নিজস্ব প্রতিনিধি: সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আশ্বাসে ধর্মঘট স্থগিত করেছেন সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা: মতিউর রহমান বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) বেলা পৌনে ১২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণার পর বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে কাজে যোগ দিয়েছেন তারা। একই সাথে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরাও তাদের আন্দোলন স্থগিত করেছেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠকে বসেন আন্দোলনকারীরা। বৈঠকটি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের হলরুমে আয়োজিত হয়। এতে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে ওসমানীর ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা: আব্দুল মোন্তাকিম চৌধুরী বলেন, মামলার প্রধান আসামি গ্রেফতার হয়েছে এবং ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার বাড়াতে প্রশাসন দ্রুততম সময়ে কার্যক্রম গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছে। এই আশ্বাসের ভিত্তিতে আমরা আমাদের আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করেছি। তবে সাত দিনের মধ্যে সব আসামি গ্রেফতার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না হলে আবার আন্দোলনে নামবো।
এর আগে, বুধবার মধ্যরাতে শাহপরান এলাকা থেকে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা মামলার প্রধান আসামি দিব্য সরকারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গত সোমবার (১ আগস্ট) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে কোতোয়ালি থানা পুলিশ মামলার আরো দুই আসামি সাঈদ হাসান রাব্বি ও এহসান আহমদকে গ্রেফতার করে।
এদিকে মামলার আসামিদের গ্রেফতারে বুধবার দুপুরে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আন্দোলনরত ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা।
এই সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হলে বহির্বিভাগসহ ওসমানী হাসপাতালের সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ারও ঘোষণা দেন তারা। বুধবার বিকেলে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার শেষে এ ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।
এর আগে দুপুরের দিকে ওসমানী হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা মেডিক্যাল সড়ক অবরোধ করেন। পরে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন।
ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের দুই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা ও হাসপাতালের এক নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে লাঞ্ছিতের প্রতিবাদ এবং দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে ১ আগস্ট সোমবার রাত থেকে আন্দোলন শুরু হয়।
মঙ্গলবার পুলিশ, হাসপাতাল প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সাথে আন্দোলনকারীদের বৈঠক হলেও কোনো সমঝোতা হয়নি। মূল অভিযুক্ত গ্রেফতার না হওয়ায় ওসমানী হাসপাতালের জরুরি ও হৃদরোগ বিভাগ ছাড়া সকল বিভাগে কার্যক্রম বন্ধ রাখেন ইন্টার্নরা।
বুধবার সকাল থেকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসনিক ভবনে তালা মেরে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। পরে তারা বিক্ষোভ করে দুপুর ২টার দিকে হাসপাতালের সামনের সড়ক অবরোধ করেন। এসময় সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে হাসপাতালের মূল ফটকও বন্ধ করে দেন তারা। ঘণ্টাখানেক পর প্রশাসনের অনুরোধে সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেন আন্দোলনকারীরা।
এ সময় কর্মবিরতি ও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়ে ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা: মতিউর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে মূল আসামিরা গ্রেফতার না হলে আমরা বহির্বিভাগ, জরুরি ও হৃদরোগ বিভাগসহ হাসপাতালের সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখবো।
ইন্টার্ন চিকিৎসকরা আন্দোলন করলেও হাসপাতালের সার্বিক চিকিৎসাসেবা স্বাভাবিক রয়েছে জানিয়ে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, তারপরও কিছু সমস্যা তো হচ্ছেই। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বড় একটা রোল প্লে করে। এটা সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোতেই। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি সমাধান হবে।
আন্দোলনকারীদের দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজের নিরাপত্তা জোরদার করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। হাসপাতালে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে জায়গা চূড়ান্ত করা হয়েছে।
অপরদিকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের দুই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা ও নারী ইন্টার্ন চিকিৎসককে লাঞ্ছিতের অভিযোগে আটজনকে আসামি করে মঙ্গলবার দুপুরে কোতোয়ালি থানায় দুটি মামলা দায়ের করা হয়। ওসমানী হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ হানিফ এবং ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের পিএ-টু প্রিন্সিপাল ও সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাহমুদুল রশিদ পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন।
দুই মামলার আসামিরা হলেন- দিব্য, আব্দুল্লাহ, এহসান, মামুন, সাজন, সুজন, সামি ও সাঈদ হাসান রাব্বি।
সময় জার্নাল/এলআর