মোঃ মোশাররফ হোসেন : বাসা থেকে বের হয়ে সীতাকুণ্ডের আশপাশে কিছুক্ষণ হাঁটলাম। বন্ধের দিনগুলোতে সারাদিন বাসায় বসে থাকতে একদমই ভালো লাগে না।
তপ্ত কাঠ-ফাটা রোদে হেঁটে বিশ্রাম নিচ্ছিলাম রেল স্টেশনের যাত্রী ছাউনিতে বসে। পাশেই দু'জন লোক বসে আছে। খুব সম্ভবত কোনো কনজিউমার প্রোডাক্টস কোম্পানীর এস আর বা আর এস এম হবে।
দু'জনের একজন পকেট থেকে ফোন বের করে কল দিলেন। ওপার থেকে কল রিসিভ করতেই খেলা শুরু! আপনি কোথায়?
কত টাকার অর্ডার কেটেছেন?
এ সপ্তাহের টার্গেটের কী খবর?
নতুন অফারটা জানেন?
নুডলসের সাথে লাচ্ছা সেমাই ফ্রি।
চিটাগং মেট্রোতে থেকে ১০,০০০ টাকার অর্ডার কেটেছে শুনেই এই লোকের চান্দি গরম হয়ে গেলো। বলে উঠলেন, লাত্থি মেরে মেট্রো থেকে বের করে দিবো। কর্ণফূলীতে চুবিয়ে মারা উচিৎ আপনাকে।
এতো কম অর্ডার কাটলে চাকরি করা লাগবে না। কাল-ই ছাঁটাই!ব্লাহ !ব্লাহ!ব্লাহ!আমি অন্যমনস্ক হয়েই শুনছি।
আর ভাবছি জগতে কতশত কোম্পানি, আর কত শত প্রোডাক্ট।কত বিচিত্র চাকরির ধরণ! কত গরম আর বর্বর সব বস।
এও ভাবছি কেউ স্বাদে এসব চাকরিতে জয়েন করে না। একেবারে নিরুপায় না হলে বসের অকথ্য ভাষায় গালাগাল শুনেও চাকরিটা কন্টিনিউ করছে। তার মানে চাকরিটা ছাড়া তিনি অচল। ভালো কোনো সুযোগ হয়তো তারা পাচ্ছে না।
আজ জিদের বশে, বসের ওপর রাগ করে যদি চাকরিটা ছেড়ে দেয় কাল হয়তো বউ, বাচ্চাকে নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে! তার থেকে ভালো বসের গালাগাল আর দোকানদারের খারাপ আচরণ সহ্য করে হলেও চাকরিটা ঠিক রাখতে হবে।
এমন হাজারো ব্যথা সয়ে জীবন আর জীবিকার তাগিদে মুখ বুঝে সহ্য করতে হচ্ছে নিদারুণ কষ্ট।শুধু স্ত্রী-সন্তানদের মুখে দু'বেলা দু'মুঠো অন্ন তুলে দিতে।হয়তো এভাবেই কেটে যাবে বাকি জীবন।
লেখক : বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত্ব বাণিজ্যিক ব্যাংকে কর্মরত।