শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪

মাকে কাঁদিয়ে বেশি দূর যাওয়া যায়না

শুক্রবার, আগস্ট ২৬, ২০২২
মাকে কাঁদিয়ে বেশি দূর যাওয়া যায়না

ডা. ছাবিকুন নাহার:

একবার হলো কি, বড়পুত্র অহনকে স্কুল থেকে আনতে গিয়ে তার বাবা দেখে সব বাচ্চা বের হলেও ছেলে বের হয় না। ওমা কী বলে এসব! আমি নিজে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আসলাম। বের হয়ে যায় নাই তো? তার বাবার যেতে পাঁচ মিনিট দেরী না হয়েছে তাই বলে ও বের হয়ে যাবে! এটাই বা হয় কী করে! ওকে তো পই পই করে বলা আছে, বাবা কিংবা মা না যাওয়া পর্যন্ত কোনো মতেই একা একা বের হবে না। তাহলে? 

আমাদের মাথা খারাপের মতো হয়ে গেলো। বাচ্চা পড়ে উদয়নে। আমরা দুজনেই চাকরি করি ঢাকা মেডিকেলে। যারা চিনেন তারা জানেন যে, ঢাকা মেডিকেল থেকে উদয়নে হেঁটে গেলেও দশমিনিটের পথ না। এই সময়ে আমার বাচ্চাটা... না আর ভাবতে পারছি না। আজাদ আমি দুজন দুই দিক ছড়িয়ে গেলাম। যাকে পাচ্ছি তাকেই কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞেস করছি, বাচ্চাটাকে দেখেছে কিনা। উদয়ন টু ঢাকা মেডিকেল, মেডিকেল টু উদয়ন কয়েকবার চক্কর দেয়া হয়ে গেলো। আশেপাশের লোকজন দেখছে দুজন নারী পুরুষ কাঁদছে আর বলছে আমার বাচ্চা, আমার বাচ্চা...

আধাঘন্টা পরে  তাকে পাওয়া গেলো। স্কুলের লাইব্রেরিতে। লাস্ট ক্লাশ ছিলো লাইব্রেরি ক্লাস। ক্লাস শেষ হয়েছে কিন্তু বই তো শেষ হয় নাই! গল্পের বই।  এই আধাঘন্টা আমাদের উপর দিয়ে যে, কী গেছে কেমনে বোঝাই! হাজার রকম আশংকা। বিপদ! আমি ঠিক বোঝাতে পারছি না। আমার শব্দে কুলায় না!

সন্তানের অমঙ্গল আশংকায় বাবা মায়ের মনের অবস্থা বোঝানো যায় না ভুক্তভোগী ছাড়া। তাই ফেসবুকে যখনি এক মায়ের কান্না, যন্ত্রণা, হারানো সন্তান ফিরে পাওয়ার আকুতি, হাহাকার দেখতাম; নিতে পারতাম না। স্ক্রল করে করে চলে যেতাম। মানুষের কান্না আমি নিতে পারি না। সন্তান হারানো মায়ের কান্না তো আরো নয়। আমার কষ্ট হয়।

পরীক্ষা দিতে মা কলেজে নিয়ে গিয়েছিলেন। পরীক্ষা শেষে মেয়ে বের হচ্ছে না। মেয়ে তো হলেই ঢোকেনি বের হবে কি! পরীক্ষা রেখে কেউ চলে যায়! সবাই যখন এমন বলাবলি করছে, মা কাঁদতে কাঁদতে বলছে, আমার পরীক্ষা লাগবে না। পড়াশোনা লাগবে না। আমি শুধু আমার মেয়েকে চাই। প্লিজ আমার মেয়েকে এনে দিন। আমি শুধু আমার মেয়েকে চাই।

সন্তান হারানোর আশংকায় আধাঘন্টা কাটানো আমি জানি, এই মায়ের দুইমাস কেমন গেছে। মেয়ের জন্য দিনের পর দিন তিনি থানায় গিয়ে বসে থেকেছেন। কান্না করেছেন। হাহাকার করেছেন। সেই কান্না পৃথিবীর সবাইকে ছুঁয়ে গেলেও মেয়েকে যায়নি। মেয়ে বরঞ্চ মায়ের কান্নাকে ব্যঙ্গ করেছে। মানুষের মন গলিয়ে ফেলার জন্য নাকি মায়েরা কান্না করে! 

জানি বয়সকাল কুত্তাকেও ভালো লাগে। (স্যরি ফর মাই ওয়ার্ড)। হরমোনের তোড়ে সব রঙিন মনে হয়। কিন্তু বিশ্বাস কর, এই রঙের খেলা মাত্র দুইদিন। তারপর সব রঙহীন ধূসর জীবন। যে জিহবা ছুড়ি হয়ে মায়ের কলিজা ফালাফালা করতে পারে, সে জিহবা থেকে পার্টনার মুক্ত থাকবে এই আশা করা অবান্তর। কাজেই এবানডেন্ড হতে আর কতক্ষণ। 

এই মেয়ে যেনো কোনোদিন ছোট ছিলো না। ও যেনো কারো বুকের দুধ খায়নি, বিছানা ভিজায়নি। ও যেনো আঠারো হয়েই জন্ম গ্রহণ করেছে। জন্ম হয়েই নিজের জীবনের দায়িত্ব নিজে নিতে শিখেছে! অকৃতজ্ঞ আর কাকে বলে। 

আঠারো বছর যে মা শ্রম দিয়েছে, সেবা দিয়েছে তার এমন অপমান যে মেয়ে করতে পারে, তার কাছে এই সমাজ এই পৃথিবীর শিক্ষা নেওয়া উচিত, সন্তান লালন পালনে আমাদের কী ভুল হচ্ছে। আর কী কী শোধরানো উচিত আমাদের। বাবা মা যেহেতু হয়েছি দায় শুধু আমাদেরই। 

নারীরা ভেবে দেখতে পারেন, এমন সন্তান জন্ম দিবেন কিনা! এমন সন্তান জন্ম দেয়ার আগে জরায়ু বিসর্জন দেবেন কিনা। আমি সাধারণত জাজমেন্টাল হই না। তবে এই মেয়ের কথা বলার ভঙ্গি, ছুরির ফলার মতো লকলকে জিহবা, মায়ের প্রতি অবমাননাকর শব্দচয়ন আমাকে মারাত্মক আহত করেছে। একজন মা হিসাবে আমি রক্তাক্ত হয়েছি, অফেন্সিভ বোধ করেছি। 

মেয়ে,  গোটা পনেরো বছরের হিসাব মাত্র। তুমিও মা হবে। তোমার ভবিষ্যত দেখার অপেক্ষায় রইলাম।  সুকন্যারা ফিরে, সুকন্যারা ফিরবে সুকন্যাদের ফিরতেই হয় একদিন। জাস্ট অপেক্ষা মাত্র। উষ্ঠা লাত্থি তাদের নিত্য সঙ্গী হয়। জীবন তাদের করে না ক্ষমা। এরা শুধু নামেই সুকন্যা হয়। মনে তাদের কু থাকে। 

কন্যারা জেনে রাখো। শুধু কন্যা কেনো বলছি? সংশোধন করলাম। সন্তানরা জেনে রাখো, বাবা মাকে কাঁদিয়ে বেশি দূর যাওয়া যায় না।

লেখক: ডা. ছাবিকুন নাহার
এমবিবিএস (ঢাকা), বিসিএস (স্বাস্থ্য)
এফসিপিএস (অবস.& গাইনী) 
স্পেশাল ট্রেইনড ইন ইনফার্টিলিটি, 
গর্ভবতী, প্রসূতি, স্ত্রী ও গাইনীরোগ বিশেষজ্ঞ এবং সার্জন, 
ঢাকা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল