বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪

বাসচাপায় তিতুমীর কলেজ ছাত্রীর মৃত্যু, বিচার দাবি সহপাঠীদের

বুধবার, আগস্ট ৩১, ২০২২
বাসচাপায় তিতুমীর কলেজ ছাত্রীর মৃত্যু, বিচার দাবি সহপাঠীদের

মাইদুল ইসলাম:

সবাই ভেবেছিলো আমার এক্সিডেন্ট হয়েছে, সবাই আমাকে কল দিচ্ছিলো, আমিতো শকড হয়ে গেছিলাম এভাবেই সহপাঠীর মৃত্যুর ঘটনায় নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন। পরে তিনি জানতে পারেন একই নামের মার্কেটিং বিভাগের সাদিয়া আফরিন ঊর্মি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছে।

এই শিক্ষার্থী বলেন, আমাদে সড়কে বিশৃঙ্খলা প্রতিনিয়ত ঘটছে আমরা আমাদের চোখের সামনে দেখছি কিন্তু এর কোন সুষ্ঠ বিচার হচ্ছেনা।

রেস্তোরায় আর খাওয়া হলোনা সাদিয়া আফরিন উর্মির। রেস্তোরায় যাওয়ার বদলে রাজধানীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে চলে গেলেন পরলোকে। বড় বোনের বিবাহবার্ষিকী উপলক্ষে রেস্তোরায় খেতে যাচ্ছিলেন কিন্তু ইচ্ছে পূরণ হলো না। মঙ্গলবার বিকেলে বাস চাপায় মোটর সাইকেল আরোহী উর্মি (২২) নামের সরকারি তিতুমীর কলেজের মার্কেটিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থী মৃত্যু বরণ করেন। যাত্রাবাড়ীর জনপথে ঘটে এই দুর্ঘটনা।

ঘটনাস্থলে থাকা লোকজনের থেকে জানা যায়, ধাক্কা দেয়ার পরও বাসটি যদি থেমে যেত তাহলে হয়তো অকালে প্রাণ হারাতে হতোনা ঊর্মিকে। কিন্তু বাসটি পালাতে গিয়ে পিষ্ট করে তাকে এতে ঘটনা স্থলেই মারা যান এই শিক্ষার্থী।

সড়কে আর কত প্রাণ যাবে? এমন দুর্ঘটনায় আর কত শিক্ষার্থী মৃত্যু বরণ করবে? সহপাঠির এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছেনা সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা এর বিচারের দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি ২০১৮ সালের সড়ক আন্দোলনের ৯  দফা দাবির সড়কে বাস্তবায়ন চান তারা।

তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের কর্মী নয়ন সরকার বলেন, গতকাল যখন নিউজে পড়ি 'তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী 'সাদিয়া আফরিন উর্মি' হানিফ উড়ালসড়ক বাসের চাপায় মারা গেছে।' আমি ভীষণভাবে ব্যাথিত হই; থমকে যাই; মনে হচ্ছিল আমার পরিবারের কেউ মারা গেছে। কারণ, তিনি আমার কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। তখনই আবার মনে হয়েছিল এইতো কিছুদিন আগে আমরা আমতলীতে নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের দাবিতে আন্দোলন করার সময়ে আমাদের কলেজের কিছু শিক্ষার্থীরা আমার ওপরেও হামলা করেছিল। তখন যদি তারাও আন্দোলনে সংহতি জানাতো তাহলে এর পজিটিভ প্রভাব পড়তো। হয়তোবা উর্মি'কে সড়কে হত্যার শিকার হতো না। যখন নিরাপদ সড়ক আন্দোলন করি তখন আমরা স্লোগান দেই 'নিরাপদ সড়ক চাই; সড়কে হত্যার বিচার চাই।' অতএব আমরা দেশের সকল নাগরিকদের জন্য নিরাপদ সড়ক চাই এবং সড়কে হত্যার বিচার। 

তিনি বলেন, দেখেন গতকাল হানিফ উড়ালসড়কে তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী উর্মিকে সড়কে হত্যা করা হয়েছে। আগামীকাল যে, আমি নয়ন সরকার সড়কে হত্যার শিকার হবো না, এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ আমাদের সড়ক অনিরাপদ এবং বিশৃঙ্খলভাবে চলছে ফলে প্রতিদিন সড়কে মানুষ হত্যার শিকার হচ্ছে। আমি উর্মি হত্যার বিচার চাই এবং দাবি জানাই উর্মির পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার। 

নয়ন সরকার বলেন, ২০১৮ সালে ছাত্রদের নেতৃত্ব নিরাপদ সড়ক আন্দোলন হয়। তখন ৯ দফা দাবি মেনে নিলেও বর্তমান সময়ে দেখা যাচ্ছে তার একটিও ঠিকমতো বাস্তবায়ন হয়নি। যদি মাঠ পর্যায়ে যথাযথভাবে আইন এবং দাবি বাস্তবায়ন হত; তাহলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরতো ফলে সড়কে মৃত্যুর মিছিল ভারি হতো না। আমাদের সহপাঠী, বন্ধু কিংবা পরিবারের সদস্য কে সড়কে হত্যার শিকার হতে হতো না। নিরাপদ সড়ক আন্দোলন এখনও চলছে আমরা এখনও দাবি জানাই আমাদের ৯ দফা দাবি যথাযথভাবে মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নের এবং আইন প্রয়োগের। আমরা সড়কে পিষ্ট হতে চাই না। আমরা বাংলাদেশের নাগরিকরা নিরাপদ সড়ক চাই।

মৃত্যু ঊর্মির বন্ধু মেজবাউর রাফি বলেন,  আমার ভাগ্য ভালো সেজন্য আজ আমি বাসায় যেতে পারছি কিন্তু যেদিন ভালো হবে না সেদিন হয়তো যেতে পারবোনা, সড়কে প্রাণ হারাবো। আমার বান্ধবী সড়কে প্রাণ হারালো আমি চাই এর সুষ্ঠ বিচার হোক। শুধু মাত্র এ ঘটনার না পরবর্তীতে আর কারও যেন এমন পরিণতি না হয় সেটা আমরা চাই।

তিনি বলেন, সেই ২০১৮ সাল থেকে আমরা সড়ক দুর্ঘটনার বিচার চেয়ে আসছি। এবারও চাই। আমরা প্রশাসনের দিকে চেয়ে আছি। 

রাষ্ট্রিবিজ্ঞান চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমরা আসলে কোন জায়গায় নিরাপদ না রাস্তাঘাটে চলাচলে। আমাদেরই কলেজের এক ছোট বোন মারা গেলো আমি চাইবো এর সুষ্ঠ বিচার হোক, তদন্ত করে বের করা হোক কার দোষ ছিলো। 

তিনি আরও বলেন, বারবার এই ঘটনা ঘটছে তাই সংশ্লিষ্টদের খুঁজে বের করা উচিৎ সড়কে ভুল গুলো কি কি? কেন এই দুর্ঘটনা ঘটছে।

আরেক শিক্ষার্থী বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান যে প্রেক্ষাপট তাতে বাসা থেকে বের হওয়ার পর আবার ফিরতে পারবো কিনা তার নিশ্চয়তা নেই। সব মিলিয়ে সড়কে একটা অনিয়ন্ত্রিত অবস্থা। বাস ড্রাইভাররা বেপরোয়াভাবে বাস চালাচ্ছেন আবার পথচারীরাও ইচ্ছে মত পার হচ্ছেন রাস্তা। তাই এগুলোর সঠিক নিয়ম হওয়া প্রয়োজন। সড়কে  শৃঙ্খলা ফেরাতে পদক্ষেপ নেয়া হোক জরুরিভাবে। 

সড়ক দুর্ঘটনায় শিক্ষার্থীর বিষয়ে তিতুমীর কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোঃ মহিউদ্দিন বলেন, আমাদের একজন শিক্ষার্থীর এভাবে প্রাণ বিসর্জন হবে তা কল্পনা করিনি। কলেজের পক্ষ থেকে তার শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। পাশাপাশি আমাদের আর কোন শিক্ষার্থীর এমন মৃত্যু না ঘটে সে জন্য আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করছি।

মার্কেটিং বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসাইন বলেন, অবশ্যই বেদনাদায়ক, হৃদয়স্পর্শী মৃত্যু। এটা  মেনে নেয়া যায়না। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিনিয়তই এভাবে মৃত্যু হচ্ছে। পরিবহণ মালিকদের উচিৎ সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে গাড়ির চালক নিয়োগ করা। নাহলে এভাবে দুর্ঘটনার শিকার আমরা হতেই থাকবো। তিনি দুর্ঘটনায় মৃত্যু ঊর্মির  পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানান।

এমআই 


Somoy Journal is new coming online based newspaper in Bangladesh. It's growing as a most reading and popular Bangladeshi and Bengali website in the world.

উপদেষ্টা সম্পাদক: প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ

যোগাযোগ:
এহসান টাওয়ার, লেন-১৬/১৭, পূর্বাচল রোড, উত্তর বাড্ডা, ঢাকা-১২১২, বাংলাদেশ
কর্পোরেট অফিস: ২২৯/ক, প্রগতি সরণি, কুড়িল, ঢাকা-১২২৯
ইমেইল: somoyjournal@gmail.com
নিউজরুম ই-মেইল : sjnewsdesk@gmail.com

কপিরাইট স্বত্ব ২০১৯-২০২৪ সময় জার্নাল