মুহা: জিললুর রহমান, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
গত তিন দিনেও সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়নের দুর্গাবাটি এলাকার পাউবো’র বেড়িবাঁধের ভাঙ্গন পয়েন্টে বিকল্প রিং বাঁধ নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। পূর্ণিমার প্রবল জোয়ারের প্রভাবে রিং বাঁধ নির্মাণ করতে না পারায় ভাঙ্গন পয়েন্ট দিয়ে খোলপেটুয়া নদীর পানি লোকালয়ে ঢোকা অব্যহত রয়েছে। এতে করে ভাঙ্গন পয়েন্টের বিস্তৃতি বৃদ্ধির পাশাপাশি জোয়ারের পানিতে প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ফলে গত তিন দিনে ওই ইউনিয়নের প্রায় ১৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
পানিবন্দী হয়ে পড়া কলবাড়ী গ্রামের সাইফুল ইসলাম জানান, ভাঙ্গনের তৃতীয় দিনে এসে তাদের এলাকার যাবতীয় কাঁকড়ার প্রজেক্ট ও পোল্ট্রি মুরগির খামার ভেসে গেছে। এলাকার কাঁচা পাকা সড়ক পানিতে তলিয়ে থাকায় সমগ্র এলাকা বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত হয়েছে। ভাঙ্গন কবলিত অংশ বাঁধতে দেরী হলে প্রতিদিন নুতন নুতন এলাকা প্লাবিত হবে বলেও তিনি জানান।
টুঙ্গিপাড়া গ্রামের প্রভাষক পরীক্ষিত মন্ডল জানান, তিনদিন ধরে তারা পানিবন্দী অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন। বসতঘরের মধ্যে হাঁটু পানি থাকায় নানাবিধ অসুবিধা সত্ত্বেও যাওয়ার জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে অনেকে রাতে রাস্তা আর বেড়িবাঁধের উপর কাটিয়ে দিচ্ছে। ভাঙ্গন পয়েন্টে বাঁধার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তাদের এমন দুরাবস্থা কাটবে না বলেও দাবি ওই কলেজ শিক্ষকের।
বৃষ্টির পানি ধরে তৃষ্ণা মেটানোর দাবি করে মাদিয়া গ্রামের মনোয়ারা বেগম জানান, প্রতি বছর একাধিক বার তারা ভাঙ্গনের মুখে পড়ছেন। গত তিন বছরের ভাঙ্গনে সর্বস্ব খোয়ানোর পর এবারের ভাঙ্গনে তাদের আর যাওয়ার জায়গা নেই। পোষ্য গরু ছাগলগুলোকে মুন্সিগঞ্জ ও নওয়াবেঁকী আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, খাবার পানি আর শুকনা খাবারের জন্য দূর-দূরান্তে লোকজন পাঠিয়েও কোন প্রতিকার মিলছে না।
এদিকে, পূর্ণিমার কারণে নদীতে জোয়ারের চাপ বেশী থাকায় সব ধরনের প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও ভাঙ্গন পয়েন্টের সামনে দিয়ে বিকল্প রিং বাঁধ নির্মাণের কাজ শনিবার তৃতীয় দিনেও শুরু করা যায়নি। পানি উন্নয়নের বোর্ডের সহযোগিতায় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে স্থানীয় জনসাধারণ দুর্গাবাটি এলাকার ভাঙ্গন পয়েন্টের দুই পাশ দিয়ে বিকল্প রিং বাঁধ নির্মাণের জন্য বাঁশের পাইলিং কাজ শুরু করেছেন।
বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম জানান, শনিবার পর্যন্ত তার ইউনিয়নের ৬টি ওয়ার্ডের প্রায় ১৩টি গ্রাম প¬াবিত হওয়ায় অন্তত ৫ হাজার ছোট বড় চিংড়ি ঘেরে ভেসে গেছে। এছাড়া দুই শতাধিক কাঁকড়ার ছোট বড় প্রজেক্ট পানিতে নিমজ্জিত হওয়ার পাশাপাশি ২০/২২টি কাঁচা ঘর ধসে পড়েছে। এসব এলাকার শতাধিক কাঁচা পাকা সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি অন্তত ১২ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ইউনিয়নের প্রায় তিন ভাগের দুই ভাগ প্লাতি হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
চেয়ারম্যান আরো বলেন, পাউবো’র সহযোগিতায় আমরা দুর্গাবাটি এলাকার বেড়িবাঁধের ভাঙ্গন পয়েন্টে বিকল্প রিং বাঁেধর কাজ শুরু করেছি। কিন্তু পূর্ণিমার প্রবল জোয়ারের চাপে কাজ করা সম্ভব হচ্ছেনা। তাবে ইতিমধ্যে ভাঙ্গনের দুই পাশ থেকে বাঁশের পাইলিংয়ের কাজ শুরু করা হয়েছে। আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারের চাপ কমলে মাঝ বরাবর কাজ করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।
সময় জার্নাল/এলআর