নিজস্ব প্রতিবেদক:
চট্টগ্রামের বিশিষ্ট গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক এবং বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি জনাব এস এম আবু তৈয়বের একমাত্র মেয়ের রাজকীয় গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে দেড় হাজার গার্মেন্টস কর্মী খাওয়ানোর কথা নিশ্চয়ই সবার মনে আছে। সে যেন ছিল এক নজিরবিহীন ও মালিক- শ্রমিকের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের এক অনন্য উদাহরণ। অথচ তার সেই মেয়ের শ্বশুর, ঢাকার বিয়াই আসলাম মোল্লা যেন একেবারেই মুদ্রার অন্য পিঠ। যেন প্রদীপের নীচেই অন্ধকার।
এই আসলাম মোল্লা ঢাকার শ্যামপুর থানার সাবেক কমিশনার এবং বিএনপির ঢাকা ৪ আসনের সাবেক এমপি সালাউদ্দিনের ভগ্নিপতি।আসলাম মোল্লার নামে রয়েছে একাধারে প্রতারক,ঋণখেলাপি, চাঁদাবাজ ,অর্থ পাচারকারী ও জালিয়াতির অভিযোগ। আসলাম দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ও প্রভাবশালী আত্মীয়-স্বজনের পরিচয় ব্যবহার করে জমি জবর-দখল ও জালিয়াতির মাধ্যমে গড়ে তুলেছেন পাহাড়সম বিত্তবৈভব ।পুরান ঢাকার শ্যামপুরে তার ছয় তলা বাড়ি ও বিশাল সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন জনের অর্থ আত্মসাৎ করে বর্তমানে গুলশান-বারিধারার আবাসিক এলাকার নিরাপত্তা বলয়ে আত্মগোপন করে আছেন। এখানে এসেও আসলাম নিরবে -নিভৃতে তার অসৎ ও অনৈতিক কার্যক্রম নির্দ্বিধায় চালিয়ে যাচ্ছে। ডেভেলপার ব্যবসার নামে জমি দখল করাই তার অন্যতম উদ্দেশ্য ।ভুক্তভোগীরা তার হুমকি-ধামকী ও নির্যাতনের ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পাননা।মুখ খুললে দেয়া হয় প্রাণনাশের হুমকি। এদের মধ্যে একজন ভুক্তভোগী অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা জনাব আবু বকর শিবলী (৭৫) ।মুখোশধারী আসলামের প্রতারণা ও জালিয়াতির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে তিনি বাধ্য হয়েছেন। ভুক্তভোগী জনাব আবু বকর শিবলী তার যমুনা ফিউচার পার্ক সংলগ্ন জগন্নাথপুর সোসাইটির দশ কাঠার একটি প্লট আবাসিক ভবন নির্মাণের জন্য ২০১১ সালে সমতা বিল্ডার্স লিঃ সাথে চুক্তিবদ্ধ হন।ভবনের পাইলিংসহ দ্বোতলার ছাদ ঢালাই সম্পন্ন হবার পর ২০১৫ সালে মোল্লা কনস্ট্রাকশন এন্ড প্রপার্টিজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এই আসলাম মোল্লা, সমতা বিল্ডার্সের কাছ থেকে পুরো শেয়ার কিনে নিয়েছে এই মর্মে, দ্বিতীয় দফায় জোর পূর্বক শিবলীকে তার সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে বাধ্য করেন।চুক্তির শর্ত অনুযায়ী ২০১৮ সালে ফ্ল্যাট হস্তান্তর করার কথা থাকলেও অদ্যাবধি ফ্ল্যাট নির্মাণ কাজ শেষ করছে না । এমনকি চুক্তির শর্ত অনুযায়ী জনাব শিবলীর প্রাপ্য ১৫ টি ফ্লাটের প্রতিমাসের ভাড়া বাবদ ১৫০,০০০ টাকা দেয়ার কথা থাকলেও তা দিচ্ছেন না। যার ফলে এ পর্যন্ত ৬৫ লাখ টাকা জমির মালিক শিবলী সাহেব পাওনা হয়েছেন।অথচ আসলাম তার ভাগের ১৫টি ফ্ল্যাট অনেক আগেই বিক্রি করে সব টাকা আত্মসাৎ করেছে।শিবলী সাহেব তার বিল্ডিং বসবাস উপযোগী ও ভাড়াবাবদ পাওনা টাকা চাইতে গেলে নিরীহ
শিবলী সাহেবকে সন্ত্রাসী আসলাম মোল্লা নানা রকম হুমকী-ধামকী ও প্রাণ নাশের হুমকী প্রদর্শণ করে যাচ্ছ।এ ব্যাপারে জনাব শিবলী সাহেব ঢাকার ভাটারা থানায় একটি জিডি করেছেন, জিডি নং-(৭৭৫)।জনাব শিবলী সাহেবের স্ত্রী দীর্ঘদিন যাবত ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী,যার চিকিৎসা ব্যয় বহন করাও এখন তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে গেছে। যার ফলে তাদের জীবন এখন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। উপরন্তু ভবন নির্মাণের বিপরীতে ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে লোন শোধ করছেন না। উল্টো সে ব্যাংকে প্রভাবশালী বেয়াই তৈয়বের আত্মীয় পরিচয় দিয়ে ব্যাংকের অফিসারদের হুমকি ধামকি প্রদান করে যাচ্ছে। অন্যদিকে এক ফ্ল্যাট একাধিক মানুষের কাছে বিক্রি করে জালিয়াতি ও প্রতারণা করে যাচ্ছে। নির্মাণ শ্রমিকদের পারিশ্রমিকও দীর্ঘদিনের বকেয়া রেখেছে, ঈদের সময়ও গরীব দিনমজুর ও তার কর্মচারীদের বেতন বোনাস পরিশোধ করেনি অথচ সে নিজে সংশ্লিষ্ট সবার অর্থ আত্মসাৎ করে বিলাসী জীবনযাপন করছে, বারিধারার পার্ক রোডে অত্যাধুনিক ফ্ল্যাটে বসবাস করছে এবং বিলাসবহুল পাজেরো গাড়ি চালাচ্ছে। তার মুঠোফোনে বারবার কথা বলার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যাচ্ছেনা। তার বারিধারার অফিসে যোগাযোগ করলে জানা যায় আসলাম পলাতক।আসলাম তার প্রভাবশালী আত্মীয়-স্বজনের ছত্র-ছায়ায় থেকে এভাবে দিনের পর দিন নিরীহ মানুষজনের সাথে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে প্রচুর অর্থের পাহাড় গড়ে তুলেছেন। পুরান ঢাকার শ্যামপুরে তার প্রচুর সম্পদ,ঢাকার বাইরে তার জুট মিল ও গাজীপুরে ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্লটসহ নামে- বেনামে গড়েছেন বিশাল অর্থ বৈভব।এমতাবস্থায় কোন উপায়ান্তর না পেয়ে জনাব শিবলী সাহেব সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ পূর্বক যথাযথ ব্যাবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানিয়েছেন।
শিবলী তার জীবনের শেষ সম্বলটুকু বুঝে পাওয়ার আবেদন জানিয়েছেন যা দিয়ে তিনি তার শয্যাশায়ী স্ত্রীর চিকিৎসা চালাতে পারেন। শিবলীর একমাত্র পুত্রবধূ বৈশাখী টেলিভিশনের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও সংবাদ পাঠিকা লাবণ্য হাসানকে মুঠোফোনে এ ঘটনার সত্যতা জানতে চাইলে তিনি এইসব ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন।
এমআই