আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
অবশেষে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসে। বৃহস্পতিবার তিনি পার্লামেন্টের স্পিকারের কাছে ইমেইলের মাধ্যমে পদত্যাগপত্রটি পাঠান। তবে শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে তা ঘোষণা করা হবে। গোটাবাইয়া ঠিক কখন পদত্যাগপত্রটি পাঠিয়েছেন তা নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে।
ডেইলি মেইল শ্রীলঙ্কার খবরে বলা হয়, রাজাপাকসে বুধবার সন্ধ্যাতেই ইমেইলটি পাঠিয়েছিলেন। তবে এর কারিগরি বিষয়গুলো নিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের সাথে আলোচনা করা হয়। গোটাবাইয়া রাজাপাকসে এর যথার্থতা নিশ্চিত করলেও এটি আইনগতভাবে বৈধ কিনা তা নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। স্পিকার শুক্রবার বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
কিন্তু কলম্বো গ্যাজেটে বলা হয়, গোটাবাইয়া সিঙ্গাপুর পৌঁছে ইমেইলে পদত্যাগপত্রটি পাঠিয়েছেন। সিঙ্গাপুর পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় তার পদত্যাগপত্র পাঠাতেও দেরি হয়ে যায়।
তার পদত্যাগপত্রটি গৃহীত হলে ভারমুক্ত হবেন রনিল বিক্রমাসিংহে। তিনি তখন পুরোপুরি প্রেসিডেন্ট হয়ে যাবেন।
শ্রীলঙ্কার 'পলাতক' প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসে সিঙ্গাপুর পৌঁছেছেন। তবে তিনি শরণার্থীর মর্যাদা প্রদানের কোনো অনুরোধ করেননি বলে সিঙ্গাপুরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। তাকে সিঙ্গপুরে বেসরকারি সফরের অনুমতি দেয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সৌদি এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট এসভি ৭৮৮-তে সিঙ্গাপুর রওনা হন, 'পলাতক' রাষ্ট্রনেতা। সন্ধ্যায় তিনি সেখানে অবতরণ করেন। তবে তিনি সেখানে সম্ভবত বেশি সময় থাকবেন না। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সেখান থেকে সৌদি আরবের বন্দর শহর জেদ্দায় পৌঁছবেন তিনি।
এদিকে বিক্ষুব্ধ জনতা রনিল বিক্রামাসিংহেকে মেনে নিতে প্রস্তুত নয় বলে জানিয়েছে। তারা তার পদত্যাগের দাবিতে অনড় রয়েছে। তারা ইতোমধ্যে তার অফিস দখল করেছে। বিক্ষুব্ধ জনতা এর আগে প্রেসিডেন্টের বাসভবন দখল করেছে। তারা বিক্রমাসিংহের বাসভবনে অগ্নিসংযোগও করেছে।
শ্রীলঙ্কার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মহিন্দা রাজাপাকসে দেশ ছাড়বেন না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ৭৬ বছর বয়স্ক মহিন্দা রাজাপাকসে তার সহকারীর মাধ্যমে বৃহস্পতিবার এ ঘোষণা দেন। তার ছোট ভাই ও প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসে পালিয়ে দেশ ত্যাগ করায় মহিন্দাও একই পথ অনুসরণ করতে পারেন বলে আশঙ্কা সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে এই ঘোষণা দেয়া হলো।
এদিকে মহিন্দার বড় ছেলে সাবেক মন্ত্রী নমলও ঘোষণা করেছেন, তিনি দেশ ছাড়বে না। ভয়াবহ অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে এখন প্রবল আন্দোলন চলছে। আন্দোলন শুরুর দিকেই মহিন্দা রাজাপাকসে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন।
শ্রীলঙ্কার বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের বাসভবন, প্রধানমন্ত্রীল অফিস ভবন কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেছে। প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসে ও প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের পদত্যাগের দাবিতে তারা ভবন দুটি দখল করে রেখেছিল।
শ্রীলঙ্কার চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কটের জন্য রাজাপাকসেদের দায়ী করে আন্দোলন শুরুর প্রেক্ষাপটে তারা রাস্তায় নামে। তারা ৯ জুলাই প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রবেশ করে। গোটাবাইয়া এর আগে ভবন থেকে পালিয়ে যান। এরপর থেকে ভবনটি বিক্ষোভকারীদের নিয়ন্ত্রণেই ছিল।
একই দিন বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্টের সচিবালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন টেম্পল ট্রিজ দখল করে নেয়। গতকাল বিক্ষোভকারীরা কলম্বোর ফ্লাওয়ার রোডে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন দখল করে নেয়।
শ্রীলঙ্কার বাস অ্যাসোসিয়েশন ভবনগুলো রাষ্ট্রীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করার জন্য বিক্ষোভকারীদের প্রতি আবেদন জানিয়েছিল।
সময় জার্নাল/এলআর