পঞ্চগড় প্রতিনিধি : পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে মামলা করেছেন নুর বানু নামের এক নারী। বারবার অভিযোগের ভিত্তিতে বিচার-শালিস করেও বদলাননি স্বামী আছমত আলী। এমনই অভিযোগ উপজেলার সদর ইউনিয়নের কলোনীপাড়া গ্রামের ভুক্তভোগী ওই স্ত্রীর।
স্বামীর বর্বরতম নির্যাতন থেকে রেহাই পেতে উপযুক্ত বিচার চেয়ে গত ৪ এপ্রিল বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল পঞ্চগড়ে মামলা করেছেন নির্যাতিতা ওই স্ত্রী। পরে ৬ এপ্রিল তেঁতুলিয়া মডেল থানায় ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সং/০৩) এর ১১ (ক) ধারার মামলাটি রুজু করা হয়।
মামলা ও অভিযোগে জানা যায়, ২০০৫ সালের ১০ অক্টোবর বিয়ে হয় আছমত আলীর সাথে বিয়ে হয় এ নারীর। বিয়ের পর নুরবানু কুড়িগ্রামে ব্র্যাকে চাকরি করতেন। সেখানে চলছিল দাম্পত্য জীবন। কিছুদিন পরেই শুরু হয় ৫ লক্ষ টাকার যৌতুক চেয়ে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন। এর মধ্যে দাম্পত্য জীবনে জন্ম নেয় আফিয়া জাহিন স্মিতা ও আহনাফ রাশীদ নাইফ দুই সন্তান।
যৌতুকের জন্য স্বামী দ্বারা নির্যাতনে ২০০৯ সালে কুড়িগ্রামে থাকাকালিন চিলমারী থানায় একটি নারী ও শিশু মামলা করেন নুর বানু। যার মামলা নং-জি.আর ১৮/২০০৯, নারী ও শিশু মামলা নং-২৫০/০৯। সে মামলায় বেশ কিছু দিন জেল খাটেন আছমত আলী ।
তিনি তেঁতুলিয়া সরকারি কলেজের সমাজ-বিজ্ঞানের প্রভাষক। পরে আপোষ-মীমাংসার মাধ্যমে মামলাটি নিস্পত্তি করা হয়।
এরপর ২০১৩ সালের ৭ জুলাইতে যৌতুকের চাপ সৃষ্টি করলে তেঁতুলিয়া নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ করেন তিনি। চলতি সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী আবারও যৌতুকের জন্য শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন চালালে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ দ্বারা বিষয়টি মীমাংসা করা হয়। ২৮ মার্চ যৌতুকের জন্য মারধর ও প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা করা হয়। পরে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হন।
সে ঘটনায় তাকে তেঁতুলিয়া হাসপাতালে চিকিৎসার মধ্য দিয়ে মডেল থানার পরামর্শে আদালতে মামলা করেন। মামলার পর থেকে স্বামী আছমত আলী
পলাতক রয়েছেন বলে জানা গেছে।
বিষয়টির ব্যাপারে সরাসরি কথা হয় ভুক্তভোগী নারী নুরবানুর সাথে। তিনি জানান, কতোটা নির্যাতন হলে স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করে স্ত্রী। বিয়ের ১৬ বছর ধরে যৌতুক লোভী স্বামীর নির্যাতন সয়ে আসছি। দুই সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে মুখ বুজে সয়ে এসেছি। কিন্তু এখন আর পারছি না। সর্বশেষ আমার ৫০ হাজার টাকা নিয়ে উল্টো আমার ভাইয়ের নামে চুরি অপবাদ দিয়ে নির্যাতন চালায়। তাই উপায়ন্তর না পেয়ে বাধ্য হয়েই আদালতে মামলা করেছি। এখন মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করছে সে।
মামলাটি তদন্ত দায়িত্বে রয়েছেন মডেল থানার পুলিশের এসআই দীনবন্ধু রায় । তার সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি এই মুহুর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে আসামী আছমত আলীর সাথে কথা বললে তিনি জানান, স্ত্রীর বিরুদ্ধে রয়েছে আমারও অভিযোগ। নারী নির্যাতন দেখা গেলেও পুরুষ নির্যাতন তো দেখা যায় না।
যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নির্যাতনের যে অভিযোগ তুলে আমার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। সে ঘটনা পুরোপুরি মিথ্যা-বানোয়াট। বরঞ্চ তাকে বিয়ে করার পর থেকে দিনের পর দিন পুরুষ নির্যাতনের শিকার হয়ে আসছি। গত ৯ মার্চ সোনালী ব্যাংক থেকে ৮ লাখ টাকা লোন করি। সেই টাকা দিয়ে গ্রামের বাড়িতে বাড়ি করবো ও দুটো অটোরিকশা কিনে ভাড়া দেয়ার পরিকল্পনা করি। কিন্তু আমার স্ত্রী সেই টাকা দিয়ে তার নিজের জমিতে ঘর করে দেবার জন্য চাপ সৃষ্টি করে। এ নিয়ে আমার উপর সীমাহীন মানসিক নির্যাতন চালায়।
সর্বশেষ আমার স্ত্রী আমার বাসা থেকে ৫০ হাজার টাকা চুরি করে তার ছোট ভাই, রাকিবুল ইসলাম শোভনের দ্বারা বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এতোসবের পরেও আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা।
সময় জার্নাল/এমআই