবদান নিশ্চিত হয়। এছাড়া দেশে আপনার আয় বৈধ বলে বিবেচিত হয়। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের আমদানি ব্যয় মেটানো ও দেশের অর্থনীতি গতিশীল রাখার লক্ষ্যে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরী। তাই দেশের এ প্রয়োজনীয় পরিস্থিতিতে বৈধপথে তথা ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে অর্থ পাঠানোর জন্য হাইকমিশনার আহবান জানান।
হাইকমিশনার এস এম আবুল কালাম বলেন, জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়ন ও প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ২০৪১ তথা বাংলাদেশকে একটি উচ্চ আয়ের দেশে উন্নীত করার লক্ষ্যে আমরা যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে এসে বৈধপথে দেশে রেমিট্যান্স প্রেরণ করে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করি।
তিনি আরও বলেন, আমরা দেখতে পাচ্ছি মালদ্বীপে সাম্প্রতিক সময়ে কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার না করায় বিভিন্ন দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশি প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধারা আহত হচ্ছেন ও মারা যাচ্ছেন, তাই মালদ্বীপের সকল প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা বিষয়ে সচেতন হওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন। তিনি বলে সচেতনতা , নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার , নিয়ম মেনে চলা ও সাবধানতা দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমাতে পারে।
মালদ্বীপে বসবাসরত আনডকুমেন্টেড(অনিয়মিত) প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকদের বলেন যে , ইকনোমিক ডেভেলপমেন্ট মিনিস্ট্রির আওতায় বৈধকরণ প্রক্রিয়া বর্তমানে চালু রয়েছে ।
যাদের বৈধ ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট নাই তাদেরকে দ্রুততার সাথে ভিসা / ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করে বৈধভাবে কাজ করার জন্য আহবান করেন। এমতাবস্থায় আনডকুমেন্টেড (অনিয়মিত) প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকদের জরুরি ভিত্তিতে বৈধকরণ প্রক্রিয়ায় ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করার জন্য অনুরোধ করা হয় ।
উল্লেখ্য , বৈধকরনের জন্য বর্তমানে আপনি যেখানে কাজ করছেন সেই মালিককে ইকনোমিক ডেভেলপমেন্ট মিনিস্ট্রিতে আবেদন করতে হবে।
সময় জার্নাল/এলআর