অধ্যাপক ডা. মো: হাবিবুল্লাহ তালুকদার:
প্রকৃতির নিয়মে মানুষের বয়স বাড়ে। সরকারী নিয়মে একদিন অবসরে যেতে হয়। বিষয়টা আমি খুব উপভোগ করছি।
পদ-পদবী, বিশেষ করে সরকারী, অনেকের ছেড়ে যেতে মনে কষ্ট লাগে। মনে হয়, আর কিছুদিন থাকতে পারলে দেশ ও জাতিকে আরও কিছু দিয়ে যেতে পারতাম! অনেকে নানা কসরত করে এক্সটেনশন বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য দৌড়ঝাঁপ করেন। কেউ কেউ সফল হন।
ব্যক্তিগতভাবে আমি যে কারও এক্সটেনশনের বিপক্ষে। তিরিশ বছর চাকরিতে থাকার পর কিছু অপূর্ণতা নিশ্চয়ই থাকতে পারে। কিন্তু আরও এক-দুই বছর সরকারি চাকরিতে থাকলেই বিশেষ কিছু করে ফেলবো, এটা আমার কাছে যুক্তিযুক্ত মনে হয় না। জুনিয়র কারও সু্যোগ আটকে রাখবো কেন? বরং পরবর্তীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করে, নেতৃত্ব তৈরী করে যাওয়াতেই সফলতা। যারা এক্সটেনশন নিয়েছেন, একমাত্র অধ্যাপক কাজী দীন মোহাম্মদ স্যার ছাড়া কে তেমন অবদান রেখে যেতে পেরেছেন বাড়তি সময়ে? NINS এর মতো পাবলিক সেক্টরে সেরা টারশিয়ারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য বর্ধিত সময়টুকু কাজে লেগেছে বলা যায়। তারপরও আমি মনে করি একই পদে বর্ধিত চাকরির চেয়ে জাতীয় স্বার্থে কাউকে এমিরিটাস, উপদেষ্টা নিয়োগ অধিকতর সম্মানের।
ক্যান্সার ইপিডেমিওলোজির মত একটি উপেক্ষিত বিষয়ের প্রথম নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক হিসেবে আমার জার্নিটা চ্যালেঞ্জিং ছিলো বরাবরই। কিছু ভূমিকা রাখতে পেরেছি। কিছু অপূর্নতা রয়ে গেছে। পরবর্তীরা সফল হবে এই আশায় থাকবো।
তবে, গড় আয়ু বিবেচনায় সরকারি চাকরিতে অবসরের বয়সসীমা বাড়ানো উচিত সবার জন্য। বিশেষ কাউকে চুক্তিভিত্তিক বৃদ্ধি নয়। কয়েকটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে। আমাদের চিকিৎসগণ সেখানে ৬৫ বছর পর্যন্ত সার্ভিস দিতে পারলে সরকারি চাকরিতে কেন ৬ বছর আগেই বিদায় নিবেন? এটা সরকারের সিদ্ধান্তের বিষয়।
আপাততঃ আমি উপভোগ করতে থাকি। অবসরের আগে অনেক কাগজপত্র গোছাতে হয়। পাশাপাশি তিরিশ বছর ক্যান্সার ইন্সটিটিউটে বিভিন্ন পদে কাজ করা, ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভাবনা, প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতার আলোকে সরকারের কাছে একটা পরিকল্পনা পেশ করে যাবো। অবহেলিত সাবজেক্ট ক্যান্সার ইপিডেমিওলোজি ও প্রিভেন্টিভ অনকোলজির গুরুত্ব সহকর্মী ও চিকিৎসকদের কাছে তুলে ধরার জন্য কাজ করবো।
১০০ দিন পরও ঘরে বসে কাটাবো না। মহান সৃষ্টিকর্তা যদি সদয় হন, সুস্থ ও কর্মক্ষম হিসেবে হায়াত দেন, কিছু অসমাপ্ত কাজ শুরু করবো। পপুলেশন বেজড ক্যান্সার রেজিস্ট্রি ও স্ক্রিনিং। সমাজভিত্তিক ক্যান্সার সেবা। যে কোন প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এলে এবং আমাকে প্রয়োজন মনে করলে পাশে থাকবো। বাংলাদেশের যে কোন প্রান্তে।
লেখক: বিভাগীয় প্রধান, ক্যান্সার ইপিডেমিওলোজি বিভাগ
জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল।
এমআই