সময় জার্নাল ডেস্ক: জাতিসংঘের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ইউএনভি’র ‘ইন্সপায়ারিং উইমেন ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২২’ পেয়েছেন সিরাজগঞ্জের কিশোরী প্রিয়াংকা ভদ্র।
সোমবার (২২ আগষ্ট, ২০২২) বিকেলে রাজধানীর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ভবনে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে এ অ্যাওয়ার্ড দেওয়া প্রদান করা হয়।
১৮ বছর বয়সী কিশোরী প্রিয়াংকাকে লিঙ্গ বৈষম্য, সামাজিক উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, পরিবেশ রক্ষা, শিশু সুরক্ষা ও সহিংসতা প্রতিরোধ ইত্যাদি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ সম্মাননা দেওয়া হয়। তার হাতে পুরস্কারটি তুলে দেন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় মন্ত্রী স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী জনাব মোঃ তাজুল ইসলাম।
দেশব্যাপী ১৫ জন নারীকে তাদের স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে দেশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের জন্য ‘ইন্সপায়ারিং উইমেন ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড ২০২২’ দেয় জাতিসংঘের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘ইউএনভি’। পুরস্কার হিসেবে ছিল কেস্ট, সনদপত্র, মেডেল এবং নগদ অর্থ।
বিশ্বব্যাপী স্বেচ্ছাসেবায় নিয়োজিতদের ৫৭ শতাংশই নারী। স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে একদিকে যেমন নারীদের অংশগ্রহণ শক্তিশালী হয় তেমনি অসমতা দূরীকরণেও ভূমিকা পালন করে।
নারী স্বেচ্ছাসেবীদের এই গুরুত্বপূর্ণ অবদানকে স্বীকৃতি জানাতে এবং অনুপ্রেরণা জোগাতে ইউএনভি বাংলাদেশ, ভিএসও বাংলাদেশ, প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ, ইউএন উইমেন এবং একশনএইড বাংলাদেশ যৌথভাবে এই সম্মাননা দেওয়ার আয়োজন করে।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মোঃ তাজুল ইসলাম মাননীয় মন্ত্রী স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়।
তিনি বলেন, "নারীদের অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী এবং নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি সর্বক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নানা ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাচ্ছে সরকার। নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন ছাড়া দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। নারী-পুরুষের বৈষম্য নিরসনে সরকার বদ্ধপরিকর।"
তিনি আরও বলেন, "স্বেচ্ছাসেবায় নতুন প্রজন্মকে সম্পৃক্ত হতে হবে। দেশের যেকোনো দুর্যোগে, বিপদে-আপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি আকস্মিক বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য স্বেচ্ছাসেবায় জনসাধারণের প্রবেশ ও স্বেচ্ছাসেবার চর্চা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।"
আয়োজনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী, বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইডেনের রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দ্রা বার্গ ফন লিন্ডে এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী বিভাগের প্রধান প্রকৌশল এসকে মো মহসিন।
প্রিয়াংকা তার বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের জন্য "লিঙ্গ বৈষম্য" টপিকে আন্তর্জাতিক শিশু শান্তি পুরস্কার ২০২১ এর জন্য মনোনীত হয়েছিলেন। তিনি "অদম্য সাহসী তরুণী" ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের মাননীয় স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী-এমপি এর হাত থেকে গ্রহণ করেছিলেন "আরটিভি এসএমসি মনিমিক্স প্রেরণা পদক ২০২১"।
তিনি একজন শিশু সাংবাদিক, লেখক ও স্বেচ্ছাসেবক। তিনি শিশু ধর্ষণ, বাল্যবিবাহ বন্ধ এবং নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য বিভিন্ন লেখালেখি ও ভিডিও তৈরি করেছেন। প্রিয়াংকা হ্যালো ডট বিডি নিউজ টোয়েন্টিফোর ও শিশু বার্তার একজন শিশু সাংবাদিক হিসেবে কাজ করছেন।
প্রিয়াংকার বড় ভাই দীপংকর ভদ্র দীপ্ত এর অনুপ্রেরণা ও ছোট বেলা থেকেই পরিবারের সাপোর্ট তাকে নারী ও শিশুদের অধিকার নিয়ে কাজের প্রতি অনুপ্রাণিত করেছে। ২০১৬ সাল থেকে প্রিয়াংকা ভদ্র যুক্ত আছেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল চাইল্ড পার্লামেন্ট বিএনসিপির সাথে এবং পর পর ৩ বার শিশু সংসদ হিসেবে নির্বাচিত হয়ে বর্তমানে সে সিরাজগঞ্জ প্রদেশের ডেপুটি স্পিকার হিসেবে কাজ করছেন।
২০১৮ সাল থেকে প্রথমে শিশু সাংবাদিক এবং বর্তমানে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে যুক্ত আছেন ন্যাশনাল চাইল্ড টাস্ট ফোর্স এনসিটিএফ এর সাথে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) এর ক্যাডেট সিপিএল হিসেবেও কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়াও ২০১৬ সাল থেকে কিশোর গোয়েন্দা ম্যাগাজিন, ২০১৭ সাল থেকে ইউনিসেফ সমর্থিত হ্যালো ডট বিডি নিউজ টোয়েন্টিফোর এবং শিশু বার্তার সাথে শিশু সাংবাদিক হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন।
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ রক্ষায় তিনি কাজ করেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সাথে যুক্ত হয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন মানবিক কাজ করে যাচ্ছেন। পরিবেশ রক্ষা এবং পরিবেশবান্ধব পণ্য ব্যবহার বৃদ্ধিতে শিশুদের সচেতন করে যাচ্ছেন।
প্রতিটা নারী ও শিশু বাড়ির বাহিরে এবং সব জায়গায় নিরাপদ ভাবে চলাচল করতে পারে তা নিয়ে লেখালেখি, ভিডিও তৈরি এবং বিভিন্ন সচেতনতামূলক সেমিনারে অংশগ্রহণ করেন। তিনি মনে করেন বর্তমানে এখনো মাঠ পর্যায়ে মেয়েদের নিয়ে তাদের পরিবার অনিরাপদ মনে করেন। নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত তাদের অধিকার বলে তিনি মনে করেন।
প্রিয়াংকা বলেন, "তিনি লিঙ্গ বৈষম্য দূর করে নারীদের সব জায়গায় তাদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত নিয়ে আগামীতেও কাজ করে যাবেন এবং মাঠ পর্যায়ের শিশু কিশোরদের মধ্যে তাদের অধিকার ও পরিবেশ নিয়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করবেন।"
সময় জার্নাল/এলআর