বুধবার, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিবেন বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির চার নেতা। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের এবং এনসিপির সদস্য সচিব আক্তার হোসেনকে সাথে নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে আগামী ২২ সেপ্টেম্বর ঢাকা ছাড়বেন।
আজ বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টার জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেওয়া উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন।
তিনি বলেন, 'আমরা এমন একটা পর্যায়ে যাচ্ছি যে পরবর্তীতে রাজনীতিবিদরাই সরকার পরিচালনা করবেন। সেজন্য এসকল রাজনীতিবিদদের সঙ্গে নিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা।
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, "এলডিসি থেকে উত্তরণ প্রক্রিয়া পেছানোর কোনো সিদ্ধান্ত সরকার নেয়নি। এখনও অন ট্র্যাকেই রয়েছে। ফলে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে এটি তোলার বিষয় নয়। আর চাইলেই পেছানো যায়, তা নয়। এলডিসি থেকে উত্তরণ পরবর্তী তিন বছর ইউরোপীয় ইউনিয়ন যাতে এলডিসির মতো সুবিধা অব্যাহত রাখে, সেবিষয়ে আমরা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।"
আরেক প্রশ্নের জবাবে তৌহিদ হোসেন বলেন, "জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যাতে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল অংশ নিতে না পারে। সেজন্য প্রতিরোধ বা প্রতিবাদ হবে এটা ধরে নিচ্ছি। বাধা দেওয়া, স্লোগান দেওয়া এগুলো হতে পারে। এগুলো আটকানোর সুযোগ নেই। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে এ ধরনের প্রতিবাদে বাধা দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে ডেলিগেট যারা, তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা জাতিসংঘ করে থাকে।"
আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানে সাধারণ বিতর্ক ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনে অংশ নেবেন। এবছর জাতিসংঘের ৮০তম বর্ষপুর্তি। এবছরের প্রতিপাদ্য 'বেটার টুগেদার: এইটটি ইয়ার্স অ্যান্ড মোর ফর পিস, ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যান রাইটস'।
জাতিসংঘের তিনটি মূল স্তম্ভ- শান্তি ও নিরাপত্তা, উন্নয়ন এবং মানবাধিকার সবই সমানভাবে এবারের অধিবেশনে গুরুত্ব পাবে। বিশ্বব্যাপী আস্থার সংকট, সংরক্ষণবাদের উত্থান, বহুপাক্ষিক কূটনীতি এবং আলোচনার পথ উপেক্ষা করার ফলে সৃষ্ট যে তীব্র সংকট থেকে সংঘাতের সৃষ্টি হয়েছে, মানবাধিকার লঙ্ঘন ঘটছে, বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতির পাশাপাশি উদ্ভূত নানারকম বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা এবং টেকসই উন্নয়ন বাস্তবায়নে কার্যকর ও সমন্বিত পদক্ষেপের বিষয়ে সার্বিক আলোচনার ক্ষেত্রে এবারের প্রতিপাদ্যটি অত্যন্ত অর্থবহ।
অধিবেশনের বাইরে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ, জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসসহ বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। প্রবাসী বাংলাদেশিদের সাথেও একটি বৈঠক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এ বছরের অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ, এবার ৩০ সেপ্টেম্বর তারিখে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতির সভাপতিত্বে 'হাই-লেভেল কনফারেন্স অন দ্য সিচ্যুয়েশন অব রোহিঙ্গা মুসলিমস অ্যান্ড আদার মাইনরিটিস ইন মিয়ানমার' শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে। রোহিঙ্গা সংকটকে কেন্দ্র করে জাতিসংঘ কর্তৃক সাধারণ পরিষদে এমন একটি উচ্চ-পর্যায়ের সভার আয়োজন এবারই প্রথম।
তিনি বলেন, এই সভা থেকে যেন রোহিঙ্গা সংকট দ্রুত সমাধানের একটি কার্যকর ও সময়াবদ্ধ পরিকল্পনা উঠে আসে, তার জন্য আন্তর্জাতিক অংশীদার ও রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গত ২৪ থেকে ২৬ আগস্ট কক্সবাজারের অংশীদারদের মধ্যে একটি সংলাপের আয়োজন করা হয়। এছাড়া জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস গত মার্চ মাসে বাংলাদেশ সফর করে রোহিঙ্গাদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে কক্সবাজারে একসাথে ইফতার করেছিলেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এ বছর বিশ্ব যুব কর্মসূচির (ওয়ার্ল্ড প্রোগ্রাম অফ অ্যাকশন ফর ইয়ুথ) ৩০ বছর পূর্তি এবং নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক ঐতিহাসিক রেজ্যুলুশনের ২৫ বছর পূর্তি হচ্ছে। বিশ্ব যুব কর্মসূচির ৩০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ২৫ সেপ্টেম্বর একটি উচ্চ পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে প্রধান উপদেষ্টা অংশগ্রহণ করবেন এবং দেশের তরূণ ও যুব সমাজের আশা-আকাঙ্ক্ষা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরবেন। অন্যদিকে, বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকেও বাংলাদেশ অংশগ্রহণ করবে।
তৌহিদ হোসেন জানান, ২৬ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সাধারণ আলোচনা পর্বে বক্তব্য রাখবেন। তিনি তাঁর বক্তব্যে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র-জনতার আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রেক্ষিতে— বিগত এক বছরে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া সংস্কার ও আগামী দিনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় বিশ্বদরবারে তুলে ধরবেন।
পাশাপাশি আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ অবস্থান, বিশ্বব্যাপী সংঘাত, রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিকূলতা, উন্নয়নশীল দেশসমূহ হতে সম্পদ পাচার প্রতিরোধ, নিরাপদ অভিবাসন, অভিবাসীদের মৌলিক পরিষেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রযুক্তির টেকসই হস্তান্তর, এবং সর্বোপরি ফিলিস্তিন ও ইসরাইল-এর যুদ্ধবিরতি ও স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়াস তাঁর বক্তব্যে উঠে আসবে।
এমআই