সময় জার্নাল ডেস্ক: বর্তমান সরকার আন্তর্জাতিকভাবে নারীবান্ধব সরকার হিসেবে পরিচিত। নারীদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে নানাভাবে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য যেসব সুবিধা দেয়া হয়েছে, তা যদি সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায় তাহলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীরা আরো বেশি অবদান রাখতে পারবেন।
ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো প্রয়োজন অনুযায়ী ঋণ দানের পরিবর্তে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ঋণ দেয়। এতে অর্থের চাহিদা পূরণ না হলে ঋণ গ্রহণকারী অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ গ্রহণ করে।
বিভিন্ন জরিপে দেখা গেছে, ক্ষুদ্র ঋণদানকারী সংস্থা থেকে ঋণ নেবার পর ৯ থেকে ১১ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্য সীমার উপরে উঠে আসতে পারে। তাও টেকসইভাবে নয়। যেকোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাক ঘটলে তারা আবারো দারিদ্র্য সীমার নিচে চলে আসতে পারেন। এভাবে তারা ঋণজালে জড়িয়ে পড়েন।
এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এসএমই সেক্টরের সংজ্ঞায় পরিবর্তন এনেছে। কুটির এবং অতিক্ষুদ্র শিল্পকে অন্তর্ভুক্ত করে এই খাতের নতুন নামকরণ করা হয়েছে, ‘কটেজ, মাইক্রো, স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম ইন্ডাস্ট্রিজ ‘(সিএমএসএমই)’। মন্ত্রিপরিষদের সাম্প্রতিক এক সভায় নারী উদ্যোক্তাদের জামানতবিহীন ঋণদানের প্রস্তাব পাশ হয়েছে।
কিন্তু এক শ্রেণির ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান নারী উদ্যোক্তাদের ঋণদান এবং অন্য সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে এখনো ততোটা উদার নয়। সহজ অর্থায়ন প্রাপ্তি নারী উদ্যোক্তাদের একটি বড়ো সমস্যা। অর্থায়নের অভাবে নারী উদ্যোক্তাগণ ঠিকমতো বিকশিত হতে পারছেন না। এমনকি অধিকাংশ নারী উদ্যোক্তাই জানেন না, তাদের জন্য সরকার কী সুবিধা প্রদান করেছে। বাংলাদেশে যারা নারী উদ্যোক্তা, তাদের অধিকাংশই কুটির শিল্প এবং অতি ক্ষুদ্র শিল্পের উদ্যোক্তা। তারা আগে এসএমই (স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ) এর আওতাভুক্ত ছিলেন না।
নারী উদ্যোক্তাদের জন্য জামানত দেওয়া একটি কঠিন কাজ। কারণ নারীরা চাইলেই স্বামী অথবা পৈত্রিক সম্পত্তির মালিকানা পেতে পারেন না। এজন্য তাদের অনেক দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। তাই ব্যাংক ঋণদানের সময় যখন সম্পত্তি বন্ধক নিতে চায়, তখন নারী উদ্যোক্তারা পিছিয়ে যান।
অবশ্য কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান সীমিত পরিসরে নারী উদ্যোক্তাদের তুলনামূলক কম সুদে জামানতবিহীন ঋণ দিচ্ছে। এসএমই ফাউন্ডেশন গত অর্থবছরের শেষের দু’ মাসে সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের মধ্যে মাত্র ৪ শতাংশ সুদে ১০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। এই ১০০ কোটি টাকা ঋণের মধ্যে ৩০ শতাংশ অর্থাৎ ৩০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে নারী উদ্যোক্তাদের। চলতি অর্থবছরে এসএমই ফাউন্ডেশন ২০০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করবে, যার মধ্যে ৩০ শতাংশ বা ৬০ কোটি টাকা দেওয়া হবে নারী উদ্যোক্তাদের। একজন উদ্যোক্তা ১ লাখ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিতে পারছেন।
এরমধ্যে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের জন্য কোনো জামানত দিতে হয় না। বাংলাদেশ ব্যাংক কিছুদিন আগে সার্বিকভাবে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ঋণদানের ক্ষেত্রে সুদের হার কমিয়েছে। প্রচলিত ব্যাংক ঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ হলেও নারী উদ্যোক্তারা ৫ শতাংশ সুদে ঋণ পাবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘স্মল এন্টারপ্রাইজ খাতে পুন: অর্থায়ন স্কিম’ এর আওতায় স্বল্প সুদে ঋণ পাবেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের এই তহবিল থেকে অগস্ট, ২০২১ পর্যন্ত ২৯ হাজার ৮৬৩ জন নারী উদ্যোক্তা ৩ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা ঋণ পেয়েছেন। ২০২৪ সালের মধ্যে এই খাতে প্রদত্ত ঋণের অন্তত ১৫ শতাংশ নারী উদ্যোক্তাদের দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের নারীরা অত্যন্ত সৃজনশীল ক্ষমতার অধিকারী। তারা যেকোনো কাজে পুরুষের সমান দক্ষতা প্রদর্শন করতে সক্ষম। সরকার নারী উদ্যোক্তা উন্নয়নের জন্য সাম্প্রতিক সময়ে যেসব নীতি ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন, তা কাজে লাগিয়ে নারী উদ্যোক্তাদের আরো বিকাশ ঘটানো সম্ভব।
সময় জার্নাল/এলআর