মো. তুহিন হোসাইন:
তালগাছের মতো লম্বা ছেলেটির দীর্ঘদিনের পায়ের ব্যাথা নতুন করে আবার চাগাড় দিচ্ছে। ছেলেটি দাঁড়িয়ে আছে দীর্ঘ লম্বা লাইনে। আজকাল লাইনের পরিমাণ বাড়ছে। যে কোন কাজে গেলে দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়ানো লাগে। সে পেশায় একজন চাকুরিজীবী। ছোটখাটো বেসরকারী একটি অফিসে কর্মরত ছিলো কিন্তু এই মহামারীতে সেই চাকরিটা গেছে।
আজ মাস খানেক হলো বাড়িতে বসে অলস সময় কাটাচ্ছে। সংসারে গাধার মতো খেটে খাওয়া মেয়েটি এখন তাকে বেশ শ্রুতিকটু কথা শোনায়। কিন্তু আগে এই মেয়েটি কতোই না শ্রুতিমধুর কথা শোনাতো। পরিস্থিতি মানুষকে কতটা বদলে দেয়।
ছেলেটি নিজেই নিজেকে বোঝায় অভাবে থাকলে ভালোবাসা দরজা দিয়ে পালায়। সে লক্ষ্য করেছে তার মেজাজও আজকাল ভালো নেই। শুধু তার নয় কারো মেজাজই হয়তো এখন আর আগের মতো নেই।
সে তার সম্মুখে দাঁড়ানো লোকদের গণনা করে দেখলো তার সিরিয়াল তেইশ। এতে মেজাজ আরও খারাপ হয়ে গেলো। মাস্ক পরার জন্য মুখের কাছে অসহ্য লাগছে। লাইন শুরু হয়েছে ব্যাংকের গেট থেকে। লাইন সর্বমোট দুটো একটা মেয়েদের অন্যটাই লম্বা ছেলেটি দাঁড়িয়ে।
মেয়েদের লাইনের দূরত্ব কম হলেও তাদের মধ্যে উত্তেজনা বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাদের এই বিশৃঙ্খলা দেখে দাঁড়িতে মেহেদি নেয়া লোকটি ধমকের সুরে বলে উঠলো, ওই বিটিরা থামো এতো তাড়াহুড়ো লাগাইছো কেন? লাইনে দাঁড়িয়ে থাকো সিরিয়াল আসলি যাতি পারবা।
এই কথা শুনে কালো বোরখায় সমস্ত শরীর আবৃত মেয়েটি বললো চাচা মিয়া আমরা তাড়াহুড়া না করলে বাড়ি গিয়ে আপনাদের না খেয়ে থাকতে হবে। তাছাড়া আপনাদের লাইন থেকে দুজনকে নিচ্ছে আর আমাদের একজনকে। তাড়াহুড়া এই সব অনিয়মের কারণেই আসে।
মাথার চুল কমতে থাকা লোকটি এতক্ষণ মেয়েটির দিকে কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো সে এবার প্রতিবাদের শুরেই বললো,
আমরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জন করে না আনলে আপনাদের রান্না করা আসতোনা। তাছাড়া এই মহামারিতে আপনারা নয় আমরাই বেশি মরছি।
দারোয়ান বিরক্তিতে মুখ কুচকে আছে।এমনিতে বিদ্যুৎ থাকেনা তার ওপর জেনারেটর নষ্ট আর এই বেহেশতের বান্দাগুলো সেই সকাল থেকে ক্যাচাল বাঁধিয়েছে।
ওই চুপ থাকেন। আপনাদের এতো কথা কিসের? মানুষের জ্বালায় মানুষ বাঁচেনা। শুধু কথা আর কথা।
লম্বা ছেলেটির সিরিয়াল চলে এসেছে। দারোয়ানের হাতে ইনফ্রারেড থার্মোমিটার কিন্তু এই যন্ত্রের ব্যবহারে সে খুব বেশি পারদর্শী নয়। তাই তাকে বেশ বিপাকে পড়তে হচ্ছে।
ছেলেটির কপালে যন্ত্রটি ঠেকিয়ে সে বললো, আপনে পায়খানা ঘরে চলে যান ওখানে সাবান রাখা আছে হাত ধুয়ে তারপরে অফিসে ঢুকবেন।
ছেলেটি বাথরুমে ঢুকে বিকট গন্ধে দম বন্ধ করে রাখলো সাবানের দিকে নজর যেতেই তার হাত ধোয়ার ইচ্ছেটা মরে গেল। বাথরুমে শুধুমাত্র একটা সাবান, সেই সাবান দিয়ে দুই কাজ একসাথে সারা হচ্ছে।
সাবানের অবস্থা নিঃশেষ প্রায়। দেশের নামকরা ছয়টি সরকারি ব্যাংকের মধ্যে এটি অন্যতম।
ছেলেটি সাবানের দিকে তাকিয়ে দেশের বর্তমান অবস্থার সাখে সাবানের একটা অদৃশ্য মিল খুঁজে পেল।
মো. তুহিন হোসাইন
বাংলা, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
সময় জার্নাল/এলআর