মো. মাইদুল ইসলাম: নিজের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য গ্রাফিক্স ডিজাইন শেখা। সংকটকালে সেটা দিয়েই পরিবারের হাল ধরেছেন, মেয়েদের আইটি শেখাতে গড়ে তুলেছেন 'Women IT Hub'। বলছিলাম চট্টগ্রামের মেয়ে উদ্যোক্তা, ফ্রিল্যান্সার, She Power Project এ সর্বোচ্চ আয়কারী ফ্রিল্যান্সার আসমিকা তাবাস্সুম মিথিলার কথা। তার সফল ফ্রিল্যান্সার ও উদ্যোক্তা হওয়ার আদ্যোপান্ত জানালেন সময় জার্নালকে।
অনার্স ১ম বর্ষে থাকালীন মামার পরামর্শে নিজের দক্ষতা বাড়ানোর জন্য শেখেন গ্রাফিক্স ডিজাইন। তারপর শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং , আর এই ফ্রিল্যান্সিং করেই ১ম বর্ষে থাকালীনই পুরো পরিবারের ভাঁড় বহন করেন তিনি। শুরু হয় জীবনের যুদ্ধ, অনেক রাত না ঘুমিয়েই পার করেছেন, কাজ করতেন রাত জেগে। কারন যত বেশী কাজ করবে; ততো বেশী ফ্যামিলিকে সাপোর্ট দিতে পারবে। এমনকি ফাইনাল পরীক্ষার আগের রাতেও কাজ করতে হয়েছে তাকে। পরীক্ষা দিতে যাওয়ার এক ঘন্টা আগেও কাজ করার মত নানা কঠিন অভিজ্জতার কথা জানালেন তিনি। এতসব কাজের মাঝেও অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছেন তিনি।
অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে এসে একটা সফটওয়্যার কোম্পানিতে জয়েন করেন। পাশাপাশি চালিয়ে যান ফ্রিল্যান্সিং ও পড়াশোনা। এরই মাঝে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আয়কারী ফ্রিল্যান্সারদের তালিকায় তার নাম উঠে।
মিথিলা জানান, একসময় আমি লুকাতাম ফ্যামিলি আমি চালাই; এটা বলতে আমার লজ্জা লাগতো। কিন্তু এখন আর পাই না। কারণ এটা লজ্জার জিনিস না বরং এটা আমার সৌভাগ্য যে আল্লাহ আমাকে পরিবারের দায়িত্ব নেয়ার তৌফিক দান করেছে।
তিনি জানান, অনার্স শেষ করার আগের থেকে প্ল্যানিং ছিলো, এতদিন যতটুকু জ্ঞান আহরণ করেছি তা এবার আমার মতো মেয়েদেরকে শিখাবো। কিন্তু আব্বুকে কোনভাবে রাজি করাতে পারছিলাম না কারণ 'আমি একজন মেয়ে'। এসব ব্যবসা না করে যাতে জব করি। বিয়ে করতে হবে তাই।
কিন্তু তিনি কোনভাবে হার মানতে রাজি না। বাবাকে রাজি করিয়ে শুরু অনার্স শেষ বর্ষের শেষ পরীক্ষা দিয়েই নিজের জমানো টাকা দিয়েই শুরু করলেন শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য এবং মেয়ে ট্রেনার দ্বারা পরিচালিত 'Women IT Hub' নামে মেয়েদের আইটি শেখার প্ল্যাটফর্ম।
সুধু মেয়েদের জন্য আইটি শেখার প্ল্যাটফর্ম গড়ার কারন জানালেন তিনি। এটার একটাই কারণ যাতে মেয়েরা আইটি সেক্টরে আসতে আগ্রহী হয়। তিনি আরও জানালেন শুরুর পর বেশ সাড়া পেয়েছেন।
শুরুতে তার বাবা 'ওমেন আইটি হাব' দেয়ার বিপক্ষে থাকলেও; সেই বাবাই এখন বেজায় খুশি।
আসমিকা তাবাস্সুম মিথিলা জানান, আমি বিশ্বাস করি আমার আব্বু আম্মুর দোয়া সব সময় আমার সাথে আছে; তাই যেকোন কাজ করতে পারবো আমি।
তাছাড়া আমার মতে সফলতার কোন লিমিট নেই, একদিনেও হয়না, আমরা আমাদের লক্ষ্যগুলো পূরণ করে আরো ভালো ভালো কাজ করাটাই এক একটা সফলতা।
আসমিকা তাবাস্সুম মিথিলার শুরুটা হয়েছিল 'ফ্রিল্যান্সিংয়ের জমানো টাকা দিয়ে', যেটা এখন একটা কোম্পানি 'ওমেন আইটি হাব'।
শুধুমাত্র ওমেন আইটি হাব গড়ে থেমে নেই মিথিলা। মেয়েদের জন্য করেছেন সংগঠন 'Women in Ict, Bangladesh(BwinIct)' যেখানে যেসব মেয়েরা বাহিরে এসে শিখতে পারে না বা ল্যাপটপ অথবা কম্পিউটারের অভাবে শিখতে পারছে না তাদেরকে বাসায় গিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
সময় জার্নাল/এমআই