সময় জার্নাল ডেস্ক : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর জলবায়ু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শত বিলয়ন ডলারের বৈশ্বিক তহবিল গঠন করবে।
সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি আজ রাজধানীতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ.কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিশ্রুতির কথা জানান।
প্যারিস চুক্তির অংশ হিসাবে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সমস্যা মোকাবেলায় ঝুকিপূর্ণ দেশগুলোকে সহায়তা প্রদানে ২০২০ সাল থেকে প্রতি বছরে একশত বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি বৈশ্বিক তহবিল গঠনের কথা রয়েছে। অথচ চুক্তির এই প্রতিশ্রুতি পূরণ এতদিন সম্ভব হয়নি।
প্যারিস চুক্তির পর জলবায়ু তহবিলে যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব তহবিল থেকে তিন বিলিয়ন মার্কিন ডলার দেয়ার প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে জন কেরি সাংবাদিকদের বলেন, বাইডেন ইতোমধ্যে জলবায়ু তহবিলে প্রদানের জন্য বাজেটে দুই বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিয়েছেন। বিদায়ি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই অর্থ বরাদ্দ বাতিল করে দিয়েছিলেন।
সাবেক মাকির্ন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি উল্লেখ করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণের আগে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ি ওবামা প্রশাসন জলবায়ু সংকট মোকাবেলায় বৈশ্বিক জলবায়ু তহবিলে এক বিলিয়ন মাকির্ন ডলার দিয়েছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন দায়িত্ব নেয়ার পর বাজেটে বরাদ্দ দেয়া বাকি দুই বিলিয়ন ডলার আর তহবিলে দেয়া হয়নি। এটি বাতিল করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস চুক্তিতে ফিরে আসার পর সাবেক মাকির্ন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ু বিষয়ক বিশেষ দূত নিযুক্ত হন। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন প্যারিস চুক্তি থেকে নিজেদেও গুটিয়ে নিয়েছিল।
মাকির্ন বিশেষ দূত কেরি বলেন, তার দেশ জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বাংলাদেশের সাথে একসঙ্গে কাজ করছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেন, বছরে কমপক্ষে একশত বিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি জলবায়ু তহবিল গঠনের ব্যাপারে জন কেরি আশাবাদি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বছরে একশত কোটি ডলারের একটি জলবায়ু তহবিল দেখতে চান।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন, পরিবেশ মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, ক্লাইমেট ভলনারেবল ফোরাম প্রেসিডেন্সের বিশেষ দূত আবুল কালাম আজাদ এবং সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি’র সঙ্গে বৈঠক শেষে এই যৌথ প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, আজকের বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তন এডাপশন ও মিটিগেশন, ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট, টেকনোলজি ট্রান্সফার এবং জলবায়ু অর্থায়নের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সহযোগিতার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য ভালো কিছু করতে আমাদের লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারিত্বে সহযোগিতার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি।
ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মার্কিন এই দূতকে অবহিত করা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত কারনে বাংলাদেশে প্রতিবছরে নদী ভাঙ্গনে হাজার হাজার লোক সর্বস্ব হারাচ্ছে। তিনি বলেন, কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ায় সেখানে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। সেখানে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়া হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে যুক্তরাষ্ট্র সক্রিয় ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কেরি বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন এবং সে দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে তার দেশ গুরুত্ব দিচ্ছে। জন কেরি রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা প্রদানে প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের পুরো দায়ভার বাংলাদেশের একার পক্ষে নেয়া সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেও এগিয়ে আসতে হবে।
জন কেরি মিয়ানমারে তার ব্যাক্তিগত সফর এবং জেনারেলের সঙ্গে অনুষ্ঠিত তার বৈঠকের কথা উল্লেখ করে বলেন, সে দেশে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু মিয়ানমারের সামরিক জান্তা কোন কথাই শুনতে চাচ্ছে না।
জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দেয়া আমন্ত্রণ পত্র হস্তান্তর করতে জন কেরি আজ সকালে বাংলাদেশ সফরে আসেন।
যৌথ সংবাদ সম্মেলনের পর জন কেরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং আমন্ত্রণ পত্রটি হস্তান্তর করেন।
আগামী ২২ ও ২৩ এপ্রিল ভার্চ্যুয়ালি এই জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। মাকির্ন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই সম্মেলনে যোগ দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিশ্বের ৪০জন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
ঢাকায় মাকির্ন দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শীর্ষ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহের নেতৃত্বের স্বীকুতি দেয়া হবে। এতে বলা হয়, ক্লাইমেন্ট ভলনারেবল ফোরামের এবং অর্থমন্ত্রীদের ভলনারেবল ২০ গ্রুপের চেয়ার হিসাবে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনে আন্তর্জতাতিক প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
জন কেরি বিকেল ৫টা ৪৮ মিনিটে ঢাকা ত্যাগ করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে বিদায় জানান।