সময় জার্নাল প্রতিবেদক, ঢাকা : করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় টেউ মোকাবিলায় জনগণকে সম্পৃক্ত করতে ‘সর্বদলীয় কমিটি’ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন বিএনপি। শুক্রবার এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই প্রস্তাব দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা আবারো প্রস্তাব রাখছি, এখনো সময় আছে সর্বদলীয় কমিটি গঠন করে, জনগণকে সম্পৃক্ত করলেই শুধুমাত্র এই সমস্যার সমাধান করা যাবে। একটা কথা আমরা জোর দিয়ে বলতে চাই, বিশাল চ্যালেঞ্জ জনগণের সম্পৃক্ততা ছাড়া সম্ভব নয়। আমরা এর আগেও বলেছি, রাজনৈতিক দল, সংগঠন, ব্যক্তি সকল স্তরের মানুষকে এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে এবং সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। মানুষকে এই ব্যাধির যে ভয়াবহতা সেই সম্পর্কে তাদেরকে ধারণা দিতে হবে এবং তাদের সম্পৃক্ত করতে হবে। আসুন আমরা জাতীয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে এই সংকট মোকাবিলায় উদ্যোগ নেই মানুষ বাঁচাই, দেশ বাঁচাই।
তিনি বলেন, এখন যেটা সবচেয়ে বড় প্রয়োজন, মানুষের জীবন ও জীবিকাকে রক্ষা করা। আমরা সরকারকে আহ্বান করবো, আজকে প্রতিটি ইনফরম্যাল সেক্টারের যারা উদ্যোক্তা আছেন তাদেরকে যথেষ্ট পরিমাণ প্রণোদনা দিতে হবে।
এই ইনফারম্যাল সেক্টারে যারা কাজ করছেন, শ্রমিক রয়েছেন বিভিন্ন দোকান-শিল্প কলকারখানায় তাদেরকেও ভাতা প্রদান করতে হবে এবং সেটা যত দিন এই সমস্যা থাকবে বিশেষ করে লকডাউন থাকবে তাদেরকে ভাতা প্রদান করতে হবে। বিশেষ করে যারা একেবারে দিন আনে দিন খায়, তাদেরকে ব্যাপক হারে ত্রাণ সামগ্রি দিতে হবে তাদের বেঁছে থাকার জন্য, টিকে থাকার জন্য।
সকল মানুষের জন্য করোনার টিকা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে যেটা জানতে পেরেছি, বাংলাদেশকে যদি আপনার হার্ড ইম্যুনিটির মধ্যে আনতে হয় তাহলে কমপক্ষে সাড়ে ১২ কোটি মানুষকে টিকা দিতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, সাড়ে ১২ কোটি টিকার এখন পর্যন্ত কোনো সংস্থান হয় নাই। আমরা আজকে দেখলাম, চীন ও রাশিয়া থেকে তারা টিকা আনার কথা ভাবছে। এখন আমাদের এই মুহুর্তে দরকার। এক বছর আগে থেকে এটা করলেন না। এক বছর ব্যস্ত থাকলেন তাদের বিভিন্ন বর্ষ উদযাপনের জন্য, মেগা প্রজেক্ট, ডেভেলমেন্ট প্রজেক্ট সেগুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকলেন।
আজকে আমরা প্রস্তাব রাখতে চাই, মানুষের মধ্যে হার্ড ইম্যুনিটি তৈরি করার জন্য সাড়ে ১২ কোটি টিকা সংগ্রহ করতে হবে। এই টিকা সংগ্রহ করার জন্য সরকারের উচিত হবে এখনই এই মুহুর্তে ব্যবস্থা গ্রহণ করা, রোডম্যাপ তৈরি করা কিভাবে আসবে, কিভাবে বিতরণ হবে, কিভাবে যাবে জনগণের কাছে।
করোনা মোকাবিলায় বিভিন্ন হাসপাতালে বেড ও আইসিইউ সংকট, করোনা পরীক্ষার অপ্রতুলতাসহ যে দুরাবস্থা চলছে তার জন্য সরকারের ‘ব্যর্থতা, উদাসীনতা, সমন্বয়হীনতা ও অব্যবস্থাপনা’কে দায়ী করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা দেখতে পারছি, গত বছর এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত করোনা টেস্ট করা হয়েছিল ১০ লাখ ৭ হাজার ৭০৩ জনের। এবার আমরা দেখতে পারছি এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে টেস্ট করা হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজারের মতো। অর্থাত এবার কিন্তু টেস্ট বেশি করা উচিত ছিল, সেটাও করতে পারেনি। মহামারি মোকাবিলায় সার্কভুক্ত দেশগুলোর ধারে কাছে আমরা যেতে পারিনি।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা যেটা দেখছি, সরকার যে লকডাউন ঘোষণা করেছে সেটা ক্যারিআউট হচ্ছে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতু মন্ত্রী বলেছেন , ১৪ তারিখ থেকে নাকি সর্বাত্মক লকডাউন করা হবে। আমরা জানি না সর্বাত্মক লকড়াউনের অর্থটা কী? জনগণ জানে না এবং তার বিকল্প কি ব্যবস্থা করা হয়েছে সেই সম্পর্কেও জনগণ জানে না। সর্বাত্মক লকডাউন করা বিশেষ করে রোজার সময়ে সেটা কিভাবে সমন্বয় করা হবে সে সম্পর্কে কোনো রোডম্যাপ দেয়া হয় নাই।
তিনি বলেন, সর্বাত্মক বা শক্ত লকডাউনে যখন যাবে বিশেষ করে শ্রমিকরা, সাধারণ মানুষরা যারা দিন আনে দিন খায়, যারা দিনমজুরের কাজ করে, রিকশা চালায়, বাসায় কাজ করে, ইনফরম্যাল সেক্টারগুলোতে কাজ করে, যারা ছোট ছোট ফ্যাক্টরিতে কাজ করে তাদের ব্যবস্থা কি হবে তা এখন পর্যন্ত আমরা জানি না। গত বারের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি সরকার একটা প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছিলেন, সেই প্রণোদনা কিন্তু সাধারণ মানুষের খুব বেশি উপকার হয়নি বরঞ্চ দুর্নীতি বেশি হয়েছে।
স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীর উদযাপনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকায় সফরের সময়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বি'বাড়িয়ায় সংঘটিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সরকার অসংখ্য মিথ্যা মামলা, গ্রেপ্তার ও নির্যাতন চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। অতিসম্প্রতি ফরিদপুরে সালতা সাধারণ মানুষের সঙ্গে সংঘর্ষের পর সাধারণ মানুষজনসহ বিএনপির বেশিরভাগ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ঘটনা সরকারের ‘হীন চক্রান্ত ও বিএনপিকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র’ বলে এহেন সরকারি ততপরতার নিন্দা জানান তিনি।
সময় জার্নাল/এসএ