আতিক ইউএ খাঁন:
চট্টগ্রাম শহরের গুরুত্বপূর্ণ এক রাস্তার মোড়ে টিভি চ্যানেল "এস" এর ইন্টারভিউ দেয়ার সময় একটা মজার ঘটনা ঘটেছিল।
লাইভ এর সময় যখন ঘনিয়ে এলো, সাংবাদিক আমার দিকে ক্যামেরা আর মাইক্রোফোন ধরে আছে, ঠিক তখনই ছেলেটা আমার পাশে এসে বলল,
- মাস্ক কিনবেন?
ওকে ক্যামেরা হতে সরাতে বললাম,
- আচ্ছা কিনব। এখন একটু দূরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা কর।
ছেলেটা আমার কথা বিশ্বাস করে দূরে সরে দাঁড়াল।
ইন্টারভিউ শেষ। ছেলেটা আবার কাছে এসে দাঁড়াল। হাতে ৫০টা সার্জিক্যাল মাস্কের বক্স।
- মাস্কের দাম কত?
- ৭০ টাকা।
- মাত্র?
- আচ্ছা ৮০.. না না ৯০....
আমার ভ্রূ কুঁচকান দেখে ঘাবড়ে গিয়ে বলল,
- দাম ১৫০ টাকা...
- চুরি করেছিস?
- না, আমার বড় বইন দিছে।
পকেটে টাকা নেই, মানিব্যাগ রেখে বেরিয়েছি। বাসার দূরত্ব ১০ মিনিট। বললাম,
- বাসায় চল, মাস্কের টাকা দিব।
ছেলেটার নাম মোঃ আবদুল। আমার সাথে ধীরে ধীরে হাঁটতে শুরু করেছে। দুপুর আড়াইটা বাজে।
- ভাত খেয়েছিস?
- হ, সবজি দিয়ে মা খাওয়াই দিছে।
- কুরবানির মাংস দিয়ে খাস নাই?
- জি না, গরুর মাংস বাসায় কেউ দেয় নাই।
- আচ্ছা চল, বাসায় গরুর মাংস দিয়ে ভাত খাওয়াব।
- একা খামু না, বাসায় বাবা-মা আর ৩ ভাই-বোন আছে। একটু কাচা মাংস দিলে বাসায় মা রান্না করবে৷, সবাই মিলে খামু৷
হাঁটতে হাঁটতে ছেলেটা রাস্তার পাশেই পড়ে থাকা একজোড়া ছেঁড়া স্যান্ডেল পায়ে গলিয়ে নিল।
- তোর স্যান্ডেল নাই?
- জি না, গত রোজার ঈদে বাবা কিনে দিছিল। এলাকার এক বড় ভাই আমারে দুই থাপ্পড় মাইরা লইয়া গেছে। শালায় পুরা বাটপার।
আবদুল ততক্ষণে একপায়ে স্যান্ডেল নিয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে। অন্যটা পা হতে ছুটে গেছে।
গল্প করতে করতে ততক্ষণে বাসায় পৌঁছে গেছি। বললাম,
- বাসার নিচে বস। আমি আসছি।
ঈদের মাত্র ৩য় দিন, তাই মাংসের একটা প্যাকেট আর কিছু টাকা নিয়ে ফিরলাম।
- এই নে, তোর মাস্কের দাম আর একজোড়া নতুন স্যান্ডেল কেনার টাকা। মাংস বাসায় নিয়ে রান্না করে একসাথে খাবি, ঠিক আছে?
আবদুল কিছুটা অবিশ্বাসের চোখে কতক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে রইল। এরপর মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে উজ্জ্বল চোখে আমার দিকে তাকাল।
আবদুলের ওই হাসিমুখটাই ছিল, আমার এবারের কুরবানি ঈদের উপহার।