অ আ আবীর আকাশ, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:
অসহনীয় লোড শেডিংয়ের কবলে পড়ে লক্ষ্মীপুরসহ উপজেলাগুলোতে জনজীবন কাহিল হয়ে পড়েছে। জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ কম পাওয়ায় বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করতে হচ্ছে বলে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি জানিয়েছে।
গ্রাহকদের অভিযোগ, লোডশেডিং কখনও কখনও তিন থেকে চার ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এ কারণে ঈদ পরবর্তী সময়ে বেচাকেনার ভরা মৌসুমেও শপিং মল ও বিভিন্ন দোকানে ক্রেতার উপস্থিতি কমে গেছে।
লক্ষ্মীপুরে রোববারে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৬২% রেকর্ড হয়েছে। গরমের কারণে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে বেশ কয়েকজন বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বলে জানা গেছে।
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, প্রচণ্ড গরমে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে সোমবার দুপুর পর্যন্ত ৭ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
পিক আওয়ারে বিকাল ৫টা থেকে ৭টা পর্যন্ত পল্লী বিদ্যুৎ মিলিয়ে চাহিদা রয়েছে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সেখানে পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৫০০ মেগাওয়াট। ফলে বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করে রেশনিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হচ্ছে।
পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির একজন কর্মকর্তা বলেন, লক্ষ্মীপুর জেলাসহ পুরো ৫ উপজেলা ও এক থানায় তিন দিন ধরে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে লক্ষ্মীপুরে আরও ভয়াবহ অবস্থা। বিদ্যুতের অভাবে শপিং মলসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কলকারখানা বন্ধ হয়েছে। প্রচণ্ড গরমে মানুষ প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হচ্ছে না।
নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ী সুইটি কম্পিউটারের মালিক বিপ্লব সরকার বলেন, বিদ্যুৎ যায়, কিন্তু কখন আসবে তা কেউ বলতে পারে না। আমাদের তো ব্যবসা কম্পিউটার কম্পোজ করা। এই দিয়ে চলে আমার সংসার । কিন্তু বিদ্যুৎতের যে অবস্থা তাতে করে আধাঘণ্টা কাজ করতে পারি না। প্রচণ্ড গরম আর লোড শেডিংয়ের কারণে জনজীবন বিপর্যন্ত।
পৌর সুপার মার্কেটের ব্যবসায়ী ইমতিয়াজ আহমেদ বুলবুল বলেন, লোড শেডিং আর প্রচন্ড গরমে মার্কেটে বেচাকেনা নেই।নিউ মার্কেটের আরেক ব্যবসায়ীকে মোমবাতি জালিয়ে ব্যবসা করতে দেখা গেছে।
নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী মেঘনা ইলেকটনিস-এর মালিক নয়ন মিয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, ভাই দেখতেছেন তো আমাদের কী অবস্থা। বিদ্যুতের কারণে আজ মোমবাতি জ্বালিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে।একই কথা বলেন সাদিয়া ইলেকট্রনিস-এর মালিক আব্দুস সালামও বলেন।
শহরের দালাল বাজারের আফরোজা বেগম বলেন, “ভাই আমার মেয়ের এসএসসি পরীক্ষা আর কয়েকদিন পরে; কিন্তু বিদ্যুদের কারণে মেয়ে পড়াশুনা করতে পারছে না। বিদ্যুৎ আসলে ঠিকমত এক ঘণ্টা থাকে না। মহাদেবপুর এলাকার গৃহবধূ কোহিনুর আক্তার কেয়া বলেন, “সরকার বলছে বিদ্যুতের সংকট নেই; তাহলে কেন এত লোড শেডিং?”
সার্বিক বিষয়ে জানতে পল্লী বিদ্যুতের জিএম জাকির হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “লক্ষ্মীপুর জেলায় পল্লী বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, দিনের বেলায় লক্ষ্মীপুর জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ৬০০ মেগাওয়াট। সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৪০০ মেগাওয়াট। সন্ধ্যার পর থেকে চাহিদা ৭০০ মেগাওয়াট। পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ ৫০০ মেগাওয়াট। এ অবস্থা সাময়িক দাবি করে ওই প্রকৌশলী আরও বলেন, “আশা করি দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।”
সময় জার্নাল/এলআর