অর্পণ ধর, রাবি প্রতিনিধি:
জাতীয় শোক দিবস-২০২২ উপলক্ষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ (২৮ আগস্ট) রোববার বিকেল সাড়ে ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (রাবিসাস) এ সভার আয়োজন করে।
আলোচনা সভায় আলোচক অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা বলেন, ১৫ আগস্টের ঘটনা বাঙালি জাতির জন্য যেমন বেদনাদায়ক একই সাথে ধারাবাহিকতা থেকে বিচ্ছিন্নতা শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর মূল্যবোধগুলো স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রেরণা জুগিয়েছে। ১৯৪৮ সাল থেকে বাংলা মানুষের যে চাওয়া ছিল কিন্তু সে চাওয়া আদায়ে তারা হোচট খেতে থাকেন। সেই চাওয়া পূরণে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলনেও তিনি সামনের কাতারে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২১শে ফেব্রুয়ারি তিনি কারাগারে ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে ৬২’র শিক্ষা আন্দোলনেও তিনি একটা বিস্ফোরণ ঘটান। পরবর্তীতে তিনি ৬দফা ঘোষণা করেন। মূলত পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে আমাদের যে বৈষম্য সেটিকে তুলে ধরেন তিনি। ফলে বাংলার মানুষের মাঝে আরেকটা বিস্ফোরণ ঘটে। দেশভাগের সময় পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বেশি ছিল। কিন্তু সংসদে সেই তুলনায় আসন দেওয়া হয়নি। ১৬২ টি আসন ছিল পূর্ব পাকিস্তানে আর ১৩৮টি পশ্চিম পাকিস্তানের। তবে ৭০’র নির্বাচনে ঢালাওভাবে ভোট দিয়ে এ দেশের জনগণ আওয়ামী লীগকে জয়ী করে। এরপর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু পশ্চিমারা তাদের দখল ধরে রাখতে চায় এবং ২৫শে মার্চ রাতে তারা বাংলাদেশের মানুষের উপর আগ্রাসন চালায়।
প্রধান অতিথি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতীয়তাবাদ ধারণ করেছিলেন। তিনি হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে বাঙালি সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিলেন। তার হৃদয়ে যে বাঙালি জাতীয়তাবাদ জাগ্রত হয়েছিল তারই ধারাবাহিকতায় আমরা বাংলাদেশকে পেয়েছি। বঙ্গবন্ধু আমাদের মুক্তির আকাক্সক্ষা সৃষ্টি করেছে। এটা তার অন্যতম কৃতিত্ব। ৭২ পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক পত্রিকা ঋণাত্মক একটা ধারণা পোষণ করেছিলেন। সেই দূর্বলতাকে ধারণ করে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল।
আলোচক অধ্যাপক আবুল কাশেম তার বক্তব্যে বলেন, সমন্বয়বাদী চিন্তা থেকে বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক দর্শন তৈরি করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু বিশ^াস করতেন বাঙ্গালিদের স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের ক্যাপাসিটি আছে। যখন ১৯৪৭ সালে যখন ভারত-পাকিস্তান আলাদা রাষ্ট্র হবে এই বিল পাশ হয় তখন কলকাতার নিখিল বাংলা মুসলিম লীগের কিছু ছাত্র বিজয় উল্লাস করার জন্য আলোচনা করেছিল। সেখানে সকলের মতের বিপরীতে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, যেই পাকিস্তান সৃষ্টি হচ্ছে সেখানে পূর্ব বাংলার জনগণ বেশিদিন থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, ছয় দফা দেবার পর বঙ্গবন্ধু সত্যিকার অর্থে সোসাল ডেমোক্রেটিভলি নত হয়েছেন। ১৯৭১ এ বাংলাদেশ স্বাধীন করেছেন। ১৯৭২ এ তিনি এক অসাধারণ সংবিধান দিয়েছেন। পঁচাত্তরে বাকশাল গঠন করেছেন। একটা অপপ্রচার চলেছিল, সেই অপপ্রচার সফল হয়েছিল বলে এখনও নেতিবাচক ধারায় যারা বিশ্বাস করে তারা বাকশাল, মুজিব, ভারত, বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে অপপ্রচার চালায়।
আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন রাবিসাসের সভাপতি নুরুজ্জামান খান। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নূর আলমের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বিশেষ অতিথি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম, রাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বক্তব্য রাখেন।
সময় জার্নাল/এলআর