শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

প্রদীপ পুলিশি ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ ও দুর্নীতির অর্থ দিয়ে স্ত্রীর নামে সম্পত্তি গড়েন

বুধবার, জুলাই ২৭, ২০২২
প্রদীপ পুলিশি ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ ও দুর্নীতির অর্থ দিয়ে স্ত্রীর নামে সম্পত্তি গড়েন

সময় জার্নাল ডেস্ক: পুলিশি ক্ষমতার অপব্যবহার ও ঘুষ–দুর্নীতির মাধ্যমে কক্সবাজারের টেকনাফ থানার বরখাস্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ তাঁর স্ত্রী চুমকি কারণের নামে সম্পত্তি গড়েছেন। আজ বুধবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলার রায় ঘোষণার আগে পর্যবেক্ষণে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মুনসি আবদুল মজিদ এসব কথা বলেন।আজ বেলা ১১টা ৭ মিনিটে বিচারক এজলাসে আসেন। ওই সময় তিনি বলেন, পুরো রায় পড়তে দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগবে। রায়ের উল্লেখযোগ্য অংশগুলো পড়ে শোনানো হচ্ছে। এর আগে তিনি আসামি প্রদীপ ও চুমকি উপস্থিত আছেন কি না, তা জানতে চান। তখন কাঠগড়ায় থাকা প্রদীপ উপস্থিত আছেন জানান; একইভাবে চুমকিও জানান।


এজলাসে বিচারক লিখিত পর্যবেক্ষণে বলেন, ‘আসামি প্রদীপ কুমার দাশ প্রজাতন্ত্রের স্বল্প বেতনভোগী একজন কর্মচারী। আসামি চুমকি কারণ উক্ত কর্মচারীর স্ত্রী। যিনি নিজে একজন গৃহবধূ। আসামি প্রদীপ কুমার দাশ পুলিশি ক্ষমতার অপব্যবহার করতেন; ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে রোজগারকৃত অবৈধ উপার্জন হস্তান্তর, স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে স্বীয় স্ত্রী আসামি চুমকি কারণের নামে জমি, ফ্ল্যাট, বাড়ি, গাড়ি ইত্যাদি স্থাবর–অস্থাবর সম্পদ গড়েছেন। আসামি চুমকি কারণের নিজস্ব কোনো আয়–উপার্জন না থাকা সত্ত্বেও আসামি প্রদীপ কুমার দাশের অবৈধ উপার্জনকে বৈধ করার কৌশল হিসেবে তাঁকে (চুমকি কারণ) মৎস্য ব্যবসায়ী ও কমিশন ব্যবসায়ী হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে।’


পর্যবেক্ষণে বিচারক আরও বলেন, ‘এ ছাড়া দাখিল করা সম্পদবিবরণীতে ২০ ভরি স্বর্ণালংকারের তথ্য গোপনসহ অন্যান্য স্থাবর সম্পদের মূল্যকে কম দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে অপরাধে অবতীর্ণ হয়েছে, যা দুদকপক্ষ মৌখিক, দালিলিক ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য দ্বারা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।’দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ঘুষ ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রদীপ তাঁর অর্জিত অর্থকে স্ত্রীর নামে দেখিয়েছেন, যা রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক তুলে ধরেছেন।

রায় ঘোষণা


পর্যবেক্ষণগুলো পড়ে শোনানোর পর বিচারক রায় পড়া শুরু করেন। বিচারক বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪–এর ২৬ (২) ধারা অপরাধে চুমকি কারণকে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, এক লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হলো। প্রদীপ কুমার দাশকে এই ধারা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। আসামি চুমকি ও প্রদীপকে দুদক আইন ২০০৪–এর ২৭ (১) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাঁদের প্রত্যেককে ৮ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে ছয় মাস করে কারাদণ্ড এবং আসামিদের জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ উপায়ে অর্জিত নগরের পাথরঘাটায় অবস্থিত লক্ষ্মীকুঞ্জ ভবনের ষষ্ঠ তলায় ওপর দুটি কক্ষ, নগরের পাঁচলাইশের বাড়ি, কক্সবাজারের ঝিলংজা মৌজার একটি ফ্ল্যাট ও একটি মাইক্রোবাস ও কার রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করা হলো। ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারাসহ দণ্ডবিধির ১০৯ ধারার অপরাধে প্রদীপ ও চুমকিকে দুই বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার করে টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই বছর করে কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো।


মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২–এর ৪ (২) ধারায় তাঁদের দুজনকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও ৪ কোটি টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও দুই বছর করে সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো। সব কটি সাজা একসঙ্গে চলবে।দুদকের আইনজীবী মাহমুদুল হক বলেন, পৃথক ৪টি ধারার মধ্যে প্রদীপকে ৩টি ধারায় ২০ বছরের এবং তাঁর স্ত্রীকে ৪টি ধারায় ২১ বছরের কারাদণ্ড দেন আদালত। সম্পদের তথ্য গোপনের ধারায় চুমকি এক বছরের বেশি সাজা পান। প্রদীপের সম্পদের অনুসন্ধান চলায় তিনি এ ধারা থেকে খালাস পান।

প্রদীপ কুমার দাশ ও স্ত্রী চুমকি কারন


কে এই প্রদীপ


চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের উত্তর কুঞ্জরী গ্রামে সাদামাটা এক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন টেকনাফ থানার সদ্য বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। তাঁর বাবা ছিলেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিরাপত্তাপ্রহরী। ১৯৯৫ সালে পুলিশে যোগ দেওয়া প্রদীপ কুমার দাশ চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় কর্মরত অবস্থায়ই ২০০৪ সালে এক নারীর জমি দখলের ঘটনায় বরখাস্ত হয়েছিলেন। পরে কক্সবাজারের চকরিয়ার এসআই হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। এরপর জেলার মহেশখালীতে ও সর্বশেষ টেকনাফের ওসি হিসেবে কাজ করেন।মামলা ও অভিযোগপত্র২০২০ সালের ২৩ আগস্ট দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে প্রদীপ ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পত্তি অর্জনের মামলা করেন। গত বছরের ২৬ জুলাই প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। এতে বলা হয়, পাথরঘাটায় ছয়তলা বাড়ি, ষোলোশহরের বাড়ি, ৪৫ ভরি সোনা, একটি করে কার ও মাইক্রোবাস, ব্যাংক হিসাব এবং কক্সবাজারের একটি ফ্ল্যাটের মালিক প্রদীপের স্ত্রী চুমকি কারণ। তাঁর ৪ কোটি ৮০ লাখ ৬৪ হাজার ৬৫১ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিপরীতে বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ২ কোটি ৪৪ লাখ ৬৬ হাজার ২৩৪ টাকার। তাঁর ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের সত্যতা পেয়েছে দুদক। এ ছাড়া চুমকি নিজেকে মৎস্য ব্যবসায়ী দাবি করলেও এর কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।

প্রদীপ কুমার দাশ



সম্পদবিবরণীতে চুমকি বোয়ালখালীতে থাকা খামারের মাছের ব্যবসা থেকে ২০০২ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে দেড় কোটি টাকা আয় দেখিয়েছেন। কিন্তু তা আয়কর রিটার্নে উল্লেখ নেই। চুমকি ভুয়া মাছের ব্যবসা দেখিয়েছেন। দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রদীপের স্ত্রীর নামে থাকা গাড়ি, বাড়ি ও ব্যাংক হিসাব রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে রাখার জন্য গত বছরের ২৯ জুন চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ নির্দেশ দেন। একই বছরের ১৫ ডিসেম্বর প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এ মামলার বিচার শুরু হয়। ২৯ জন সাক্ষীর মধ্যে ২৪ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। ১৮ জুলাই যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে আদালত রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।২০২০ সালের ৩১ জুলাই টেকনাফের বাহারছড়া তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। এ হত্যা মামলায় প্রদীপসহ দুজনের মৃত্যুদণ্ড ও ছয়জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। গত ৩১ জানুয়ারি এই রায় দেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত।




এসএম



Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল