মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪

নজরুলের কবিতায় নারী…

শুক্রবার, আগস্ট ২৬, ২০২২
নজরুলের কবিতায় নারী…

আফতাব হোসেন:  

বলা হয়ে থাকে, নারী চরিত্রং দেব ন’ জনান্তি। অর্থাৎ দেবতারাও নারী চরিত্র বুঝতে অক্ষম। বড় রহস্যময় বিধাতার এই অপূর্ব সুন্দর সৃষ্টি নারী ও তার মন। যার তল পেতে হাবুডুবু খেয়েছে কত মুনি ঋষি জ্ঞানী গুণীজন। যুগে যুগে নারীকে নিয়েই লেখা হয়েছে অযুত লক্ষ গান, কবিতা, গল্প, উপন্যাস। এখনও হচ্ছে। নারীকে নিয়ে প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে কবিতা লেখেনি, এমন বাঙালি বোধহয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। 

আজ আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের মহা প্রয়াণ দিবস। তিনি ছিলেন প্রেমের কবি, বিরহের কবি, দ্রোহের কবি, মানবতার কবি, সাম্যবাদের কবি, সর্বপরি অভিমানী কবি। তবে নারী ও  প্রেম তাঁর কবিতায়, গানে, ঘুরে ফিরে এসেছে বহুবার বিভিন্ন ভাবে।  নারীকে নিয়ে এমন বৈচিত্র্যময় ও বিপরীতধর্মী কবিতা আর কোনো কবি লিখেছেন বলে আমার জানা নেই। 
নজরুল নারীকে পুরুষের সমকক্ষ ভাবতেন। নারীকে সম্মান জানতে গিয়ে উচ্চারণ করেন, 
“বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। বিশ্বে যা কিছু এলো পাপ-তাপ বেদনা অশ্রুবারি, অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী।’ 

আবার লিখেছেন,
“ কোনো কালে একা হয়নি ক’ জয়ী পুরুষের তরবারি, প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয়-লক্ষ্মী নারী”।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীকে প্রায়ই  কলঙ্কিনী,  কূলটা, চরিত্রহীনা, ভ্রষ্টা বলে দোষারোপ করা হয়। কবি তার প্রতিবাদে লেখেন,
‘শুন ধর্মের চাঁই, জারজ কামজ সন্তানে দেখি কোনো প্রবেধ নাই!  অসৎ মাতার পুত্র যদি জারজ পুত্র হয়, অসৎ পিতার সন্তানও তবে জারজ সুনিশ্চয়।’ 
কবির লেখার প্রেরণার উৎসও ছিল নারী, যা তিনি দ্বিধাহীন চিত্তে স্বীকার করেছেন তার প্রথমা স্ত্রী নার্গিসকে লেখা চিঠিতে, 
“ ...তুমি এই আগুনের পরশ মানিক না দিলে আমি অগ্নিবীণা বাজাতে পারতাম না— আমি ধূমকেতুর বিস্ময় নিয়ে উদিত হতে পারতাম না।’ 

এই নার্গিসের সাথে তাঁর সংসার করা হয়নি অথচ তাঁকে মনে রেখেছিলেন। বিয়ের ষোলো বছর পর নার্গিসের একটা চিঠির জবাবে কবি এই গানটি লিখেছিলেন, ‘যারে হাত দিয়ে মালা দিতে পার নাই, কেন মনে রাখ তারে। ভুলে যাও তারে ভুলে যাও একেবারে। আমি গান গাহি আপনার দুখে, তুমি কেন আসি দাড়াও সুমুখে, আলেয়ার মত ডাকিও না আর, নিশীথ অন্ধকারে….।’  
নজরুলকে আমরা বিদ্রোহী কবি ডাকলেও আসলে তিনি ছিলেন প্রেমের কবি। ছিলেন সুন্দরের পূজারী। বহুবার তিনি এই সুন্দরের প্রেমে পড়েছেন। প্রেমে কাতর হয়ে তিনি লিখেছেন, “হয়ত তোমারে দেখিয়াছি আমি যাহা নও তাই করে। ক্ষতি কী তোমার, যদি গো তাতেই আমার হৃদয় ভরে ? সুন্দর যদি করে গো তোমারে আমার আঁখির জল, হারা মমতাজে ল’য়ে কারও প্রেম র’চে যদি তাজম’ল, বলো তাহে কার ক্ষতি ? তোমারে লইয়া সাজাব না ঘর, সৃজিব অমরাবতী”

তিনি স্বর্গের হুর-পরী, স্বর্গের প্রেম চাননি। তিনি এই মর্ত্যের নারী, এই মর্ত্যের প্রেম চেয়েছিলেন। 
“ সেথা স্বর্গের প্রেমে নাই বিরহ অনল, সেথা সুন্দর আঁখি আছে, নাই আঁখি জল”।
আবার এই সুন্দরের কাছ থেকেই বার বার আঘাত পেয়ে কবি লিখেছেন,
“ যে পূজা পূজিনি আমি স্রষ্টা ভগবানে, যারে দিনু সেই পূজা, সে-ই আজি প্রতারণা হানে”

নারী যেমন প্রেমময়ী, তেমনই ছলনাময়ী। নারীর ছলনায় রুষ্ট হয়ে কবি লেখেন,
“নারী নাহি হতে চায় শুধু একা কারো, এরা দেবী, এরা লোভী, যত পূজা পায় ওরা, চায় তত আরো।  ইহাদের অতি লোভী মন, একজনে তৃপ্ত নয়, এক পেয়ে সুখী নয়, যাচে বহুজন।'

কবি যেমন নারীকে আকুল হয়ে ভালোবেসেছেন, তেমন নিদারুণ কষ্টও পেয়েছেন। তবু নারীর বৈশিষ্ট্যে নিজেকে এ ভাবে রাঙ্গাতে চেয়েছেন,  ‘আমি বন্ধনহারা কুমারীর বেণী, তন্বী-নয়নে বহ্নি,  আমি ষোড়শীর হৃদি-সরসিজ প্রেম উদ্দাম, আমি ধন্যি!  আমি উন্মন মন উদাসীর, আমি বিধবার বুকে ক্রন্দন-শ্বাস, হা-হুতাশ আমি হুতাশির”। নারীর কষ্টে তাঁর মন কেঁদে উঠত। যার জন্য তিনি ঈশ্বরকে পর্যন্ত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে কুণ্ঠিত হননি।  ‘ভগবান! তুমি চাহিতে পার কি ঐ দুটি নারীর পানে?/ জানি না, তোমায় বাঁচাবে কে, যদি ওরা অভিশাপ হানে!’

গানে, কবিতায়, চিঠিতে, নারীকে এত রূপে, এত ভাবে, আর কেউ চিত্রায়িত করেছেন কিনা আমি জানি না। তবু তিনি কতটুকু চিনতে পেরেছিলেন নারীকে ? বাক ও বোধ শক্তি হারাবার আগে এক ভাষণে কবি বলেছিলেন- ‘আমি প্রেম দিতে এসেছিলাম, প্রেম পেতে এসেছিলাম, সে প্রেম পেলাম না বলে আমি এই প্রেমহীন নিরস পৃথিবী থেকে নীরব অভিমানে চিরদিনের জন্য বিদায় নিলাম।’  সেই অভিমানেই কি দীর্ঘ ৩৪ বছর কবি  বাক-হীন হয়ে ছিলেন ? তিনি কি বুঝতে পেরেছিলেন, বেঁচে থেকেও একদিন নিশ্চুপ হয়ে যাবেন? 

“তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু আর আমি জাগিব না, কোলাহল করি সারা দিনমান কারও ধ্যান ভাঙ্গিব না, নিশ্চল, নিঃশ্চুপ,
আপনার মনে পুড়িব একাকী গন্ধ বিধুর ধূপ।“ আজ ঘুমিয়ে আছে ক্লান্ত হয়ে আমাদের গানের বুলবুলি। ঘুমাও কবি। বাঙ্গালি জাতির এই চরম অবক্ষয় তোমাকে দেখতে হল না। আজ দুই বাংলায় লক্ষ লক্ষ কবি আছে। অথচ কারও কলমই তোমার মতো আগুন ঝরাতে পারে না। এই দুর্ভাগা জাতির জন্য একজন নজরুলের আজ বড় প্রয়োজন।


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল