বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

তিস্তার ভাঙনে চোখের সামনে বিলিন হচ্ছে বসতভিটা ও ফসলি জমি

সোমবার, আগস্ট ৮, ২০২২
তিস্তার ভাঙনে চোখের সামনে বিলিন হচ্ছে বসতভিটা ও ফসলি জমি

শাহিনুর ইসলাম প্রান্ত, লালমনিরহাট প্রতিনিধি:

পানি কমে যাওয়ায় ভাঙন বেড়েছে তিস্তাপাড়ে। চোখের সামনে বিলিন হচ্ছে বসতভিটা ফসলি জমি। মাথা গোঁজা ঠাঁই পেতে দিশেহারা তিস্তাপাড়ের মানুষ। ভাঙন আতংকে রয়েছে তিস্তা নদীর বামতীর ঘেঁষা প্রতিটি গ্রামের স্থানীয় মানুষরা।

স্থানীয়রা জানান, ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর নীলফামারী জেলার কালীগঞ্জ সীমান্ত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে ঐতিহাসিক তিস্তা নদী। যা লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার উপর  দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী বন্দর হয়ে ব্রক্ষপুত্র নদের সাথে মিশে যায়। দৈর্ঘ প্রায় ৩১৫ কিলোমিটার হলেও বাংলাদেশ অংশে রয়েছে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার। 

ভারতের গজলডোবায় বাঁধ নির্মানের মাধ্যমে ভারত সরকার একতরফা তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রন করায় শীতের আগেই বাংলাদেশ অংশে তিস্তা মরুভুমিতে পরিনত হয়। বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানি প্রবাহের ফলে বাংলাদেশ অংশে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্ঠি হয়। বন্যায় সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় তিস্তার বাম তীরের জেলা লালমনিরহাট।



তিস্তা নদী জন্মলগ্ন থেকে খনন না করায় পলি পড়ে ভরাট হয়েছে নদীর তলদেশ। ফলে পানি প্রবাহের পথ না পেয়ে বর্ষাকালে উজানের ঢেউয়ে লালমনিরহাটসহ ৫টি জেলায় ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি করে। এ সময় নদী ভাঙনও বেড়ে যায় কয়েকগুন। প্রতি বছরই নদী পরিবর্তন করছে তার গতিপথ। ফলে লালমনিরহাটে বিস্তৃর্ন জমি বালুময় চরাঞ্চলে পরিনত হচ্ছে।

বর্ষায় ভয়াবহ বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ভাঙন আতংকে পড়ে তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা। গেল সপ্তাহে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরপরই তীব্র ভাঙনের মুখে পড়ে নদীপাড়ের মানুষ। এক একটি পরিবার ৮/১০ বার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে সড়িয়ে নিয়েছেন বসত ভিটা। কেউ কেউ রাস্তার ধারে বা বাঁধের পাশে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

গত এক সপ্তাহে সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ ইউনিয়নের খামারটারী ও পুর্ব কালমাটি গ্রামের প্রায় ১০/১৫টি বসতভিটা নদীগর্ভে বিলিন হয়েছে। ভাঙনের মুখে পড়েছে চোংগাডারা উচ্চ বিদ্যালয়, খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন পরিষদ, ভুমি অফিস, খুনিয়াগাছ উচ্চ বিদ্যালয়সহ নানান প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা। নদীর কিনারায় পড়েছে নির্মানাধিন চোংগাডারা উচ্চ বিদ্যালয়ের চার তলা বিশিষ্ট ভবনসহ শতাধিক বসত বাড়ি।

গেল সপ্তাহে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান সুজন পরিদর্শন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে কিছু জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে কিছুটা রক্ষা করেছেন। নয়তো এসব স্থাপনা বিলিন হয়ে যেত বলে দাবি করেন স্থানীয়রা।

পুর্ব কালমাটি গ্রামের মৃত খোরশেদের স্ত্রী মিনু বেওয়া ৩বার নদী ভাঙনের শিকার হয়ে অন্যের জমি ৩০ হাজার টাকায় বন্দক নিয়ে তিনটি ঘর করে দুই ছেলেকে নিয়ে বসবাস করছেন। সেই বসতভিটাও নদীর মুখে পড়েছে। বন্দকি জমি নদী গর্ভে বিলিন হওয়ায় বন্দকের ৩০ হাজার টাকাও দিচ্ছেন না জমির মালিক। টাকার অভাবে মাথা গোজার ঠাঁই করতে পারছেন না। স্থানীয়দের সহায়তায় ও নিকট আত্নীয় স্বজনদের দিয়ে শুক্রবার ঘর তিনটি সড়িয়ে পাশের একজনের জমিতে রেখেছেন। নতুন ভাবে বাড়ি করার কোন উপায় না পেয়ে দিশেহারা মিনু বেওয়া।

মিনু বেওয়া বলেন, ৪বার ঘর বাড়ি সড়াতে গিয়ে সম্বল শেষ করেছি। এখন ঘর খুলে অন্যের জমিতে রেখেছি। রাতে কোথায় থাকব জানি না। এক সময় নিজের অনেক জমি ছিল। এখন দাঁড়িয়ে থাকার মত কোন জমি নেই। টাকা ছাড়া মিলে না জমি। সেই টাকাও নেই।

শুধু খামারটারী আর পুর্ব কালমাটি নয়। ভাঙন আতংকে রয়েছে তিস্তা নদীর বামতীর ঘেঁষা প্রতিটি গ্রামের মানুষ। এসব মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি তিস্তা নদী খনন করে স্থায়ী বাঁধ নির্মানের। যাতে অনাবাদি থাকা তিস্তার বুকের হাজার হাজার বিঘা জমি চাষাবাদের আওতায় আসে। এসব জমি চাষাবাদ করে সংসার চালাবেন তারা।

লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ৫টি উপজেলা নদী বেষ্টিত হলেও এবারে তিস্তার ভাঙনটা সদর উপজেলায় কিছুটা বেশি। ঝুঁকিপুর্ন এলাকায় ভাঙন রোধে জরুরী ভিত্তিতে কাজ চলমান রয়েছে। কিছু কিছু স্থানে রোধ করা সম্ভব হয়েছে। বাকীগুলোও কয়েকদিনের মধ্যে সম্পন্ন হবে।

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল