এস কে দোয়েল : পল্লী কবি জসীম উদ্দিনের সেই নকশী কাঁথা তৈরি করে নকশী আপু হয়েছেন এক নারী উদ্যোক্তা। নকশী কাঁথা তৈরি করে সাফল্যের পথে। প্রতিনিয়ত বাড়ছে ক্রেতার সংখ্যা। অনলাইনে আসছে অর্ডার। ক্রেতাদের কাছে হয়ে উঠেছেন নকশী আপু। নারী এ উদ্যোক্তা উত্তরের সীমান্তবর্তী পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার সাগরিকা চৌধুরী রুমা।
মহামারি করোনা ভাইরাসে চলাকালিন লকডাউনে ঘরে আবদ্ধ থাকার বোরিং সময়কে কাজে লাগাতে বেছে নেন নকশী কাথার কাজ। ছোট বেলা থেকেই সুই সুতার কাজের প্রতি একটা ভালোলাগা কাজ করা হয় নিজের জামাগুলোতে করতেন নকশার কাজ। পাশাপাশি এলাকার স্মৃৃতির আপুর কাছ থেকে হাতে খড়ি করে তুলেন অভিজ্ঞতা। সে অভিজ্ঞতার আত্মবিশ্বাস নিয়ে গত বছর ১৮ জুলাই থেকে বাণিজ্যিক লক্ষে শুরু নকশিকাঁথার কাজ। এভাবেই বলছিলেন উদ্যোক্তা সাগরিকা।
মাত্র ৭ হাজার টাকা নিয়ে শুরু করেন নকশি কাঁথার কাজ। অনলাইন মার্কেট থেকে কিনেন কাঁথার কাপড়, সুই সুতা, ফ্রেম এবং অন্যান্য সরঞ্জামাদি। প্রতিষ্ঠানের নাম দিয়েছেন এস আর হ্যান্ডিওয়ার্ক। মাত্র এক বছরেই কঠোর পরিশ্রম, ধৈর্যের মধ্য দিয়ে এখন লাখ পেরিয়েছে সেলস্ কার্যক্রম।
কাজের পরিচিতি ও অনলাইনে মার্কেট নিজের পণ্য তুলে ধরতে যুক্ত হন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের ‘উই গ্রুপে’। গ্রুপে যুক্ত হয়ে তৈরি হয় নতুন অনুপ্রেরণা। মেনে চলেন উই আর ডি এস বির নির্দেশনা। ফেসবুক গ্রুপ ও অনলাইনে শেয়ার পর থেকেই আসতে থাকে ক্রেতাদের অর্ডার। তখন বড় কাঁথার সাথে বেবিদেরও কাঁথা সেলাই কাজ। সেই টাকা দিয়ে কাঁথার জিনিস কিনে আবার কাঁথা তৈরি করতেন। নকশিকাঁথার কাজের মধ্য দিয়ে নিজ এলাকায় বেড়েছে বেশ পরিচিতি।
প্রথম দিন মেহেদী, রনি ও আলহাজ্ব বিপ্লব নামের বেশ কয়েকজন ক্রেতার কাছ থেকে কাজের অর্ডার পান সাগরিকা। সময় নিয়ে কাজগুলো করে সাপ্লাই দেন। কাজের শুরুতে কাস্টমারের অর্ডারগুলোর সাপ্লাই দিতে একটু সমস্যা হতো। আত্মীয়ের মাধ্যমে পাঠানো হতো পার্সেল। দূরের অর্ডারগুলো সপ্তাহ পর পর ৫২ কিলোমিটার পারি দিয়ে জেলা শহর পঞ্চগড়ে গিয়ে কুরিয়ার করতেন।
উদ্যোক্তা সাগরিকা জানান, প্রথমদিকে আমার হাজব্যান্ডও রাজি ছিল না এ কাজ করি। পরে আমার কাজের আগ্রহ দেখে সাপোর্টসহ আগ্রহ বাড়াতে থাকে। সে রাজি ছিল না এ কারণে, কাজে ব্যস্ততা থাকলে একমাত্র ২ বছরের ছেলেকে সময় দিবে কিভাবে। কিন্তু সবকিছু সামলিয়ে নিয়ে চালিয়ে গেছি আমার কাজ। প্রজেক্টে কোন হ্যাল্পিং হ্যান্ড না থাকলেও সংসার সামলিয়ে অনার্স ৪র্থ বর্ষে পড়ালেখা করছি।
শুরুতে মানুষজন নানা ধরনের কথা বলতো, হাসবেন্ড চাকরি করে আর আপনি নকশিকাঁথা সেলাই করেন কেন, কি দরকার এতো পরিশ্রমের, টাকার অভাব নাকি? নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হলেও ওদের কথায় কান না দিয়ে নিজের লক্ষ্যে এগিয়ে গেছি।
এ নারী উদ্যোক্তা কাজ করছেন ছোট বড় নকশিকাঁথা, নকশী বিছানার চাদর, নিমা-ন্যাপি, বেবি ড্রেস ও দেশীয় শাড়ি। বেশ সময় লাগে তা করতে। সময় লাগলেও বেশ চাহিদা রয়েছে এ নকশী কাথার। প্রায় এক বছরে লাখ পেরিয়েছে বিক্রয়। তার অনুপ্রেরণা পেয়ে আইরিন নাহার আপু, রাজিয়া সুলতানাসহ অনেকেই।
সাগরিকার স্বামী হারুন অর রশীদ জানান, প্রথম দিকে সংসারের দিক চিন্তে করে সাপোর্ট না করলেও পরে ওর ইচ্ছেটাকে প্রাধান্য দিয়েছি। অনুপ্রেরণাসহ সার্বিক সহযোগিতা করছি। একটু সমস্যা যে, তেঁতুলিয়ায় তেমন কুরিয়ার সার্ভিস ভালো সার্ভিস নেই। মাঝেমধ্যে আমাকেও জেলা শহরে গিয়ে ডেলিভারির জন্য কুরিয়ার করতে হয়।
শূন্য পুজি থেকে লাখ টাকায় পৌঁছে যাওয়া এ উদ্যোক্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করছেন নারী কর্মসংস্থানের। সেখানে কাজ শিখবে বর্তমান সরকার উদ্যোক্তাদের প্রণোদনা ও অর্থ ঋণ দিচ্ছেন। সে প্রণোদনা চান সাগরিকাও। এ আর্থিক প্রণোদনা সহযোগিতা পেলে ব্যবসার প্রসার ঘটিয়ে গড়ে তুলবেন নারী কর্মসংস্থান।
সময় জার্নাল/এসএ