এহসান রানা, ফরিদপুর প্রতিনিধি:
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায় বিগত ১৪ দিন ধরে একটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে তালা ঝুলছে। স্বাস্থ কেন্দ্র বন্ধ রাখার কারণে শিশু বাচ্চাদের ইপিআই টিকাও দেওয়া হয়েছে পাশের স্কুলের বারান্দায়। এমনকি স্বাস্থ কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার (সেকমো) মো. নুরুল ইসলাম ১৪ দিন ভয়ে যান না ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে। এ কারণে গত ৪ আগষ্ট থেকে ওই এলাকার মানুষ সরকারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
জানা যায়, উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র রয়েছে। তার পাশাপাশি প্রতিটি ইউনিয়নে তিনটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক আছে। সাতৈর ইউনিয়নে "কাদিরদী উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র" নামে কাদিরদী বাজার সংলগ্ন স্বাস্থ কেন্দ্রে জরুরি ভাবে এলাকাবাসীকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। সেখানে সরকারি ওষুধও সরবরাহ করা হয়। কাদিরদী উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের সাথে রয়েছে কাদিরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। দীর্ঘদিন এ দুই সরকারি প্রতিষ্ঠানের জমির সীমানা নিয়ে বিরোধ চলছে। বিরোধের এক পর্যায় দুই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন সময়ের অভিযোগের ভিত্তিতে চলতি মাসের ৪ তারিখে উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ের সার্ভেয়ার সরেজমিনে দুই প্রতিষ্ঠানের সীমানা জরিপ করেন। জরিপের এক পর্যায়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মধ্যে স্কুলের কিছু অংশ জমি পাওয়া যায়। ওই সময় সীমানা পিলার বসানোর এক পর্যায়ে কাদিরদী উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মো. নুরুল ইসলাম এবং কাদিরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মাহাবুর রহমানসহ শিক্ষকদের মধ্যে বাকবিতান্ড হয়। এক পর্যায়ে দুইজনের মধ্যে হাতহাতির ঘটনাও ঘটে বলে অভিযোগ রয়েছে। গত ৪ আগষ্ট থেকে দুই প্রতিষ্ঠানের জমিজমার বিরোধের জের ধরে ক্লিনিকের দায়িত্ব থাকা উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার ক্লিনিকে না গিয়ে তালা দিয়ে বন্ধ করে রাখেন। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় গত বুধবার (১৭ আগষ্ট) সাতৈর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ১ নম্বর ওয়ার্ডের ভলেনটিআর (স্বাস্থ্য সেবা) মুরাদ মাহমুদকে বাচ্চাদের ইপিআই টিকা স্কুলের বারান্দায় দিতে দেখা যায়। এ কারণে এলাকাবাসী চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
কাদিরদী গ্রামের বাসিন্দা নিশিকান্ত দাস বলেন, স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রটি বন্ধ থাকায় এলাকার মানুষ ঠিকমত সেবা পাচ্ছে না। এমনকি সরকারি ওষুধ দেওয়া বন্ধ রয়েছে এখানে। দ্রুত সেবা কেন্দ্র চালু করার দাবি জানান তিনি।
বৃহস্পতিবার দুপুরে কাদিরদী স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার মো. নুরুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আমরা জনগণকে সেবা দিতে এসেছি। কারো সাথে মারামারি করার জন্য নয়; যেহেতু দুই প্রতিষ্ঠানই সরকারি। সেহেতু দুই প্রতিষ্ঠানের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে এটি সমাধান হতে পারে। জমি মাপার পর স্কুল স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মধ্যে কিছু অংশ জমি পেয়েছে। সীমানা পিলার বসানোর সময় স্কুলের প্রধান শিক্ষক আমার হাত ধরে মোচড় দেয়। এক পর্যায়ে স্কুলের শিক্ষকরা আমার ওপর ক্ষীপ্ত হয়ে হুমকি ধমকি দেয়। সেজন্য আমি গত ৪ তারিখ থেকে ভয়ে অফিসে যাই না। বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ও সিভিল সার্জন স্যারকে জানিয়েছি। তারা যেদিন আমাকে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যেতে বলবেন সেদিন আমি যাবো। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মধ্যে কিছু গাছ ছিলো তাও প্রধান শিক্ষক কেটে নিয়েছেন।
এ ব্যাপারে কাদিরদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক মাহাবুবুর রহমান বলেন, স্কুলের জায়গা এতদিন ধরে ক্লিনিকের ভেতর দখল করে রেখেছিল। উপজেলা সহকারী কমিশনারের সার্ভেয়ার জমিতে এসে মাপ দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। কি কারণে স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রটি বন্ধ করে রেখেছেন সেটা জানি না। তবে কাউকে আমরা হুমকি-ধমকি দেয়নি। স্কুলের জায়গার গাছ কাটা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খালেদুর রহমান জানান, স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জায়গা নিয়ে একটু বিরোধ রয়েছে। সহকারী মেডিকেল অফিসার নিরাপত্তা চেয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। স্কুলের শিক্ষকদের হুমকি ধমকিতে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার যাচ্ছেন না বলে জানতে পেরিছি। এ ব্যাপারে স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ গন্যমান্যদের সাথে বসে দ্রুত বিষয়টি সমাধান করে পুনরায় উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রটি চালু করার ব্যবস্থা করা হবে।
বিষয়টি নিয়ে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রেজাউল করিম জানান, বিষয়টি আমি অবগত আছি। দুইটি প্রতিষ্ঠানের জায়গা মেপে সীমানা নির্ধারণ করেছে এসিল্যান্ড। দ্রুত সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বিষয়টি সমাধান করা হবে।
এমআই